চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

জ¦র নিরাময়ে সচেতনতা

অধ্যক্ষ ডা. রতন কুমার নাথ

৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ | ১:০০ পূর্বাহ্ণ

জ¦ র কি কোন ও অসু খ না অসু খের লক্ষ ণ – জ¦র একটি উপসর্গ মাত্র। জ¦রের কারণ নানাবিধ। যখন মুখের তাপমাত্রা ৯৮.২০০+০.৭০০ ফারনেহাইটের বেশি হয় তখন আমরা তাকে জ¦র বলি। আবার তাপমাত্রা এই নির্ধারিত সীমার নীচে নেমে গেলে, যে অবস্থার সৃষ্টি হয় তাকে বলে হাইপোথারমিয়া – এইগুলি শরীরের তাপমাত্রার ভেরিয়েশন বা ডেভিয়েশন। সকাল ৬টা থেকে ৮টার ভিতর শরীরের তাপমাত্রার থাকে অপেক্ষাকৃত কম। আবার বিকেল ৪টা থেকে ৫ টার মধ্যে টেম্পারেচার নিলে দেখ যায় তখন তাপমাত্রা থাকে একটু বেশি। সুতরাং সকালের দিকের, শারীরিক তাপমাত্রা যদি ৯৮.৯ ফারেনহাইটের বেশি হয় তবেই বলা হবে জ¦র এবং বিকালের দিকের তাপমাত্রা যদি ৯৯.৭ ফারেনহাইটের বেশি হয় তবেই বলা যাবে জ¦র এসেছে। এ ক্ষেত্রে একটা কথা বলা যায় যে, ছোট বাচ্চাদের মুখের তাপমাত্রা নেওয়া যায়না। রেক্টাল বা পায়ুর তাপমাত্রা নিতে হয়। এই সেই তাপমাত্রায় ওরাল তাপমাত্রার চেয়ে ০.৭০ ফারেনহাইট বেশি। বগলের তাপমাত্রা নানা কারণে অদলবদল হয়। যেমন ঘাম বা হয়তো ঠিকমত নেওয়া হল না ইত্যাদি। এই তাপমাত্রা মুখের তাপমাত্রার চেয়ে ১০ ফারেনহাইট কম থাকে।

শরীরের তাপমাত্রার বাড়াকমা : ডাইআরনাল ভেরিয়েশন অর্থাৎ দিনের বিভিন্ন সময়ে শারীরিক তাপমাত্রার যে স্বাভাবিক পরিবর্তনের কথা বলা হল তা কিন্তু অপেক্ষাকৃত যৌবনে বেশি পরিলক্ষিত হয়। বৃদ্ধ বয়সে এই তফাৎ ক্রমশ কমে আসে। শারীরিক তাপমাত্রার নানা পরিবর্তন এবং অবশ্যই জ¦র নিয়ন্ত্রিত হয় মস্তিষ্কের থার্মো-রেগুলেটরি সেন্টার থেকে। মেয়েদের ক্ষেত্রে আবার পিরিয়ডের ২ সপ্তাহ আগে থেকে শারীরিক তাপমাত্রার বাড়ে। পিরিয়ড শুরু হলে তাপমাত্রা আবার স্বাভাবিক হয়ে যায়। খুব বেশি খাওয়া দাওয়া করলে বডি হিট বাড়ে, তাপমাত্রাও বাড়ে। তবে তা সাময়িক এবং তার জন্য চিকিৎসার দরকার পড়ে না। এই রকম নানা ফ্যাক্টর আছে বলে জ¦রের জন্য মানুষ চিকিৎসকের কাছে আসলে খুব পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে রোগীর যাবতীয় শারীরিক খবরাখবর (হিস্ট্রি) নিতে হয়। তা না হলে চিকিৎসা সঠিক হবে না।

জ¦রে শরীরের মধ্যে কী কী পরিবর্তন হয়? জ¦র হলে শরীরের মধ্যে সাইটোকাইন নামের এক প্রোটিন নিঃসৃত হতে শুরু করে। এটা এক ধরনের প্রতিরক্ষা পদ্ধতি। এর কারণ ইনজেকশ বা অ্যালার্জি হতে পারে। এদের মধ্যে ‘পাইরোজেনিক সাইটোকাইন’। শরীর সংক্রমণ হলে এই পারোজনিক গিয়ে বিভিন্ন বিভিন্ন সাইটোকাইনের নিঃসরণ ঘটায়। ইনফেকশনজনিত জ¦রের পাইরোজেনের প্রকৃতি। যেমন হবে ভ্যাকসিনেশনজনিত জ¦রের পাইরোজেনের প্রকৃতি হবে তার থেকে আলাদা। সাইটোকাইন হাইপোথ্যালামাসের থারমোরেগুলেটরি সেন্টারকে বিশৃঙ্খল করে দেয়। তখন প্রস্টাগ্ল্যান্ডিন বেরিয়ে একদিকে করে হিট প্রডাকশন, অন্যদিকে করে হিট কনজারভেশন। তাতেই বাড়ে তাপমাত্রা। এর ফলে রক্তবাহীনালীগুলি একাধারে সঙ্কুচিত ও প্রসরিত হয়। তাতে শরীরের তাপ যেমন বেড়ে যায়, তেমনই আবার শীত করে ও কাঁপুনি হয়। তারপরেই ঘাম হয়ে জ¦র কমে যায়। জ¦র কত সময়ের মধ্যে কতটা বেড়ে যাবে তা নির্ভর করে সংক্রমণের তীব্রতা ও প্রদাহের ধরনের ওপর। জ¦র হওয়াটা একটা প্রতিরক্ষামূলক ব্যাপার। সাধারণ পূর্ণবয়স্ক মানুষ, যার শরীরে আছে স্বাভাবিক প্রতিরোধ ক্ষমতা, তার মধ্যে কোনও ব্যাধির লক্ষণ হিসাবে জ¦র তাড়াতাড়ি প্রকাশিত হয়। আবার খুব বয়স্ক লোকদের হয় তো কোন বড় রকমের সংক্রমণ হল কিন্তু জ¦র হল না।

ব্লাড রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে ইনফেকশন আছে, কিন্তু জ¦র হয় নি বলে ধরা যায় নি, তত দিনে শরীরের হয় তো বড় সড় কোন ক্ষতি হয়ে গিয়েছে।

হোমিওপ্যাথিক প্রতিবিধান : বাত জ¦রের চিকিৎসা হোমিওপ্যাথিতে খুব একটা সহজ নয়। তাই অত্যন্ত বিচক্ষণতার সাথে রোগী বিবরণী নিয়ে ওষুধ প্রয়োগ করতে হয়। হোমিওপ্যাথিতে জ¦রে ব্যবহার ওষুধের নাম সংক্ষেপে নি¤েœ উল্লেখ করলাম । ১) একোনাইট, ২) বেলেডোনা, ৩) আর্সেনিক, ৪) রাসটক্স, ৫) ব্রাইওনিয়া, ৬) জেলসিমিয়াম, ৭) ফেরামফস, ৮) আর্নিকা, ৯) টিউবারকুলিনাম, ১০) পাইরোজেন উল্লেখযোগ্য। এর পরেও চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোন ওষুধ খেতে নে। না হলে হিতে বিপরীত হতে পারে।

লেখক : সাবেক অধ্যক্ষ ডা. জাকির হোসেন হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট