চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

কাকে বদলি, শওকতকে নাকি মানবিকতাকে?

এম মুসা খান

২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ | ৬:৪৭ অপরাহ্ণ

সওকত হোসেন। মানবিক পুলিশ ইউনিট, সিএমপির সদস্য ছিলেন (আমার সাথে পরিচয় নেই)। সম্প্রতি এক মিলাদে ১০ মিনিটের ‘মানবিক বক্তৃতার’ কারণে তাকে হঠাৎ বদলি করা হলো।

তাঁর বক্তৃতার সারসংক্ষেপ ছিল- ‘মানুষের সেবা না করে লোক দেখানো ধর্ম-কর্ম কোন কাজে আসবে না, আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না’। তিনি সর্বাগ্রে ‘অসহায়-দরিদ্র মানুষের সেবা করার আহবান জানিয়েছেন।’ তিনি বলেছিলেন- বক্তার মুখ না দেখে বক্তার কথা/পরামর্শ গুলো কাজে লাগান।’ বাস, আমাদের কারও-কারও মনে ভীষণ লেগে গেলো, আমরা ‘গোস্বা’ করলাম, ফলাফল- ‘মানবিক পুলিশ ইউনিট থেকে বদলি’। এতে কার ক্ষতি হলো বা কাকে শাস্তি দেয়া হলো? শওকত সাহেবকে? নাকি অসহায়-দরিদ্র মানুষদের, যাদের তিনি সাহায্য-সহযোগিতা করতেন দ্বিধাহীনভাবে। যদিও বলা হচ্ছে- নিয়মিত বদলি। কিন্তু ভালো কাজ করা সত্ত্বেও কেন বদলি করা হবে!

এই ছেলেটির কর্মকাণ্ডকে যদি ‘অতিমানবীয়’ বলা হয়, তাহলে অত্যুক্তি হবে না (ছোট পদে চাকরি করে যে বড় কাজ করা যায়, এটা তাঁর উদাহরণ)। যেখানেই দারিদ্র, অসহায় মানুষ রোগে কষ্ট পেতেন, সেখানেই শওকত সাহেব ও তাঁর টিম এগিয়ে যেতেন সহায়তার জন্য। গরীব রোগীদের চিকিৎসা সহায়তা দেয়া, রাস্তা থেকে তুলে এনে হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে দেয়া, প্রতারক চিহ্নিত করে আইনের হাতে তুলে দেয়া, ফার্মেসিতে ওষুধের মূল্য বেশি নিলে বা মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রি করলে-প্রতিবাদ করা। মসজিদ নির্মাণে সহায়তা করা, যুবকদের ভাল কাজে উৎসাহিত করা-ইত্যাদি ভাল-সৎ কাজের সাথে শওকত সাহেব জড়িত ছিলেন।

শওকত সাহেব সেদিন খারাপ কিছু বলেন নি, যা তাঁর বক্তৃতার ভিডিও শুনলে বুঝা যাবে। হ্যাঁ, তাঁর উপস্থাপনা হয়তো একটু ভিন্নরকম ছিল। কিন্তু একশ্রেণির মওলানার মত তিনি তো কাউকে ‘কাফের’ বলেননি বা কোন অশ্লীল শব্দ উচ্চারণ করেন নি।

আমরা আশা করবো, পুলিশের সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ (Inspector General of Police), স্থানীয় কর্তৃপক্ষ (Police Commissioner, CMP), Shawkat Hossain সাহেবের ১০ মিনিটের মানবিক বক্তৃতার ভুল ব্যাখ্যা না শুনে, দীর্ঘদিনের ভালো কাজের মূল্যায়ন করে, তাঁকে ‘পদোন্নতি’ দিয়ে ‘মানবিক পুলিশ ইউনিটে’ ফিরিয়ে আনবেন।

আমাদের মনে রাখা উচিত যে, এই সমাজের অধিকাংশ মানুষ এখন যেনতেনভাবে ‘সম্পদশালী হতে চাচ্ছে’, ফলে ‘মানবিকতা’ নামক শব্দটি ধীরেধীরে নির্বাসনে চলে যাচ্ছে। শওকতের মত ছেলেদের সম্মান দেখিয়ে, পদোন্নতি দিয়ে পুরস্কৃত করে আমরা যেনো ‘মানবিকতাকে’ উর্ধে তুলে ধরি এবং জয়যুক্ত করি।

লেখক: এম মুসা খান, কলামিস্ট

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট