চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

রমজানে পণ্যমূল্য স্থিতিশীল রাখা ঈমানের দাবি

রায়হান আজাদ

১৩ মে, ২০১৯ | ১:২৩ পূর্বাহ্ণ

রমজান মাসে দেশের বাজার ব্যবস্থাপনায় স্থিতাবস্থা নেই। দ্রব্যমূল্যের ক্রমশ উর্দ্ধগতি বাজার পরিস্থিতিকে মারাত্মক অস্থির করে তুলছে। গত বছরের চেয়ে এ বছর দৈনন্দিন খাদ্য সামগ্রীর দাম অনেক বেশি। গ্রাম-গঞ্জ-শহরে জিনিসপত্রের আকাশ ছোঁয়া দামে রোজাদারের সিয়াম সাধনা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। এদিকে ক্ষুদ্র পুঁজির সাধারণ ব্যবসায়ীরাও বেকায়দায় রয়েছেন। সন্ত্রাস-দুর্নীতি-চাঁদাবাজি এর জন্য বড় দায়ী। এমতাবস্থায় মাহে রমজানে দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশ হিসেবে যেখানে যাবতীয় অসদুপায় নিয়ন্ত্রণ করে বাজার মূল্য স্থিতিশীল কিংবা ক্রমহ্রাসমান রাখার কথা ছিল সেক্ষেত্রে লাফ দিয়ে বাড়ছে নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্যের দাম। দেশের সরকার, ব্যবসায়ী ও ভোক্তা সাধারণ সবাই মুসলমান হওয়া সত্ত্বেও অতিরিক্ত অর্থনৈতিক মুনাফা হাছিলের যে অশুভ তৎপরতা চলমান তা যেমনি হতবাক করার মতো তেমনি চরম নৈতিক অধঃপতনের পরিচায়কও বটে। আরবদেশসহ পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো আমাদের দেশেও সংখ্যা গরিষ্ঠ মুসলমান ভাইয়ের রোজা পালনের সুবিধার্থে পণ্য মূল্য স্বাভাবিক রাখা এবং সহজ উপায়ে সবার দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করা সকল মুসলমানের ঈমানী দায়িত্ব ছিল। কথা ছিল, রমজান ঈমানী দায়িত্ববোধ জাগ্রত করে। তাই দ্বীনি চেতনা মাথায় রেখে সবাই ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করবে। সেক্ষেত্রে দেখা গেছে, কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ী কৃত্রিম উপায়ে জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে জন দুর্ভোগ সৃষ্টি করছেন। যা কোন মতেই ইসলাম সমর্থন করে না। রাসুলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে মজুদদারি, দাম বাড়ানোর উদ্দেশ্যে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি, ধোঁকা, প্রতারণা, ভেজাল দেয়া ও অন্যায়ভাবে মূল্য নির্ধারণ কঠোরভাবে হারাম ঘোষণা করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘যে পণ্য মজুদ রাখে সে পাপী।’ (মুসলিম শরীফ) যে পণ্য গুদামজাত করে রাখে সে অভিশপ্ত। (ইবনে মাজাহ) ‘যে পণ্যে ভেজাল দেয়-ব্যবসায় প্রতারণা করে সে আমার উম্মত নয়’।
দেখা যায়, কিছু কিছু ব্যবসায়ী ওজনে কম দেয়। বিভিন্নভাবে ক্রেতাকে ঠকানোর কসরত করে। তাদের সম্পর্কে অ­াল্লাহ পাক বলেন, ‘দুর্ভোগ তাদের জন্য যারা মাপে কম দেয়। যারা মানুষদের কাছ থেকে যখন মেপে নেয় তখন পুরোপুরি আদায় করে। আবার নিজেরা যখন অন্যের জন্য ওজন কিংবা পরিমাপ করে তখন কম দেয়।’ (সূরা আল মোতাফ্ফেফীন : ০১-০৩) ‘ন্যায়ের সাথে ওজন কর, দাঁড়িপাল্ল­াকে উঁচু নিচু করো না।’ (সুরা আর রহমান-০৯) পবিত্র আল কুরআনে এ ধরণের আরো বহু আয়াত রয়েছে। উক্ত আয়াতগুলো দ্বারা প্রমাণিত হয় যে কোন ব্যক্তিকে ওজনে কম দেয়া বৈধ নয়। সুতরাং লোকের প্রাপ্য তাদেরকে সম্পূর্ণরূপে প্রদান করা অপরিহার্য। বরং লোকের প্রাপ্য তাদেরকে সম্পূর্ণরূপে প্রদান করার সাথে সাথে তাদেরকে আরো কিছু অংশ বেশি প্রদান করাই উত্তম। তাই তো মহানবী বলেছেন, তোমরা যখন কোন জিনিস কোন ব্যক্তিকে ওজন করে দেবে তখন তাকে ওজনে কিছু বেশি প্রদান করবে। (সুনানে ইবনে মাজাহ) ইসলামী শরীয়তে পণ্যে সব ধরনের ভেজাল দেয়া নিষিদ্ধ। এটি চরম গর্হিত কাজ। হোটেল-রেস্তোরাঁয় বাসী ও পচা খাবার পরিবেশন দ-নীয় অপরাধ। ইসলামের স্বর্ণযুগ খোলাফায়ে রাশেদার আমলে এধরণের অপরাধের জন্য কঠোর শাস্তির প্রচলন ছিল। কুরআনে কারীমে এসেছে, ‘মানুষকে খারাপ বা ত্রুটিযুক্ত জিনিস দিও না, দুনিয়াতে বিপর্যয় সৃষ্টি করো না।’ ( সুরা শুয়ারা-১৮৩)
আশা করছি, রোজার মৌলিক শিক্ষা কৃচ্ছ্রতা,সংযম ও খোদাভীতি অর্জন করতঃ আমাদের ব্যবসায়ী সমাজ গ্রাহকদের কোনভাবেই ঠকাবেন না, তারা নৈতিক মূল্যবোধে উদ্দীপ্ত হবেন। দ্রব্যমূল্য সহনীয় পর্যায়ে রেখে গরীব রোজাদারদের প্রতি সহানুভূতিশীলতা দেখাবেন, ইনশাল্লাহ। আল্লাহ পাক আমাদের সবাইকে সে তৌফিক দান করুন। আমীন ॥

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট