চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

মাহে রমজান ইসলামী জ্ঞানার্জনের সুবর্ণ সুযোগ

রায়হান আজাদ

১৭ মে, ২০১৯ | ১:২৮ পূর্বাহ্ণ

রমজান ইসলামী জ্ঞানার্জনের মাস। এ মাসে দিনের বেলায় সাধারণত ব্যস্ততা কম থাকে। চাকুরির সময়সূচিতেও পরিবর্তন এনে এক ঘন্টা কমিয়ে দেয়া হয়। সবাই আমলে সালেহ তথা ভাল কাজে একটু বেশি মনোযোগ দিতে চায়। যে কেউ নিজেকে মুসলিম হিসেবে দাবি করলে কিংবা মুসলমানি রসম-রেওয়াজ মত জীবন ধারণে আগ্রহী হলে তার জন্য ইসলামী জ্ঞানার্জন ফরজ। যে বিষয় জানা থাকে না, সে বিষয়ে অস্পষ্ট ধারণার উপর আমল করা ঠিক নয়। কুরআনে কারীমের প্রথম আয়াত: ‘পড়–ন, আপনার প্রতিপালকের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন মানুষকে জমাট রক্ত হতে। পড়–ন, আপনার প্রতিপালক মহা দয়ালু। যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন। শিক্ষা দিয়েছেন মানুষকে যা সে জানতো না’। (সুরা আল আলাক ঃ ১-০৫)
হাদীসে ইসলামী জ্ঞানার্জনের বহু গুরুত্ব ও ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। আল কুরআন ভাবার্থ ও শানে নুযুলসহ অধ্যয়ন করা শ্রেষ্ঠ ইসলামী জ্ঞানার্জন। আল কুরআনের ভাষা আরবি হওয়ায় কুরআনের কোন আয়াত তেলাওয়াত করলেই আয়াতের অর্থ আমরা সহেজ বুঝতে পারি না। তাই বাংলা ভাষায় প্রকাশিত আল কুরআনের অসংখ্য অনুবাদগ্রন্থ অধ্যয়ন করে জ্ঞান আহরণ করতে পারি।
জ্ঞানার্জনের গুরুত্ব সম্পর্কে হাদীস শরীফে এসেছে, ‘প্রত্যেক মুসলমান নরনারীর উপর কুরআন-সুন্নাহর জ্ঞানার্জন ফরজ’। যাদের কুরআন তিলাওয়াত ছহীহ নয়, তারা এ মাসকে কাজে লাগিয়ে তিলাওয়াত ছহীহ করে নিতে পারেন। আর যারা কুরআন-হাদীসের গুরুত্বপূর্ণ অংশ মুখস্থ করার মনস্থির করেছেন তারা একটি রুটিন করে তা প্রতিদিন আবৃত্তি করতে পারেন। দেখা যায়, অধিকাংশ মুসলিম ভাইয়েরা শুদ্ধভাবে কুরআন তিলাওয়াত করতে পারেন না। অশুদ্ধভাবে কুরআন তিলাওয়াত করা মারাত্মক গুনাহ। এতে অর্থ বিকৃত হয়, নামাজসহ কোন ইবাদতই আল্ল­­াহর দরবারে গ্রহণযোগ্য হয় না। কুরআনে এসেছে, ‘আর কুরআন তিলাওয়াত কর তারতিল (শুদ্ধ,স্পষ্ট ও সুবিন্যস্ততা) সহকারে’। (সুরা মুয্যাম্মিল-০৪)
কুরআন ও হাদীসে জ্ঞানার্জনের যে গুরুত্ব ও জ্ঞানীর মর্যাদা বর্ণিত হয়েছে তা প্রথমত নৈতিক শিক্ষার প্রতি তাকিদ দানের জন্যই। পার্থিব জ্ঞান শিক্ষা করাও মুসলমানদের উপর ফরজ। বর্তমান বিশ্বে জ্ঞান-বিজ্ঞানে পিছিয়ে পড়ার কারণেই মুসলিম উম্মাহর এ করুণ দুর্দশা। ইসলাম যেখানে জ্ঞানার্জন ও জ্ঞান শিক্ষা দানে বাধ্যবাধকতা সৃষ্টি করেছে সেক্ষেত্রে মুসলমানরা চরম গাফিলতির পরিচয় দিচ্ছে। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ইহকালীন শান্তি ও পরকালীন মুক্তির জন্য কুরআন সুন্নাহকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করতে বলেছেন। অথচ বর্তমান মুসলিম সমাজ কুরআন-সুন্নাহর শিক্ষা ভুলে গিয়ে অন্ধকার পথে হাতড়াচ্ছে। বর্তমানে মুসলিম বিশ্ব জ্ঞান-বিজ্ঞান থেকে দূরে সরে পড়ায় এ চরম বিপর্যস্ত পরিস্থিতির মুকাবিলা করছে। যতদিন পর্যন্ত তারা জ্ঞান- গবেষণার ব্যাপারে সচেতন না হয় ততদিন এ লেজে-গোবরে অবস্থার পরিবর্তন হবে না। প্রথিতযশা ইসলামী চিন্তাবিদ ও যুগশ্রেষ্ঠ আলিমে দ্বীন আল্লামা সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভী (র.) তাই যথার্থই বলেছেন, ‘যদি মুসলিম বিশ্বের খায়েশ থাকে, সে নতুনভাবে আবার গোড়া থেকে তার জীবন শুরু করবে এবং অন্যদের গোলামী থেকে মুক্তি লাভ করবে, যদি সে বিশ্বের নেতৃত্ব লাভ করতে চায় তাহলে কেবল শিক্ষার ক্ষেত্রে স্বশাসিত ও স্বায়ত্বশাসিত হলে চলবে না, তাকে জ্ঞান-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রেও নেতৃত্ব নিতে হবে এবং এটা খুবই জরুরি আর তা খুব সহজও নয়। এ বিষয়টি নিয়ে গভীরভাবে ভেবে দেখার ও চিন্তা করার প্রয়োজন রয়েছে। এ জন্য প্রয়োজন ব্যাপকভাবে বই-পুস্তক রচনা করা এবং জ্ঞান-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ময়দানে নতুনভাবে কাজ শুরু করা’।
আশা করছি, মাহে রমজানের বাকী দিনগুলোতে বিশেষত ইসলামী জ্ঞানার্জন এবং সামগ্রিকভাবে সারা বছর আধুনিক জ্ঞানার্জনের লক্ষ্যে সবাই সচেষ্ট হবেন।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট