চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

২৫ আগস্ট, ২০১৯ | ১২:৪৭ পূর্বাহ্ণ

স্কুল ফিডিং কর্মসূচি
দরিদ্র শিক্ষার্থীদের পুষ্টি
পূরণে সহায়ক হবে

টেকসই উন্নয়ন-সমৃদ্ধির ভিত্তি হচ্ছে সুশিক্ষা। তাই সবার জন্যে শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিত করা এবং পিছিয়ে থাকা প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিশুদের শিক্ষাকর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করে ঝরেপড়া রোধ করতে সরকার নানা তৎপরতা চালাচ্ছে। বিনে পয়সায় বই, বিনা বেতনে শিক্ষালাভ, বৃত্তিপ্রাপ্তিসহ নানা সুযোগ অবারিত করে দিয়ে পিছিয়েপড়া জনগোষ্ঠীর ছেলেমেয়েদের শিক্ষার আলোয় আলোকিত করার চেষ্টা চলছে। এতোসব সুযোগের কারণে শিক্ষায় দরিদ্রপরিবারগুলোর সন্তানদের অংশগ্রহণ বাড়ছে। পুষ্টিহীনতার কারণে দরিদ্রঘরের শিশুরা কাক্সিক্ষত পরিমাণে পাঠ আত্মস্থ করতে পারে না। যদিও আমরা নি¤œমধ্যম আয়ের দেশে শামিল হয়েছি, আমাদের আয় বেড়েছে, বেড়েছে জীবনযাত্রার মান, কমেছে দরিদ্রমানুষের সংখ্যা। কিন্তু এখনো দেশের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ আধপেটা খেয়ে থাকে। তাদের সন্তানরাও আধপেটা খেয়ে বেঁচে থাকে। ফলে তারা পুষ্টিহীনতার শিকার হয়ে থাকে। এরা নানা রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হয় সহজেই। এসব শিশু শিক্ষার জন্যে স্কুলে গেলেও শেষাবধি পড়াশোনায় মন বসাতে পারে না, পড়া মনে রাখতে পারে না। ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী হয়ে উঠে গদ্যময়। ক্ষুধা মিটাতে অনেকে পড়ালেখা ছেড়ে শ্রম বিক্রিতে মনোনিবেশ করে। এসব বিবেচনায় ২০২৩ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে দেশের সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের দুপুরে খাবার দেয়ার প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। সন্দেহ নেই, এই প্রকল্পের সুচারু বাস্তবায়ন হলে পুষ্টিহীনতা রোধ ও দেশের শিক্ষা আন্দোলনে এক বৈপ্লবিক ফল আসবে।
সোমবার অনুষ্ঠিত মন্ত্রীপরিষদের সভায় অনুমোদিত ‘জাতীয় স্কুল মিল নীতিমালা ২০১৯’ এর খসড়া অনুযায়ী শুরুতেই মিড ডে মিলের সুবিধা দেয়া হবে চর, হাওর ও দুর্গম এলাকার স্কুলগুলোতে। পর্যায়ক্রমে দেশের সব প্রাথমিকের শিক্ষার্থীরা এ সুবিধা পাবে। স্কুল মিলে দেয়া হবে পুষ্টিসমৃদ্ধ দুপুরের খাবার। ডিম, কলা ও উন্নত মানের বিস্কুটও দেয়া হবে। উল্লেখ্য, দরিদ্রপরিবারের শিশুদের বিদ্যালয়ে এনরোলমেন্ট এবং ঝরেপড়া ঠেকাতে অনেক অগেই তিনটি উপজেলার স্কুলে রান্না করা খাবার ও ১০৪টি উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বিস্কুট খাওয়ানো হচ্ছে। ১০৪টির মধ্যে ৯৩টি উপজেলায় সরকার ও ১১টি উপজেলায় বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি অর্থায়ন করছে। এই কর্মসূচির সাফল্যও আশাব্যঞ্জক। এখন সারাদেশেই পর্যায়ক্রমে দুপুরের খাবারসহ স্কুল মিলের কর্মসূচি ছড়িয়ে দিতে চায় সরকার। ধারনা করা হচ্ছে এ কর্মসূচির ফলে প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী উপস্থিতির হার যেমন আশানুরূপ বাড়বে, তেমনি কমবে ঝরেপড়ার হারও। এ কর্মসূচির বদৌলতে শিক্ষার্থীদের পুষ্টির চাহিদা মেটানোও সম্ভব হবে। তবে কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীরা কতটুকু লাভবান হবে তা নির্ভর করবে কর্মসূচির সুষ্ঠু বাস্তবায়নের ওপর।
আমরা মনে করি, সরকারি সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দুপুরের খাবারের কর্মসূচি গ্রহণ একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। স্কুল মিল নীতি অনুযায়ী খাদ্যে বৈচিত্র্য আনতে খাবার তৈরি করা হবে পুষ্টিচাল, পুষ্টিতেল, মৌসুমি তাজা সবজি ও ডিম দিয়ে। দেয়া হবে উচ্চ পুষ্টিমানসমৃদ্ধ বিস্কুটও। প্রকল্পটি সুচারুভাবে বাস্তবায়ন করা গেলে শিক্ষাক্ষেত্র ও জনস্বাস্থ্যে সুদূরপ্রসারী প্রভাব দৃশ্যমান হবে। তবে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পৌনে দুই কোটি শিক্ষার্থীর জন্য গুণমান ঠিক রেখে নিয়মিত পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবারের ব্যবস্থা করা অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং কাজ। আমাদের পাশর্^বর্তী দেশে মিড ডে মিল খেয়ে শিক্ষার্থীদের অসুস্থ হবার ঘটনা বিভিন্ন সময়ে ঘটে থাকে। আছে অনিয়ম-দুর্নীতি এবং অস্বচ্ছতার বিষয়টিও। তাই
এই মহতি ও ব্যয়বহুল কর্মসূচি যেন কিছু সংখ্যক মানুষের পকেট ভারী করার উপলক্ষ্য হয়ে না দাঁড়ায় সে দিকে বিশেষ নজর রাখতে হবে। স্কুলের পাশাপাশি দেশের মাদ্রাসাগুলোর এতিম ও হতদরিদ্র শিশুশিক্ষার্থীদের জন্যেও মিড ডে মিল কর্মসূচি চালু করা দরকার। আবার শিক্ষার্থীদের খাবার দিতে গিয়ে তা যেন শিক্ষার চেয়ে খাবারকেন্দ্রিক তৎপরতায় বেশি মনোযোগি হয়ে না পড়ে সে দিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট