চট্টগ্রাম বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

নৈতিক চরিত্রের বিকাশে রোজার ভূমিকা অপরিসীম

রায়হান আজাদ

১২ মে, ২০১৯ | ১:০৩ পূর্বাহ্ণ

মানবজীবনে উত্তম চরিত্র গঠনে রোজার গুরুত্ব অনেক বেশি। রোজা একটি দৈহিক ও আত্মিক ইবাদত। এর ব্যাপক উপকারিতা, যার অংশবিশেষ নি¤েœ তুলে ধরা হল। সিয়াম তাকওয়া অর্জন ও আল্লাহর প্রিয় বান্দা হতে এর পালনকারীকে সাহায্য করে এবং শয়তানী শক্তি ও কু-প্রবৃত্তির ক্ষমতা দুর্বল করে দেয়। মানবদেহে শরীরের যে শিরা-উপশিরা দিয়ে শয়তান চলাচল করে সিয়ামের ফলে সেগুলো নিস্তেজ ও কর্মহীন হয়ে পড়ে। সিয়াম আল্লাহর নিকট পূর্ণ আত্মসমর্পণ ও ইবাদতের প্রশিক্ষণ। আল্লাহর আনুগত্যে ধৈর্য ধারণ ও হারাম বস্তু থেকে দূরে থাকতে সহিষ্ণুতার প্রশিক্ষণ দেয় এ সিয়াম। ঈমান সুদৃঢ়করণ এবং বান্দার প্রতি আল্লাহর সার্বক্ষণিক নজরদারির অনুভূতি সৃষ্টি করে দেয় এটি। এজন্য রোজাদার লোকচক্ষুর আড়ালে গোপনেও কোন কিছু খায় না এবং পান করে না। দুনিয়াবী ভোগ-বিলাসের মোহ কমিয়ে সিয়াম তার পালনকারীকে আখিরাতমুখী হওয়ার দীক্ষা দেয় এবং ইবাদতের প্রতি তার ক্ষেত্র প্রসারিত করে তুলে। সিয়াম সাধনার ফলে বান্দা সৎ গুণাবলী ও সচ্চরিত্রের অধিকারী হয়ে থাকে।
পবিত্র মাস রমজান বান্দাকে নিয়ম-শৃঙ্খলা ও সময়ানুবর্তিতা শিক্ষা দেয়। সিয়াম পাকস্থলী ও পরিপাকতন্ত্রকে বিশ্রাম দিয়ে থাকে। ফলে এগুলোর কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায় এবং তা আবার সতেজ ও প্রাণবন্ত হয়ে উঠে। মোটা মানুষের স্থূলতা কমিয়ে আনতে সিয়াম সাহায্য করে। মাত্রাতিরিক্ত ওজন কমিয়ে এনে অনেক রোগবালাই থেকে হিফাযত করে। অনেক অভিজ্ঞ ডাক্তারের মতে, ডাইবেটিস ও গ্যাস্ট্রিক রোগ নিরাময়ে সিয়াম ফলদায়ক ও এক প্রকার সহজ চিকিৎসা। সমস্ত শরীরে সারা বছর যে জৈব বিষ দেহের ¯œায়ু ও অপরাপর জীব কোষকে দুর্বল করে দেয় রোজা সমস্ত রক্ত প্রবাহকে পরিশোধন করে সমগ্র প্রবাহ প্রণালীকে নবরূপ দান করে। রোজা ঊর্ধ্ব রক্তচাপজনিত ব্যাধিসমূহ দূর করতে সাহায্য করে। সামাজিকভাবে সিয়াম সমাজের নিরন্ন মানুষের জন্য বিত্তশালীদের মনে সহানুভূতি সৃষ্টি করে এবং সৃষ্ট জীবের সেবা করার দায়িত্ব স্মরণ করিয়ে দেয়। ব্যক্তিকে মিথ্যাচার, হিংসা-বিদ্বেষ, ঝগড়া, অশ্লীলতা, প্রভৃতি পাপাচার থেকে দূরে রাখে রোজা, যা আদর্শ সমাজের ভিত্তি প্রতিষ্ঠা করতে ভূমিকা রাখে। রোজার ফলে মানুষ অপচয় ও অপব্যয়ের পথ থেকে মিতব্যয়িতার পথে ধাবিত হয়।
সিয়াম সমাজ সংস্কারের একটি অনন্য হিকমত, এটি সমাজকে পরিশুদ্ধ ও সংস্কারে ভূমিকা রাখে। কেননা ব্যক্তির পরিশুদ্ধতাই হচ্ছে সমাজ শুদ্ধির প্রথম ধাপ। ব্যক্তি সংশোধিত হলে সমাজ সংশোধন হয়ে যাবে।
রমজানুল মোবারক মহিমা ও ফজিলতে ভরপুর একটি মাস। রাসুলে আকরাম (স.) ফরমায়েছেন, ‘প্রত্যেক বস্তুর একটি প্রবেশদ্বার রয়েছে আর ইবাদতের প্রবেশ দ্বার হল সিয়াম’। মাসব্যাপী রোজা পালনের ফলে স্বাস্থ্যের বর্জ্য-ময়লা দূর হয়, স্বচ্ছ-সুন্দর হয় দৈনন্দিন জীবন ও রপ্ত হয় শরীর গঠনের বৈজ্ঞানিক নিয়মাবলী। সকল ইবাদতের জন্য একটি সুন্দর মন থাকা দরকার । রমজান মাসে খোদার রহমতের ঢল নামে। উপচে পড়ে অসংখ্য সাওয়াবের ফোয়ারা। সমাজে নেমে আসে শান্তির সুনিবিড় ছায়া। খোদাভীরুতা ও ভ্রাতৃত্বের অনুপম মিলনে তৈরী হয় ভাবগাম্ভীর্যময় পরিবেশ। শ্রেণী ও পেশা ভেদে মানুষ বিভিন্ন্ রুচির হলেও রমজানে সবাই একই পরিবেশে একই আচরণ করে । পারস্পরিক ভালবাসা-সম্প্রীতি ও আন্তরিক পরিবেশ তৈরি হয়। তাই এ মাসকে শাহরুল মুয়াছাত বা সমবেদনা ও সহানূভূতি প্রদর্শনের মাসও বলা হয়ে থাকে। এ মাসের ফজিলতের বর্ণনা দিতে গিয়ে পেয়ারা হাবীব (স.) ফরমায়েছেন, একজন ঘোষণাকারী ঘোষণা দেবে ‘হে কল্যাণ অণে¦ষ, ‘নিয়ামত কুড়াতে এগিয়ে চল আর খবরদার বদবখ্ত কদাকার, তুমি তোমার ইবলিসি চাদর গুটিয়ে ফেল’। অন্যত্র রাসুল (স.) এরশাদ করেন,‘যখন হাশরের মাঠে কেউ কারো হবে না সবাই ‘ইয়া নাফসি’ ‘ইয়া নাফসি’ করবে ঠিক তখনই রোজা ও কুরআন সুপারিশের জন্য মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে। রোজা বলবে, হে আল্লাহ তা’য়ালা আমি রোজাদারকে দিনের বেলায় পানাহার, ভোগ বিলাস ও স্ত্রী সম্ভোগ থেকে বিরত রেখেছিলাম তাই তার জন্য আমার সুপারিশ গ্রহণযোগ্য হোক। কুরআন মজীদ বলবে, রাতের মজার ঘুম হতে আমি আমার তেলাওয়াতকারী এই ব্যাক্তিকে বিরত রেখেছিলাম । তাই তার জন্য আমার সুপারিশ মন্জুর করা হোক। অতঃপর তাদেরকে সুপারিশের ক্ষমতা দেয়া হবে।
রোজা মুমিনকে পাক সাফ করে তোলে। কলুষতামুক্ত অনাবিল জীবন গড়তে সাহায্য করে । পরিণত করে নিকষ খাঁটি সোনার মানুষে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট