চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

নামাযবিহীন রোজা উপবাসের নামান্তর

রায়হান আজাদ

১৬ মে, ২০১৯ | ২:০৯ পূর্বাহ্ণ

ঈমান আনার পর একজন মুসলমানের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব নামায কায়েম করা। পুরুষদের জন্য নামাজ সর্বাবস্থায় ফরজ। আর মহিলাদের কয়েকটি বিশেষ অবস্থা ছাড়া অন্য সব সময় নামায আদায় করতে হবে। নামায ছাড়া মুসলমানের ঈমানের দাবি অমূলক। নামায সব সময় বান্দাকে আল্ল­াহর কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। নামায ছাড়া শুধু রোজা কেন, কোন ইবাদতই গ্রহণযোগ্য হবে না। তাকওয়া বা খোদাভীতির ভিত্তিমূল হল নামায। আর রোজা মুমিনদের অন্তরে তাকওয়া পয়দা করে। রোজা সম্পর্কে মহান আল্ল­াহ রাব্বুল আলামীন পবিত্র কুরআনুল কারীমে ইরশাদ ফরমায়েছেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেরূপ ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের উপর যেন তোমরা পরহেযগারী অর্জন করতে পারো’। রাসুলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদীস শরীফে বলেছেন, ‘ইসলাম পাঁচটি ভিত্তির উপর স্থাপিত। প্রথম – সাক্ষ্য দেয়া যে, আল্ল­াহ তা’য়ালা ছাড়া কোন মাবুদ নাই, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার বান্দা ও রাসুল। দ্বিতীয়- নামায কায়িম করা, তৃতীয়-যাকাত আদায় করা, চতুর্থ-হজ করা, পঞ্চম- রোজা রাখা’। কোন কোন হাদীসে রোজার কথা ৩ নম্বরে বলা হয়েছে।
নামায ইসলাম ধর্মের মৌলিক ইবাদাত। নামাযের গুরুত্ব, তাৎপর্য ও ফজিলত সম্পর্কে কুরআন ও হাদীসে অসংখ্য বর্ণনা রয়েছে। কোন মুসলমান নামায আদায় না করে রোজা ও হজৎ-যাকাত পালন করলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না। নামাজের গুরুত্ব সম্পর্কে আল্ল­াহ পাক ছুবহানাহু ওয়া তা’য়ালা আল কুরআনে ইরশাদ করেছেন- নিশ্চয় নামায মু’মিনদের ওপর ওয়াক্ত মোতাবেক ফরজ করা হয়েছে।
এ বাধ্যতামূলক ইবাদাত- নামায আদায় না করে সিয়াম সাধনা করা উপবাসের নামান্তর। রোজা একটি বিশেষ মাস রমজানুল মোবারকে ফরজ। আর পানজাগানা নামায স্থায়ীভাবে সকল মু’মিনের উপর প্রত্যেক দিন ফরজ। শরীয়তের অন্যান্য আরকান-আহকাম পালন না করে নিছক সামাজিকতা রক্ষা ও আনুষ্ঠানিকতা দেখানোর জন্য রোজা রাখা ঠিক নয়।
রোজাকে আল্লাহ তা’য়ালা ফরজ করেছেন মু’মিনদের অন্তরে তাকওয়া সৃষ্টির জন্য। তাকওয়া শব্দের অর্থ খোদাভীতি। ঈমান ও আমলী জিন্দেগীর প্রত্যেক ক্ষেত্রে বান্দা আল্ল­াহর বিধি-নিষেধ স্মরণ রেখে কাজ আনজাম দেওয়াই তাকওয়া। রমজানুল মোবারক তাকওয়া হাছিলের মাস।
মিথ্যা, কুকর্ম ও অসামাজিক কাজ থেকে নিজেকে আত্মরক্ষা করে তাকওয়া অর্জনই সিয়াম সাধনার লক্ষ্য। কুরআন শরীফে ইরশাদ হয়েছে, ‘নামাজ সকল অশ্লীলতা, অন্যায় ও অসামাজিক কাজ থেকে বান্দাকে বিরত রাখে’।
যাবতীয় শরীয়ত বিরোধী কাজকর্ম থেকে বিরত থাকার লক্ষ্য বাস্তবায়ন না হলে রোজা রাখা দিনব্যাপী উপবাসের সমান। রাসুলে সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বুখারী শরীফে ফরমায়েছেন -যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা বা কুকর্ম ত্যাগ করে না সে পানাহার পরিত্যাগ করেছে কি করেনি, উপবাস থেকেছে কি থাকেনি আল্ল­াহ তার খবর রাখার প্রয়োজন মনে করেন না।
অতএব, আজ এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, দৈনন্দিন ফরজ নামায আমাদের পরিবার ও সমাজের সবাইকে নিয়ে অবশ্যই পড়তে হবে। নামাজবিহীন শরীয়তের কোন আমলই কবুল হবে না। তাই নামায সম্পর্কে বলা হয়েছে – ‘নামায দ্বীন ইসলামের ভিত্তি স্বরূপ’ ‘নামাজ বেহেশতের চাবিকাঠি’ কাফির ও মুসলমানের মাঝে পার্থক্য হচ্ছে নামায অর্থ্যাৎ মুসলমান নামায পড়ে, কাফির নামায পড়ে না। আল কুরআনে নামাযের কথা ৮২ বার বলা হয়েছে।
নামায প্রতিষ্ঠা না করলে পরকালে কঠোর শাস্তির কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। হাশরের ময়দানে সর্বপ্রথম নামাযের হিসাব নেয়া হবে মর্মে মহানবী সতর্ক বাণী উচ্চারণ করেছেন। আসুন, যাদের আগে নিয়মিত নামায পড়া হতো না তারা এ রমজানেই নামাযে অভ্যস্থ হয়ে যাই এবং আর কখনো নামায ছাড়বো না মর্মে শপথ গ্রহণ করি।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট