চট্টগ্রাম বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

রোজা কাদের উপর ফরজ আর কাদের উপর ফরজ নয়

রায়হান আজাদ

১৮ মে, ২০১৯ | ২:১৮ পূর্বাহ্ণ

ইসলামী শরীয়তে যাদের উপর রোজা ফরজ করা হয়েছে তারা হলেন প্রাপ্ত বয়স্ক মুসলিম, সুস্থ বিবেক-বুদ্ধিসম্পন্ন ও মুকীম তথা নিজ বাসস্থানে অবস্থানকারী। আর দশ প্রকার মানুষের উপর রোজা পালন করা ফরজ নয়, তারা হলেন,
১.অমুসলিম: ইসলাম গ্রহণের পূর্বে কাফিরের উপর রোজা ফরজ নয় এবং তার জন্য ইসলাম গ্রহণের পর কাজা করাও জরুরি নয়। ২. অপ্রাপ্ত বয়স : অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছেলে-মেয়ের উপর রোজা ফরজ নয় কিন্তু অভ্যাস গড়ার জন্য তাদেরকে রোজা পালনের আদেশ করা যাবে। ৩. পাগল : প্রাপ্ত বয়স্ক পাগলের উপর রোজা ফরজ নয় এমনকি তার জন্য রোজা করিয়ে নেয়ারও প্রয়োজন নেই, অনুরূপ বিধান যার জ্ঞান লোপ পেয়েছে এবং যে অতি মাত্রায় মতিভ্রম হওয়ার কারণে ভাল-মন্দ তারতম্য করতে পারে না। ৪. অশীতিপর বৃদ্ধ: বার্ধক্যে উপনীত এমন লোক যে ভাল-মন্দ পার্থক্য করতে পারে না, অতিমাত্রায় বার্ধক্যের কারণে ক্ষুধার জ্বালা সহ্য করতে পারে না।
৫. চির রোগী ও অক্ষম: বিশেষত এমন বৃদ্ধ ব্যক্তি যে রোজা রাখতে শারীরিকভাবে সক্ষম নয়; অসুস্থতার কারণে কিছুক্ষণ পর পর ওষুধ গ্রহণ জরুরি, অন্যথায় অসুস্থতা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়। এমন রোগী যার রোগমুক্তির সম্ভাবনা নেই। এরূপ ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে ফিদইয়া দেয়া ওয়াজিব।
৬. মুসাফির : মুসাফিরের জন্য সফরে রোজা রাখা বা না রাখার এখতিয়ার আছে তবে যদি সফরে রোজা না রাখে তাহলে পরে এসব রোজা কাজা করে নেবে। উল্লে­খ্য, মুসাফির ইচ্ছা করলে যতদিন সফরে থাকবে (উক্ত সফর স্থায়ী বা স্বল্পকালীন হোক) ততদিন রোজা ছাড়তে পারবে। ৭. রোগাক্রান্ত ব্যক্তি: অস্থায়ীভাবে রোগাক্রান্ত ব্যক্তির পক্ষে রোজা রাখা কঠিন হলে সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত রোজা রাখবে না, আর রমজানেই সুস্থ হয়ে গেলে অবশিষ্ট রোজা তাকে অবশ্যই রাখতে হবে এবং যেসব রমজানের রোজা রাখতে সক্ষম হয়নি তা সুস্থ হওয়ার পর গাইরে রমজানে কাজা করে নিবে। ৮. ঋতুবতী মহিলা : হায়েজ তথা মাসিক ঋতুস্রাব অথবা নিফাস তথা সন্তান প্রসব জনিত স্রাব হলে উক্ত অবস্থায় রোজা না রেখে স্রাব চলে যাওয়ার পর কাজা করে নেবে।
৯. গর্ভবতী ও দুগ্ধদানকারী নারী : গর্ভধারণ বা দুগ্ধপান করানোর কারণে যদি তাদের প্রতি রোজা রাখা কঠিন হয় বা স্বীয় সন্তানের অনিষ্টের আশঙ্কা থাকে তবে রোজা না রেখে যখন আশঙ্কামুক্ত হবে তখন সুবিধামত সময়ে কাজা করে নিবে। ১০. দুর্ঘটনা কবলিত লোককে রক্ষাকারী নিরুপায় ব্যক্তি: এমন ব্যক্তি যে রোজা ছেড়ে দিতে বাধ্য, যেমন কোন ছোট বাচ্চা পানিতে ডুবে গেছে অথবা আগুনে পুড়ে যাচ্ছে তাকে মুক্ত করার জন্য রোজা ছেড়ে দিতে হলে ছেড়ে দেবে কিন্তু পরবর্তীতে তাকে কাজা করে নিতে হবে।
বিনা উজরে সিয়াম ভঙ্গ করলে তার জন্য ভীষণ শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে।
এ বিষয়ে রাসূলে কারীম ছাল্ল­াল্ল­াহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম‘র কয়েকটি হাদীস রয়েছে, ‘আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্ল­াহ (স.) ইরশাদ করেন, ‘একদিন আমি স্বপ্নে দেখলাম যে, একটি সম্প্রদায় উল্টোভাবে ঝুলছে। তাদের মুখ ফেটে গেছে আর তা থেকে রক্ত ঝরছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, এরা কারা? বলা হল, এরা ঐসব ব্যক্তি যারা বিনা উজরে রমজান মাসের সিয়াম ভঙ্গ করেছিল। (সহীহ ইবনে খুযাইমাহ) ‘যে ব্যক্তি রমাজানের এ মুবারক মাসেও আল্লাহকে রাজী করাতে পারল না, সে বড়ই দুর্ভাগা’। (ইবনে হিব্বান) ‘যে ব্যক্তি শরীয়তী উজর ছাড়া এ রমজান মাসের একটি রোজাও ছেড়ে দেবে, সে যদি এর বদলে সারা জীবনও সিয়াম পালন করে তবু তার পাপের খেসারত হবে না’।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট