চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দায়িত্বশীলতা

মাহমুদুল হক আনসারী

২৬ আগস্ট, ২০১৯ | ১২:২৫ পূর্বাহ্ণ

কয়েক যুগ ধরে রোহিঙ্গা মুসলিম জনগোষ্ঠীর ওপর সে দেশের সরকার নির্যাতনের স্টিম রোলার চালিয়ে আসছিল। বাড়ি ভিটা, জমি জমা, ব্যবসা-বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান নিশ্চিহ্ন করে এ জনগোষ্ঠীকে মায়ানমার ত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়। শত বছরের পুরোনো এ জনগোষ্ঠীর ওপর ইতিহাসের বর্বরতম হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে পৃথিবীর ইতিহাসে জঘন্যতম ইতিহাস সৃষ্টি করে মায়ানমারের সামরিক সরকার। নির্যাতন নিপীড়ন অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে ২০১৭ সালের আগস্ট মাসে লাখ লাখ রোহিঙ্গা জীবন বাঁচাতে টেকনাফ বর্ডার হয়ে বাংলাদেশে ঢুকে পড়ে। বাংলাদেশ সরকার মানবিক কারণে বিশাল রোহিঙ্গা জনগণকে বাংলাদেশে আশ্রয়ের ব্যবস্থা করে। এ জনগোষ্ঠী বর্তমান বাংলাদেশে ১১ লাখের অধিক সংখ্যায় অবস্থান করছে। তাদের কারণে টেকনাফ কক্সবাজার এলাকার পরিবেশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। স্থানীয় জনগণ নানাভাবে সমস্যার মধ্যে দিন দিন ধাবিত হচ্ছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবেশ দিন দিন হুমকির মধ্যে পড়ছে। পাহাড়, জলাভূমি, বনজসম্পদ প্রায় নিঃশেষ হচ্ছে। রোহিঙ্গাদের আগমনে কক্সবাজার এলাকায় সরকারি বেসরকারি প্রায় দুই হাজার এনজিও তাদের মধ্যে কাজ করছে বলে জানা যায়। পৃথিবীর নানা দেশের প্রতিনিধিত্ব করছে এসব এনজিও। জাতিসংঘসহ অসংখ্য মানবাধিকার সংগঠন বিগত দু’বছর যাবত এখানে রোহিঙ্গাদের নানাভাবে সাহায্য সহযোগিতা দিচ্ছে।

বাংলাদেশ উদারপন্থী মানবতাবাদী একটি স্বাধীন স্বার্বভৌম গণতান্ত্রিক দেশ। রোহিঙ্গাদের সহযোগিতার কথা বলে অনেক দেশ এখানে বাংলাদেশবিরোধী কর্মকান্ড চালাচ্ছে বলেও অভিযোগ শোনা যায়। রোহিঙ্গা যুবকদের মাঝে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালিয়ে বাংলাদেশের পরিবেশ অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র হচ্ছে বলেও বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়। ১১ লাখের অধিক উদ্বাস্তু রোহিঙ্গা জনগণের প্রতিদিন শত শত নবজাতক শিশুর জন্ম হচ্ছে। যুবক-যুবতিদের মধ্যে অনিয়ন্ত্রিতভাবে বিবাহ হচ্ছে। ফলে এখানে নিয়মিত জনসংখ্যা বৃদ্ধি অব্যাহত আছে। বিভিন্ন সন্ত্রাসী গ্রুপ তৈরী করছে কতিপয় এনজিও। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে খয়রাতি সাহায্য পেয়ে অসংখ্য এনজিও রাতারাতি অর্থের পাহাড় গড়ছে। তারা সেখানে আরাম-আয়েশে রোহিঙ্গাদের পুঁজি করে জীবন যাপন করছে। বলা যায়, রোহিঙ্গারা এখন বাংলাদেশে অনেক আরাম-আয়েশের মধ্যে জীবন কাটাচ্ছে। আর তাদের কারণে কয়েক হাজার দেশি-বিদেশি এনজিও কর্মী অঢেল অর্থ রোজগার করছে। রোহিঙ্গদের মধ্যে সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের জন্ম দিচ্ছে। তাদেরকে বাংলাদেশ এবং আশপাশের কতিপয় এলাকায় ব্যবহার করতে ইন্ধন যোগানোর সংবাদও এনজিওদের বিরুদ্ধে আছে। এসব বিষয় রাষ্ট্রের গোয়েন্দাবিভাগের কাছে নিশ্চয় পরিষ্কার বলে মনে হয়। বাংলাদেশ সরকার বিচক্ষণতার মাধ্যমে কূটনৈতিক চেষ্টা চালিয়ে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে সিদ্ধান্তে গেলেও শেষ সময়ে সে চেষ্টা ভেস্তে যায়। এর পেছনে গভীর রহস্য আর ষড়যন্ত্র দেখছে রাজনৈতিক বিজ্ঞমহল। কতিপয় এনজিও নানাভাবে প্ররোচনা ভয়ভীতি দেখিয়ে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ ছাড়তে দিচ্ছে না। অপরদিকে মায়ানমার সরকার ঠিক কিভাবে তাদের ফেরত নিতে যাচ্ছে তাও পরিষ্কার করছে না। রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব, অধিকার, নিরাপত্তা স্বাধীনভাবে অন্যসব জাতি গোষ্ঠীর মতো তাদের প্রতি কি আচরণ করবে তা পৃথিবীর সামনে পরিষ্কার না করলে রোহিঙ্গারা ফেরত যেতে নারাজ। এসব বিষয় গোপনে রেখে হাজার চেষ্টা করলেও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সফল হবে না।
বাংলাদেশ যেভাবে রোহিঙ্গাদের দেশে ফেরত পাঠাতে চেষ্টা চালাচ্ছে সেখানে কোনো ত্রুটি আছে বলে মনে হয় না। বাংলাদেশ সরকার পার্শ্ববর্তী দেশের সাথে রোহিঙ্গা সংকট বিষয়ে অনেকটা সফলতার প্রতিশ্রুতি পাচ্ছে। বাংলাদেশ উদারপন্থী এবং আতিথীয়তার দেশ। মেহমান আসলে তাদের মেহমানদারি করা এদেশের সভ্যতার অংশ। কিন্তু এ সুযোগে কেউ দেশবিরোধি চক্রান্ত আর ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করতে চাইলে সেটা কখনো এদেশের আপামর জনগণ সহ্য করবে না। বাংলাদেশ এক সাগর রক্তের বিনিময়ে ৩০ কোটি মানুষের আত্মদানের মাধ্যমে অর্জিত একটি স্বাধীন দেশ। কারো চোখ রাঙানো আর ষড়যন্ত্রের জালে দেশের জনগণ পা ফেলবে না। যেভাবে নির্যাতিত রোহিঙ্গারা এদেশে আশ্রয় নিয়েছে, একইভাবে তারা তাদের পূর্ণ নাগরিক মর্যাদা নিয়ে মায়ানমারে ফেরত যাক, সেটাই আমাদের কাম্য। যত দ্রুত সম্ভব তাদের প্রত্যাবর্তন বাস্তবে দেখতে চাই আমরা। এ ব্যাপারে জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের যুক্তিপূর্ণ পদক্ষেপ কাম্য।

লেখক: প্রাবন্ধিক

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট