চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

যে সব কারণে রোজা মাকরূহ ও ত্রুটিপূর্ণ হয়

রায়হান আজাদ

২০ মে, ২০১৯ | ১:৪৫ পূর্বাহ্ণ

যে সমস্ত কাজ করলে সিয়াম মাকরূহ হয়ে যায় তা হলো ১. অজুর সময় গড়গড়া করে কুলি করা, জোড় দিয়ে নাকে পানি টানা। এতে গলা বা নাক দিয়ে ভিতরে পানি প্রবেশ করার সম্ভাবনা থেকে যায় ২. বিনা প্রয়োজনে খাদ্যের স্বাদ দেখা। তবে প্রয়োজন হলে দেখতে পারে ৩. থুথু, কফ মুখে জমিয়ে গিলে ফেলা। অল্প অল্প থুুথু গিলে ফেললে কোন অসুবিধা নেই। ৪. যৌন অনুভূতি নিয়ে স্ত্রীকে চুম্বন ও আলিঙ্গন করা, বার বার তার দিকে তাকানো, বার বার সহবাসের কল্পনা করা। কারণ এসব কার্যক্রমে বীর্যপাত ঘটা বা সহবাসে লিপ্ত হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায় ৫. বিনা প্রয়োজনে কোন মহিলা স্বীয় বাচ্চাকে রোজা অবস্থায় খাদ্য চিবিয়ে দেয়া। উল্লে­খ্য যে, প্রয়োজনবশত: চিবিয়ে দিলে তা মাকরূহ হবে না বরং চিবিয়ে দেয়ার সময় সতর্ক থাকতে হবে যাতে পেটে খাদ্যের কিছু অংশ চলে না যায়।
এখানে রোজাদারের কতিপয় ভুল-ত্রুটি আলোচিত হলো যা পরিহার করে চলা আমাদের সবারই কর্তব্য। ফরজ রোজার জন্য রাতে বা ফজরের পূর্বে নিয়ত না করা, যদিও úূর্ণ রমজান মাসের জন্য প্রথমে একবার নিয়ত করাই যথেষ্ট। ২. ফজরের আযানের সময় অথবা আযানের পরে পানাহার করা। যদিও কোন কোন মুয়ায্যিন কখনও সতর্কতামূলক ভাবে কিছু সময় পূর্বেই আযান দিয়ে থাকেন। ৩. ফজরের এক বা দু’ঘন্টা পূর্বেই সাহরি খাওয়া। অথচ ইফতার দ্রুত এবং সাহরি দেরিতে করার বিষয়ে হাদীসে উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে। ৪. এ মাসে অধিকাংশ মানুষ খাদ্য ও পানীয় অপচয় এবং বাড়াবাড়ি করে থাকে, অথচ রোজাকে ক্ষুধা অনুভব করার উদ্দেশ্যে শরীয়ত সম্মত করা হয়েছে, এ অপব্যয় সে মহান উদ্দেশ্যের পরিপন্থী। ৫. জামাআতের সাথে নামাজ আদায়ের বিষয়ে অবহেলা ও শিথিলতা, যেমন যোহর ও আসরের নামাজে অলসতা, ঘুমের ওজর বা কৈফিয়তে জামাআতে অনুপস্থিত থাকা অথবা অযথা কোন মূল্যহীন কাজে নিজেকে ব্যস্ত রেখে জামাআতে হাজির না হওয়া। ৬. রোজার দিন ও রাতে জিহ্বাকে মিথ্যা বলা, প্রতারণা, গীবত, পরনিন্দা এবং অপবাদ ও চোগলখুরী থেকে হেফাজত না করা। ৭. মূল্যবান সময়কে খেলাধুলায়, আমোদ-প্রমোদে, তামাশা ও কৌতুকে এবং ফিল্ম , চলচ্চিত্র এবং বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান দেখে অপচয় করা এবং তর্ক ও বাদানুবাদে ও রাস্তায় রাস্তায় অনর্থক ঘুরে বেড়িয়ে সময়ের কদর না করা। ৮. রমজান মাসে বিভিন্ন আমলের গুরুত্ব নিয়ে অবহেলা করা, যেমন দু‘আ, যিক্র-আয্কার এবং কুরআন পাঠ ও সুন্নাতে মুয়াক্কাদা নামাজে শৈথিল্য ও অবহেলা প্রদর্শন করা। ৯. জামাআতের সাথে তারাবীহ’র নামাজ ত্যাগ করা অথচ এ বিষয়ে হাদীসে যথেষ্ট উৎসাহ দেয়া হয়েছে যে, ‘যে ব্যক্তি ইমামের সাথে শেষ পর্যন্ত কিয়ামুল লাইলের (তারাবীহ) নামাজ আদায় করে তার জন্য সমস্ত রাতের ইবাদত সম্পাদন করার সওয়াব লিখে দেয়া হয় ’। লক্ষ্যণীয় যে, রমজান মাসের প্রথমে নামাজী ও কুরআন তেলাওয়াতকারীর সংখ্যা অনেক থাকে। অতঃপর মাসের শেষ দিকে আলস্য ও ঈদের কেনাকাটায় ব্যস্ততার কারণে অনেকে ইবাদতে ঢিলা দেয়। অথচ রমজানের প্রথম দশক থেকে শেষ দশকের শ্রেষ্ঠত্ব অত্যধিক বলে কুরআন-হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে । ১১. রমজানের শেষ দশকের কিয়ামুল লাইল ছেড়ে দেয়া, যা শেষ দশকের বিশেষ বৈশিষ্ট। ‘রমজানের শেষ দশক উপস্থিত হলে নবী কারীম নিজে রাত্রি জাগতেন এবং পরিবারের সদস্যদেরকেও রাত্রি জাগাতেন এবং নিজের লুঙ্গি শক্ত করে বেঁধে নতুনভাবে ইবাদতে আত্মনিয়োগ করতেন’। ১২. রোযার মাসে রাত্রি জাগরণ না করা। ফজরের নামাজ না পড়ে ঘুমিয়ে যাওয়া। কেউ কেউ সকালের সূর্য কিরণ ছড়ানোর পর ছাড়া নামাজ পড়েন না। এটা ফরজ নামাজে অবহেলা ও শৈথিল্যের শামিল। ১৩. ধন-সম্পদে কার্পণ্য করা এবং রমজান মাসে অভাবী ও দরিদ্রদের সংখ্যা অধিক থাকার পরেও তাদেরকে দান-খয়রাত করা থেকে বিরত থাকা। অথচ এই সমস্ত বরকতময় সময়ে দান-খয়রাত করার সওয়াব বহুগুণ থাকা সত্ত্বেও তারা সে সুযোগ গ্রহণ করেন না। ১৪. অনেকে মালের যাকাত আদায় করার ব্যাপারে সম্পূর্ণভাবে অমনোযোগী ও বেখেয়াল থাকে অথচ যাকাত হলো নামায ও রোযার সমমর্যাদা সম্পন্ন ফরজ। যদিও যাকাত আদায় করা শুধু রমজানের সাথেই নির্দিষ্ট নয়। ১৫। রোযা থাকাবস্থায় দু’আ করা থেকে গাফিল বা অন্যমনস্ক হওয়া। বিশেষ করে, খাদ্য ও পানীয়ের মাধ্যমে ইফতার করার সময়। অথচ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে,‘রোজাদারের ইফতারের সময়ের দু‘আ ফেরত দেয়া হয় না’।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট