চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

প্রাণের ভাষায় মনের কথা

নাকফুল

শাম্মি মির্জা

১৪ মে, ২০১৯ | ১:১৫ পূর্বাহ্ণ

‘আমার মায়ের সোনার নোলক হারিয়ে গেল শেষে,
হেথায় খুঁজি হোথায় খুঁজি সারা বাংলাদেশে’…
সেই ছেলেবেলায় কোন ক্লাসের যেন পাঠ্য ছিল কবি আল মাহমুদের অসাধারণ এই কবিতাটি। ভীষণ আবেগ নিয়ে প্রথম যেদিন পড়ি কবিতাটি, অবাকই হয়েছিলাম, আমার মায়ের নাকেও তো নোলক নেই। নেই নাকফুল পর্যন্ত। তেমন নাকফুল পরতে কখনোই দেখিনি তাকে। কিন্তু নানী, দাদীর নাকে সে কি বাহারী নাকফুল। কোনটার নাম বকুল ফুল, কোনটা বরই ফুল, মসুর এর দানা, সাত পাথরের ফুল… আরো কতো কি! সেই সাথে বাহারী নোলক, নাকছাবি।
কি যে মায়া লাগতো, নোলক নাড়িয়ে, সাতটা হীরা ঝিকমিকিয়ে কথা বলতো যখন আমার নানী, দাদী! সাত সূর্য সমান আলো যেন ঠিকরে পড়তো তাদের উজ্জল মুখে। ভীষণ ভালো লাগতো আমার। তাই বোধহয় সেই ছোটবেলা থেকেই নাকফুলের প্রতি ভীষণ দুর্বলতা। স্কুলের ছোট ক্লাসে থাকতে, বার্ষিক পরীক্ষা শেষে বেড়াতে গিয়েছিলাম গ্রামে। তখনই নাক ফুড়িয়েছিলাম, নানীর হাতে। মা কিছুতেই রাজী নয়। ‘এতো মোটা নাক তোমার, সুচ দিয়ে ফুটো করলে ব্যাথা পাবে তো’ ভয় ছিল মায়ের। ইনজেকশন দেখে আজীবনের ভয় আমার, কিন্তু শখের কাছে কি আর পাত্তা পায় তা।
ভয়কে জয় করে নাক ফুটিয়েছিলাম বটে, নাকফুল পরতে এতো যন্ত্রণা কে জানতো। ব্যাথা পেয়েছিলাম খুব, তাও বা পাত্তা দেয় কে। এরপর থেকে ড্রেসের রঙ্গে মিলিয়ে নাকফুল পরা আমার প্রিয় শখ ছিলো। কিন্তু যখন ফুটিয়েছিলাম নাক, স্কুলে পড়ার সময়, মানা ছিল স্কুলে নাকফুল পরার। তাই অপেক্ষা করতাম কবে বড় হবো। এরপর বড় যখন হলাম, চট্টগ্রামে, সেখানেও প্রবীণাদের মানা, নাকফুল নাকি পরে বিয়ের পর। মানিনি অবশ্য কখনোই। তবু যেদিন পরতাম, সবাই বেশ আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞেস করতো,‘ বিয়ে হয়েছে বুঝি?’ কি যে যন্ত্রণা, এইসব পুরনো কথা মানতে হবে নাকি? মানি না।
তবে হ্যাঁ, বিয়ের পরে নাকফুল বাঙ্গালীর বা আমাদের সংস্কৃতির বিশেষ বৈশিষ্ট্যই বটে। নাকফুল এর প্রতি বিশেষ দুর্বলতার কারণেই আমি খুব সূক্ষèভাবে খেয়াল করে দেখেছি, নাকফুল পরলেই কারো চেহারায় অদ্ভুত এক সৌন্দর্য ফুটে ওঠে। কেমন যেন কোমল এক রূপ। বিয়ের আসরে যতো জড়োয়া গহনাতেই সাজুক না কেন, নাকফুল ছাড়া কনে! অসম্পূর্র্ণ।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট