চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

ইফতারে রয়েছে অপরিসীম সাওয়াব ও বরকত

রায়হান আজাদ

১৪ মে, ২০১৯ | ১:১৫ পূর্বাহ্ণ

ইফতার হচ্ছে সূর্যাস্তের সাথে সাথে রোজা পালনকারী কোন কিছু খেয়ে রোজা ভেঙ্গে দেয়া । ইফতার গ্রহণ সুন্নাত। শারীরিক স্থিতিশীলতা, গতিশীলতা ও অপরিসীম বরকত হাছিলের জন্য ইফতার করা প্রয়োজন। ইফতার রকমারি নাস্তার পসরা নয়, যে কোন কিছু খেয়ে রোজা ভেঙ্গে ফেলা মাত্র। ইফতারের মধ্যে প্রচুর সাওয়াব, কল্যাণ, আনন্দ ও তৃপ্তি রয়েছে। পবিত্রতা ঈমানের অঙ্গ। অজু করে পাক সাফ হয়ে ইফতার করতে যাওয়া উত্তম। ইফতার গ্রহণের পূর্বে পড়ার একটি প্রসিদ্ধ দু’আ রয়েছে। এ দু’আ পড়ে ইফতার শুরু করলে অনেক ছাওয়াব পাওয়া যায়। দোয়াটি- ‘আল্লাহুম্মা লাকা ছুমতু ওয়া বিকা আমানতু ওয়া আলাইকা তাওয়াক্কালতু ওয়া আলা রিজকিকা আফতারতু’। ইফতারির সময়টি রোজাদারের জন্য দারুণ আনন্দের। এ সময় চাপা চাপা খুশিতে সবার মন ভরে উঠে। রাসুলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফরমায়েছেন, ‘রোজাদারের আনন্দের সময় দুটো। একটি ইফতারের সময় অন্যটি আল্লাহ তা’য়ালার সাথে সাক্ষাৎ লাভের সময়’। হাদীস শরীফে আছে, ‘বিশেষত ইফতারির প্রাক্কালে রোজাদের মুখের গন্ধ আল্লাহ পাকের কাছে মিশকের সুগন্ধির চেয়ে অধিক প্রিয়’। আমাদের সামাজিক জীবনে ইফতারের খুশি সবার মনে এক অন্যরকম প্রাপ্তির ঢেউ খেলে যায়। ইফতারের সময় বাজারের কোলাহল থেমে যায়, অসহনীয় যানজট হালকা হয়ে পড়ে, একই সময় খাওয়ার জন্য সাজ সাজ রব উঠে। অনুপম ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের নমুনা সৃষ্টি হয় ধনী-দরিদ্র, মালিক-শ্রমিক ও কর্মকর্তা-কর্মচারী একই সময়ে ইফতার গ্রহণের মধ্য দিয়ে। পরিবারে মা-বাবা ছেলে-মেয়ে ও নাতী-নাতনীদের নিয়ে একই টেবিলে ইফতার করলে পারিবারিক বন্ধন মজবুত হয়।
ইফতারের সময় দু’আ করার গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তিন শ্রেণীর লোকের দু’আ ব্যর্থ যায় না (১) ইফতার প্রাক্কালে রোজাদারের দু’আ (২) ন্যায়পরায়ণ নরপতির করজোড়ে মিনতি (৩) মজলুমের বুক ফাটা ফরিয়াদ।
খেজুর দিয়ে ইফতার করা উত্তম। এতে অশেষ বরকত ও ফজিলত রয়েছে। এ সম্পর্কে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, হযরত আনাস রদিআল্লাহু তা’আলা আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নামাজের পূর্বে গুটিকয়েক রুত্ব অর্থাৎ আধাপাকা বা সদ্য পাকা খেজুর দিয়ে ইফতার করতেন। রুত্ব না পেলে পূর্ণ পাকা খেজুর দিয়ে ইফতার করতেন। আর যদি তাও না পেতেন তাহলে কয়েক কুলি পানি দ্বারা ইফতার করতেন। (আহমদ, আবু দাউদ ও তিরমিজি) । উপমহাদেশের খ্যাতিমান মোফাসসির হাকীমুল উম্মত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী রহমাতুল্লাহ আলাইহি ইফতারকে দুইভাগে ভাগ করেছেন। (১) ইফতারে আছগর যা রোজাদার প্রতিদিন গ্রহণ করে থাকে। (২) ইফতারে আকবর যা পবিত্র ঈদুল ফিতর নামে অভিহিত, এ দিন রোজাদারদের খাওয়ার দিন, খুশীর দিন, আল্লাহর নিয়ামতের শোকরিয়া করার দিন।
ইফতার গ্রহণ করা শারীরিকভাবে যেমনি প্রয়োজন তেমনি শরীয়তে এর যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আমার উম্মত ততদিন কল্যাণের মধ্যে থাকবে যতদিন তারা তাড়াতাড়ি ইফতার করবে এবং দেরিতে সাহরি খাবে’- (আহমদ)। হাদীসে কুদসীতে রয়েছে, ‘আল্লাহ তা’য়ালা বলেন- আমার কাছে সর্বাপেক্ষা বড় বান্দা তারাই যারা যথা সময়ে ইফতার করে-(তিরমিজি) বুখারী শরীফে আছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘সময় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইফতার করলে মুসলমানরা সাফল্য ও উন্নতি লাভ করবে। অন্যান্য কিতাবধারীরা বিলম্বে ইফতার করে’।
তাই আমাদের উচিত যে যেখানেই থাকি না কেন আশেপাশের পরিবেশে যে সমস্ত রোজাদার মুসলমান ভাইয়েরা আছেন তাদেরকে সবাইকে নিয়ে যথাসময়ে ইফতার গ্রহণ করতে যাওয়া। ইফতাদের আগে যেন কেউ দু‘আ করতে না ভুলি। আয় আল্লাহ! তুমি আমাদেরকে খাস রোজাদার হিসেবে কবুল করুন এবং আমাদের ইফতারিতে বরকত দান করুন। আমীন।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট