চট্টগ্রাম বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

করোনায় হারিয়েছি অনেক স্বজনকে, আর হারাতে চাই না

মাহবুব কবির মিলন

৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ | ৬:৪৪ অপরাহ্ণ

আমার শ্বশুরকে বাঁচানোর জন্য অনেক ব্যাগ রক্ত দিতে হয়েছিল। অফিস শেষে দীর্ঘ যানজট ঠেলে ক্লান্ত শরীরে রাতে বাসায় ফিরে রক্ত দিতে হবে শুনে সাথে সাথে হাসপাতালের উদ্দেশে বের হয়ে এসেছিলেন ব্লাড ডোনার। ক্রস ম্যাচ শেষে রক্ত দিয়ে মধ্যরাতে হাসপাতাল ত্যাগ করেছেন। অনেক অনুনয় করেও গাড়ি ভাড়া দিতে পারিনি, খাননি এক কাপ চাও।

শেষ রাতে ব্লাড দিয়ে গেছেন এমন ডোনারও গাড়ি ভাড়া নেননি বা কিছু খাননি। এমনকি অনেককেই গাড়িতে লিফট দিতে চাইলেও তা নেননি। শুধু দোয়া ছাড়া এঁদের কাউকেই কিছু দিতে পারিনি।

হতবাক হয়ে গিয়েছি অজানা এই রক্ত যোদ্ধাদের পবিত্র এবং কল্যাণকর এক মানবিক উপাখ্যান দেখে। আল্লাহ সকল ব্লাড ডোনারদের পরিবারসহ রহম, দয়া এবং মঙ্গল করুন। সাথে দোয়া করছি যারা এঁদের খুঁজে পেতে আন্তরিক সাহায্য করেছেন।

শ্বশুর এর বয়স বেশি হওয়ায় (৮০) তাঁকে বাসায় প্রায় বন্দী করে রাখা হয়েছিল করোনার কারণে। কেউ ঢুকতে এবং বের হতে পারত না। শ্বাশুড়ি মারা গিয়েছেন প্রায় চার বছর। অনেক চিকিৎসা, চেষ্টা এবং দোয়ার পরেও কোভিড আক্রান্ত শ্বশুর না ফেরার দেশে চলে গেলেন গত ৩১ ডিসেম্বর, সন্ধ্যায়। এত সতর্কতার পরেও কিভাবে তিনি কোভিড আক্রান্ত হয়েছিলেন তা আজ পর্যন্ত বুঝলাম না। আমার স্ত্রী এখন এতিম।

না, আমার পারিবারিক কাহিনী বলার জন্য আজ লিখছি না। লিখছি বড় এক দায়িত্ববোধ থেকে।

আমি নিশ্চিত জানি, কোভিড ভ্যাকসিন দেয়ার কারণে মৃত্যুর সম্ভাবনা একেবারে নেই বললেই চলে (আগে থেকে কিছু অসুস্থতা ছাড়া), কিন্তু ভ্যাকসিন না দিলে সে সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যাবে। তাহলে কোনটি বেটার অপশন? জগতের প্রায় সব মহামারী নির্মূল হয়ে গেছে ভ্যাকসিন/টিকার মাধ্যমে। কাজেই বর্তমান অভিশাপ থেকে মুক্তি পেতে হলে আমাদের এই ভ্যাকসিনের পথে এগোনো ছাড়া কোন বিকল্প নেই।

আজ যখন ভ্যাকসিন নিতে যাব, গিন্নি কিছুতেই পিছু ছাড়বে না। কি জানি আমার যদি কিছু হয়, হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়ি। বাচ্চারাও ভয়ে অস্থির। বারবার বলছে, বাবা ভ্যাকসিন দেয়ার সময় বেশি করে আয়াতুল কুরসি পড়তে থাকবে।

আল্লাহর রহমতে কিছুই হয়নি। এখনো সম্পূর্ণ সুস্থ আছি। লাভের লাভ হয়েছে, আমাকে দেয়ার ফাঁকে তিনিও ভ্যাকসিন নিয়ে ফেলেছেন। ওখানে অনেক বয়স্ক লোক দেখলাম ভ্যাকসিন নিচ্ছেন। এক চাচা খুব আফসোস করে বললেন, অনেক বুঝিয়ে শুনিয়ে আমার ড্রাইভারকে নিয়ে এই রুমে আসলাম ভ্যাকসিন দেয়ার জন্য। পিছন ফিরে দেখি সে নেই, হাওয়া হয়ে গিয়েছে। এই অমূলক ভয় অনেককেই জীবন সংহারের দিকে নিয়ে যাবে, বললেন তিনি।

খুব আফসোস লাগছিল, এই ভ্যাকসিন আর কয়েকমাস আগে পাওয়া গেলে, আমার শ্বশুরকে তা দিতে পারতাম। হয়ত হারাতে হত না তাঁকে। যদিও সব কিছুর মালিক একমাত্র আল্লাহপাক। আমাদের চেষ্টা মাত্র।
ভ্যাকসিন দিয়ে দু’জনে বাসায় ফিরে আসলাম। বাচ্চাদের ভয় তখনো কাটেনি। আমাদের সম্পূর্ণ স্বাভাবিক অবস্থা দেখে বেশ কিছুক্ষণ পর বাচ্চারা এসে বলল, “বাবা আমাদের কবে দেবে?”

করোনায় আমরা হারিয়েছি অনেক স্বজনকে, অনেক মূল্যবান প্রাণ। আর হারাতে চাই না। প্লিজ সময় থাকতেই আপনারা সচেতন হোন সবাই। মেজর কোন অসুবিধা থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন, আর তা নাহলে নির্ভয়ে ভ্যাকসিন নিয়ে নিন।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট