চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

মেয়েদের রক্তশূন্যতা ও প্রতিকার

৪ নভেম্বর, ২০১৯ | ১:১৬ পূর্বাহ্ণ

আমাদের দেশের মহিলাদের অজ্ঞতার কারণে বা অন্য অনেক কারণে রক্তশূন্যতায় ভুগে থাকে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ বয়সের সাথে কোন সম্পর্ক নেই।

তবে সবাই বুঝতে চায় না, মহিলারা মনে করে বয়স বেশী হলেই রক্ত যায়। কিন্তু না, অল্পবয়সী মেয়েদের রক্তক্ষরণ আরও বেশী হয়। এটা কিন্তু অল্পবয়সী মেয়েরা বুঝতে পারে না। তারা মনে করে এটা স্বাভাবিক। অনেক সময় লজ্জায় মাকেও বলে না। ধীরে ধীরে রক্তশূন্যতা তৈরি হয়। যখন ডাক্তারের কাছে আসে তখন দেখা যায় হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে রক্ত দিতে হয়। তাদের এ অবস্থা হয় বিভিন্ন ধরণের হরমোনের জটিলতার জন্য, যেটা আগে থেকে পরীক্ষা করে চিকিৎসা দিয়ে দূর করা যেতো। আবার বড়দের যেটা হয় সেটার কারণ অন্যরকম। মাসিকের সময় অনেক রক্তপাত হয় বা অনেকদিন পর্যন্ত মাসিক থাকে। প্রথমে অনেকে বুঝতে পারেন না, মনে করে এ রক্তপাত স্বাভাবিক। পরে যখন একেবারে শয্যাশায়ী হয়ে যায় তখন ডাক্তারের কাছে আসেন। মহিলারা নিজেদের চিকিৎসার ব্যাপারে খুবই উদাসীন। স্বামী ও ছেলেমেয়েদের চিকিৎসাকে তারা গুরুত্ব দেন বেশি। কিন্তু নিজেদের চিকিৎসা করাতে বললে বলেন, আজকে টাকা আনিনি আরেকদিন এসে দেখাবো। এ হলো মহিলাদের বাস্তব জীবন। স্বামীও দেখে না কি করে স্ত্রী অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে। উনি তো সংসার চালাতে পারলেই হয়, স্ত্রীর চিকিৎসার কি প্রয়োজন আছে? তবে সব পুরুষের ক্ষেত্রে এ কথা প্রযোজ্য নয়। দেখা গেছে, ডাক্তার যখন বলেন রোগীর জরায়ুতে টিউমার অপারেশন করতে হবে। তখন স্বামী অহেতুক অজুহাত দেখিয়ে গ্রাম্য ডাক্তারের আশ্রয় নেয়। দিনের পর দিন স্ত্রীকে হরমোন খাওয়াতে থাকে। যার জন্য রোগ আরো জটিল হয়ে যায়। ডাক্তারের কাছে আসে শেষ মুহূর্তে যখন রোগী খুব খারাপ হয়ে যায়। এমনকি তখন বন্ড সাইন করে অপারেশন করতে হয়। শুধু জরায়ুতে টিউমার থাকলে যে রক্তশূন্যতা হয় বা অতিরিক্ত রক্তপাত হয়, তা কিন্তু নয়, অনেক সময় দেখা গেছে জরায়ুতে ইনফেকশন যেটাকে পিআইডি বলি, সে কারণেও হয়। আবার ক্রিমির কারণেও রক্তশূন্যতা হয়। এসব কিছুর জন্য মাঝে মাঝে রুটিন চেকআপ করাতে হয় যেটা সবারই করা উচিত সুস্থতার জন্য।

আবার মেনোপজ মহিলাদের রক্তপাত হওয়া মানে সাংঘাতিক বিপদজনক। এটার চিকিৎসা সাথে সাথেই জরুরি হয়ে যায়। মহিলারা মনে করে হয়ত এটা তার মাসিক কিন্তু তা নয়। এ রোগ খুব খারাপ। মাসিক বন্ধ হলে কমপক্ষে ১ বছর (বয়স ৫০, ৬০) রক্ত দেখা দিলেই ডাক্তারে কাছে চলে যাবেন।

এটা পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে নির্ণয় করতে হবে। রোগীর জরায়ুতে খারাপ কিছু যেমন ঃ ক্যান্সার জাতীয় রোগে ভুগছেন কিনা আবার অনেকের বয়সের আগেই মাসিক উঠে যায় সেটাও খারাপ। সাধারণত ৪০ ও ৪৫ বছরের মধ্যেই মাসিক উঠে যাওয়ার নিয়ম যদি এর মধ্যে না উঠে বা ৩০, ৩২ বছর বয়সে উঠে যায় তাহলে কারণগুলো খুঁজে বের করতে হবে। কিন্তু কারণ বের করার জন্য ডাক্তারের কাছে যেতে হবে।

বাংলাদেশের বেশিরভাগ নারী মাসিকের সময় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ব্যাপারে একেবারেই অজ্ঞ। দীর্ঘদিন থেকে যাদের এ সমস্যা হয় টিউমার ধরা পড়েনি বা ধরা পড়ার পরও চিকিৎসা করতে চান না তারা বিভিন্ন ধরণের সমস্যায় ভোগেন। যেমন ঃ ইনফেকশন, রক্তশূন্যতা ঝধৎপড়সধঃড়ঁং পরিবর্তন হয় ০.৫ পারসেন্ট। ঋরনৎড়রফ ঁঃ. এর জন্য অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয় ৩০% বাচ্চা না হওয়ার কারণ ৩০% দীর্ঘদিনের অসুবিধার জন্য অতিরিক্ত রক্ত যাওয়ার জন্য রক্তশূন্যতা হয়ে মৃত্যুর দিকে চলে যায়। কাজেই আমাদের রোগীদের পরামর্শ দিতে হবে যে ছোট হোক বড় হোক টিউমারের জন্য অসুবিধা হলেই ডাক্তারের চিকিৎসা নিতে হবে। নিজের জীবনের ঝুঁকি নেওয়ার প্রয়োজন নেই।

ডা. নার্গিস রোজেলা বিভাগীয় প্রধান, গাইনী ও প্রসূতি বিভাগ, চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতাল; প্রাক্তন সহকারী অধ্যাপিকা, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট