চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

৮২ বছরের ইবাদতের চেয়েও বেশি সাওয়াব লাইলাতুল কদরের রাতে

৭ মে, ২০২১ | ১:৫৫ অপরাহ্ণ

রাসূলে করিম (সা:) কোন এক সময় সাহাবায়ে কেরামদের সামনে আগের যুগের বনি ইসরাঈলের আবেদদের ইবাদতের আলোচনা করছিলেন। বনি ইসরাঈলদের মধ্যে এমন অনেক আবেদ ছিলেন যারা শত শত মাস ইবাদতের মধ্যে অতিবাহিত করেছেন। তাদের হায়াত ছিল লম্বা। হাজার বছর হায়াত পেতেন।

হযরত নূহ (আ:) ৯৫০ বছর শুধু উম্মতকে দাওয়াত দিয়েছেন। হায়াত আরো বেশি ছিল। সাহাবায়ে কেরাম ওই আবেদদের কথা শুনে চিন্তিত হয়ে পড়লেন। আর এই উম্মতের হায়াত অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত। নবী করিম (সা:) ফরমান: আমার উম্মতের হায়াত হবে ৬০ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে । খুব কম সংখ্যক লোক এটি অতিক্রম করবে।

নবীজি আরেকদিন আইয়ূব (আ:), যাকারিয়া (আ:) ও ঈসা (আ:) সহ কয়েকজন নবীর আমল শুনালেন সাহাবীদের। সাহাবারা উনাদের ইবাদতের কথা শুনে আফসোস করলেন। এত লম্বা সময় তাঁরা ইবাদত করেছেন। ইয়া রাসূলুল্লাহ ওই তুলনায় আমাদের কিছু নেই। সাহাবাদের চিন্তা দেখে নবীজিও চিন্তামগ্ন হয়ে পড়লেন। তাদের হায়াত কম ইবাদত কিভাবে করবে।

ঠিক সেই মুহূর্তে আল্লাহ নবীজি ও সাহাবাদের এই চিন্তা দূর করার জন্য ফেরেশতাদের নেতা জীবরাঈল (আ:) কে সূরা কদর নিয়ে নবীজির নিকট পাঠান। আল্লাহ তার প্রিয় হাবিবকে বলেন, তাদের জানিয়ে দাও, এমন একটি রাত দিলাম যে রাতটিতে ইবাদত করলে ৮২ বছর ৪ মাস ইবাদত করার চেয়ে বেশি সওয়াব পাবে। যা হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। সেই রাতের নাম লাইলাতুল কদর। কদরের রাত্রিতে আল্লাহ কোরআন মজিদ নাজিল করার কথা বলেন।

আল কোরআনের ৯৭ তম সূরা আল কদর। এর আয়াত সংখ্যা ৫ টি এবং এর রুকুর সংখ্যা ১। আল কদর সূরাটি মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে। কদরের অর্থ মাহাত্ম্য ও সম্মান। এই রাত্রিকে লায়লাতুল-কদর বলার কারণ এই যে আমল না করার কারণে এর পূর্বে যার কোন সম্মান ও মূল্য মহিমান্বিত থাকে না, সে এ রাত্রিতে তওবা-এস্তেগফার ও এবাদতের মাধ্যমে সম্মানিতও হয়ে যায়।
বাংলা উচ্চারণঃ “ইন্না আনযালনাহু ফী লাইলাতিল কাদরি, ওয়ামা আদরাকা মা লাইলাতুল কাদরি, লাইলাতুল কাদরি খাইরুম মিন আলফি শাহর, তানাযযালুল মালাইকাতু ওয়াররূহ, ফিহা বিইযনি রাব্বিহিম মিন কুল্লি আমরিন, সালামুন হিয়া হাত্তা মাতলাইল ফাজর”।
অর্থঃ “নিশ্চয়ই আমি তা (কোরআন) অবতীর্ণ করেছি কদরের রাতে। আর কদরের রাত সম্বন্ধে তুমি কি জানো? কদরের রাত হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। সে রাতে ফেরেশতারা ও রুহ অবতীর্ণ হয় প্রত্যেক কাজে তাদের প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে। শান্তিই শান্তি, বিরাজ করে উষার আবির্ভাব পর্যন্ত”।

তবে এই রাত অনির্দিষ্ট। নির্দিষ্ট করে বলে দেননি। ২৬ রোজার দিবাগত রাত ২৭ রোজা কদর নির্দিষ্ট করে বলে দেননি। কি বলছেন? হযরত আয়েশা (রা:) থেকে বর্ণিত হাদিস। তোমরা তালাশ কর । অনুসন্ধান কর।

আরেক হাদীসে আছে: নবীজি একদিন মসজিদ থেকে বের হলেন। সাহাবীদের নবীজি কোন রাতে কদর তা জানিয়ে দেয়ার কথা বলেন। নিয়ত ছিল নির্দিষ্ট কর কদরের রাত বলবেন। কিন্তু যখন তিনি বের হলেন, দেখলেন দুইজন মুসলিম পরস্পর ঝগড়ায় লিপ্ত। নবীজির নজর পড়ল তাদের ঝগড়ার উপর।

আল্লাহর প্রিয় হাবিব বলেন, দুইজন মুসলমানের ঝগড়ার কারণে আমাকে শবে কদরের নির্দিষ্ট সময়টা ভুলিয়ে দিয়েছেন আল্লাহ। নবীজি সাহাবীদের বলেন, উঠিয়ে নেয়ার মধ্যে তোমাদের জন্য মঙ্গল নিহিত রয়েছে। নবীজি বলেন, তোমরা কদরের রাত্রিকে তালাশ কর ২৫, ২৭ ও ২৯ রমজানের রাত্রে।

ঝগড়া ঘৃণিত কাজ। কোরআনে আল্লাহ ফরমান: ক্ষুর যেমন মাথার চুলকে পরিস্কার করে ফেলে। ঠিক তেমনি ঝগড়া-ফ্যাসাদ মানুষের আমলকে ওই রকম মুছে ফেলে।
আয়েশা (রা:) নবীজিকে বলেন, আমি যদি জানতে পারি এই রাত কদরের রাত। কি আমল করব? নবীজি বললেন, এই দোয়া করবে।
“ আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আ’ফুউন তুহিব্বুল আফওয়া ফা’ফু আন্নি”।

“হে আল্লাহ নিশ্চয়ই তুমি ক্ষমাশীল। ক্ষমাকে তুমি ভালবাস। আমাকেও ক্ষমা কর”। এই দোয়া বেশি বেশি করবে।
আবু হুরায়রা (রা:) বর্ণিত হাদিস: যে ব্যক্তি কদরের রাতে ইবাদত বন্দেগী করবে, জাগ্রত থাকবে, নামাজ পড়বে, কোরআন পড়বে, দরুদসহ বিভিন্ন ইবাদতের মধ্যে থাকবে আল্লাহ ওই ব্যক্তির ইবাদতের কারণে পিছনের সব গুণাহ মাফ করবেন। এই রাত জাহান্নাম থেকে মুক্তির রাত।

শবে-কদরে জিবরাঈল ফেরেশতাদের বিরাট এক দল নিয়ে পৃথিবীতে অবতরণ করেন এবং যত নারী-পুরুষ নামায অথবা যিকরে মশগুল থাকে, তাদের জন্যে রহমতের দোয়া করেন। ফেরেশতাগণ শবে কদরে সারা বছরের অবধারিত ঘটনাবলী নিয়ে পৃথিবীতে অবতরণ করে।

শবেকদরের রাত নিয়ে ব্যাপক মতবিরোধ রয়েছে। তবে আলেম সমাজের সংখ্যাগুরু অংশের মতে রমযানের শেষ দশ তারিখের কোনো একটি বেজোড় রাত হচ্ছে এই কদরের রাত। আবার তাদের মধ্যেও বেশীরভাগ লোকের মত হচ্ছে সেটি সাতাশ তারিখের রাত। হযরত আবু হুরাইরা বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ্‌ (সা.) লাইলাতুল কদর সম্পর্কে বলেনঃ সেটি সাতাশের বা উনত্রিশের রাত।
লাইলাতুল কদর রাতের শ্রেষ্ঠত্ব, মাহাত্ম্য ও মর্যাদার সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো এ গৌরবময় রজনীতে মানবজাতির পথপ্রদর্শক ও মুক্তির সনদ মহাপবিত্র ঐশীগ্রন্থ ‘আল-কোরআন’ অবতীর্ণ হয়েছে। লাইলাতুল কদরের গুরুত্ব ও ফজিলত পবিত্র কোরআন ও সহীহ-হাদীস দ্বারা প্রতিষ্ঠিত।
বনী-ইসরাঈলের জনৈক ইবাদতকারী ব্যক্তি সমস্ত রাত্রি ইবাদতে মশগুল থাকত ও সকাল হতেই জিহাদের জন্যে বের হয়ে যেত এবং সারাদিন জিহাদে লিপ্ত থাকত। সে এক হাজার মাস এভাবে কাটিয়ে দেয়। এর পরিপ্রেক্ষিতেই আল্লাহ্‌ তাআলা সূরা-কদর নাযিল করে এ উম্মতের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করেছেন।

এ থেকে আরও প্রতীয়মান হয় যে, শবে-কদর উম্মতে মুহাম্মদিরই বৈশিষ্ট্য আল্লাহ আমাদের কদরের রাত তালাশ করার তৌফিক দান করুন। আমিন।
পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট