চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

গরমে ঘামের সমস্যা ও প্রতিকার

অধ্যক্ষ ডা. রতন কুমার নাথ

১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ | ১২:৫৭ পূর্বাহ্ণ

প্র ত্যে ক সুস্থ মানু ষ ই ঘা মে। প্রতি বর্গ সেন্টিমিটার ত্বকে প্রায় ৪০০টি করে ঘর্মগ্রন্থি বা সোয়েট গ্ল্যান্ড থাকে, যা থেকে কুন্ডলী পাকানো ঘর্মনালী বের হয় ত্বকের বিভিন্ন স্তর ভেদ করে। শেষ হয় ত্বকের একদম উপরিভাগে ছোট ছোট ঘর্মছিদ্র বা সোয়েটপোরে। এই ছিদ্রগুলো দিয়ে ঘাম ত্বকের ওপর আসে, বাষ্পীভূত হয়ে বাতাসে মিশে যায়। একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের ত্বকে প্রায় ৩০ লক্ষ ঘর্মগ্রন্থি থাকে। বেশি থাকে হাতের তালু ও পায়ের পাতায়।

এক্রিন ও আপোক্রিন এই দুই ধরনের ঘর্মগ্রন্থি আমাদের ত্বকে থাকে। এক্রিন গ্রন্থি সারা দেহ জুড়েই থাকে। বেশি থাকে হাতের চেটো আর পায়ের তলায়। আর আপোক্রিন গ্রন্থি বেশি থাকে বগলেও জঙ্গঘাতে। বয়ঃসন্ধিক্ষণে হরমোনের প্রভাবে এদের ক্ষরণ বেশি হয়। ঘামের শতকরা ৯৯ ভাগই জল। বাকি ১ ভাগের মধ্যে থাকে নানা ধরনের লবণ, অ্যাসিড, ইউরিয়া, প্রোটিন, অ্যামোনিয়া ইত্যাদি। ঘাম দেহের নানা উপকার করে দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ দেহে জলের পরিমাণ ঠিক রাখা, ত্বককে আর্দ্র রাখা, রোগ জীবাণু প্রতিরোধ অ্যাসিড ও ক্ষারের সমতা নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি অনেক কিছুই করে এই ঘাম। ঘামের পরিমাণ কমে গেলে নানা ক্ষতিকর পদার্থ দেহে জমে থাকে, বের হতে পারে না, অস্বস্তি শুরু হয়, ত্বকের স্বাভাবিক কাজ কর্মও ব্যাহত হয়। অনেকের বেশি ঘাম হয়। এটা কোনও অসুখ নয়। কোনও ওষুধ খেয়ে ঘাম কম করার চেষ্টাও অনুচিত। বাজারে নানা রকম ঘাম নিরোধক অ্যান্টিপার্সপিরান্ট ক্রিম, স্প্রে,ু লোশন, পাউডার ইত্যাদি পাওয়া যায়। এদের অধিকাংশের মধ্যেই থাকে অ্যালুমিনিয়াম সল্ট, যা ঘর্মছিদ্রকে আটকে দিয়ে দেহের বাইরে আসতে দেয় না। অনেকের ঘামে বেশি দুর্গন্ধ হয়। আসলে দেহত্বকের নানা ব্যাক্টেরিয়া এজন্য দায়ী। এই দুর্গন্ধ দূর করতে যায়, যেগুলোতে ব্যাক্টোরিয়া নাশক নানা রাসায়নিক মেশানো থাকে। তবে ঘামের অস্বস্তি দূর করতে কতকগুলো স্বাস্থবিধি মানতেই হবে।

দেহত্বক সবসময় পরিষ্কার রাখবেন। দেহে ঘাম জমে থাকতে দেবেন না। স্যাঁত সেঁতে বা গুমোট আবহাওয়া এড়িয়ে চলুন। পেঁয়াজ, রসুন কম খেলে ঘামেও দুর্গন্ধ কম হবে।

ঘামের দুর্গন্ধ দূর করতে বডি স্প্রে ব্যবহার করুন, সুগন্ধি পাউডার শুকনো শরীরে অল্প করে লাগাবেন। ঘরোয়া পদ্ধতিতে পায়ের দুর্গন্ধমুক্ত ঘাম দূর করতে পারেন। দুটো টি ব্যাগকে ১৫ মিনিট করে আধ বালতি ফুটন্ত জলে ফেলে রাখুন। এবার ব্যাগ দুটোকে তুলে ফেলে দিয়ে, বালতিতে ঠা-া জল ঢালুন। পায়ের পাতা ওই জলে প্রতিদিন ২০ থেকে ৩০ মিনিট ভিজিয়ে রাখবেন। এভাবে পর পর দশদিন করুন। দেখবেন দুর্গন্ধমুক্ত পায়ের ঘাম আপনাকে গুডবাই জানাবে।
ঘামের বিশ্রি দুর্গন্ধ প্রতিবিধানের জন্য হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা বিজ্ঞানে সুনির্বাচিত ওষুধ অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা রাখে যা অন্য প্যাথিতে নেই। ফিজিক্যাল ও কনিস্টিটিউশান্যাল সিম্পটমের ওপরই এর আরোগ্য সংকেত নির্ভর করে।

ঘামের সমস্যা নিয়ে এই প্যথিতে যে সব ওষুধ বেশি ব্যবহৃত হয় তা নি¤œরূপ :
১)এসিড নাইট্রিক, ২) সিলিকা, ৩) ক্যালকেরিয়া কার্বনিকা বিশেষ উল্লেখযোগ্য। তারপরেও চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনও ওষুধ খেতে নেই। কারণ তাতে হিতে বিপরীত হতে পারে।

লেখক : সাবেক অধ্যক্ষ ডা. জাকির হোসেন হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ, চট্টগ্রাম।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট