চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

জলাবদ্ধতামুক্ত নগরী চাই

সাইমুম চৌধুরী

২৩ আগস্ট, ২০১৯ | ১:১২ পূর্বাহ্ণ

আ ষাঢ়ের শেষ সপ্তা হের মাঝা মাঝি থেকে চট্টগ্রাম সহ সারাদেশে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। প্রায় সারাদিন রাত ২৪ ঘণ্টা অঝোরে বর্ষণের ফলে নগরবাসীর স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়ে পড়ে। পত্রিকান্তে জানা যায়, ভারি বর্ষণের দিন ১০ জুলাই বুধবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় আবহাওয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী চট্টগ্রাম নগরীতে ১৪৫ দশমিক ৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এছাড়া এরপরের তিনদিন ও উল্লেখিত রেকর্ডের চেয়ে কিছুটা কম বৃষ্টি হয়েছে। এই ভারি বর্ষণের ফলে নগরীর অনেক এলাকার দোকান ও বাসাবাড়িতে পানি ঢুকে পড়ে। পানিতে ডুবে যায় সিডিএ এভিনিউ, ষোলশহর ২নং গেট এবং তার সংলগ্ন এলাকা, মুরাদপুর, শুলকবহর, জিইসি রোড ও তার সংলগ্ন এলাকা, প্রবর্তক মোড়, কাতালগঞ্জ, বাকলিয়া, বহদ্দারহাট মোড়, চকবাজার, বাকলিয়া, আগ্রাবাদ, হাজীপাড়া, আগ্রাবাদ টি এন্ড টি কলোনীসহ বিভিন্ন এলাকার সড়ক ও বাজার। গণ পরিবহনও সড়কে কমে যায়। এতে স্কুল ও কলেজগামী ছাত্রছাত্রী, চাকুরিজীবী ও নি¤œ আয়ের মানুষের ভোগান্তি কয়েকগুণ বেড়ে যায়। নিম্নাঞ্চলের বাসাবাড়িতে পানি উঠে যায়। এই দুর্ভোগের সাথে যুক্ত হয় যানবাহনের ভাড়া, তরকারিসহ নিত্যদিনের প্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্যের দাম।

এবার আসা যাক চট্টগ্রাম নগরবাসীকে প্রতি বর্ষায় জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তির লক্ষে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ কি করছে তা জেনে নিই। একটি জাতীয় পত্রিকার ১৬ জুলাই সংখ্যায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা যায় ২০১৭ সালের আগস্টে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) ৫ হাজার ৬১৬ কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন দেয় সরকার। দুর্ভাগ্যের বিষয় সরকারী অনুমোদনের পর প্রথম নয় মাস প্রকল্পের কাজ শুরু করতে পারেনি সিডিএ। পরে প্রকল্প বাস্তবায়নে সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের সঙ্গে সমঝোতা স্বাক্ষর করে তারা। গত বছরের ২৮ এপ্রিল উল্লেখিত প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। এছাড়া নগরের খালগুলোর প্রশস্ততা ও গভীরতা কতটুকু হবে, কী পরিমাণ মাটি উত্তোলন করা প্রয়োজন, প্রতিরোধ দেয়ালসহ প্রয়োজনীয় তথ্য ও নকশা প্রণয়নের জন্য দায়িত্ব দেয়া হয় সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্ট এ্যান্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিসেস নামের এক প্রতিষ্ঠানকে। পত্রিকান্তে জানা যায় প্রকল্পের কাজ শেষ করার মেয়াদ আছে আর মাত্র এক বছর। এখন পর্যন্ত কাজ হয়েছে মাত্র ১৭ শতাংশ। কাজের এই ধীরগতি সম্পর্কে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের দাবি, এখনো পরামর্শক প্রতিষ্ঠান থেকে কাজের নকশা পাওয়া যায় নি। তাছাড়া সিডিএ প্রকল্প এলাকা বুঝিয়ে দিতে বিলম্ব। পত্রিকান্তে জানা যায় চট্টগ্রাম নগরে খাল ৫৭টি। এর মধ্যে খনন করা হয়েছে মাত্র ১৬টি। বর্তমান প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত ৩৬টি। প্রকল্পে কাজ হলো ১) খালগুলোর দু পাশে ১৭৬ কিমি প্রতিরোধ দেয়াল নির্মাণ। এর মধ্যে দেয়াল নির্মিত হয়েছে মাত্র ৫ কিমি। ২) ১০ কিমি নালার মধ্যে তৈরী হয়েছে মাত্র ২ কিমি ৩) খালের পাশে ৮৫ কিমি সড়ক ৬টি কালভার্ট ও ৪৮টি সেতু নির্মাণের কথা থাকলেও একটিও হয় নি। উল্লেখ্য প্রকল্প শেষ হবে ২০২০ সালের জুনে।
কাজের এই ধীরগতি সত্যি দুঃখজনক। সরকারের দেয়া অর্থ বরাদ্দ থাকার পরও তা সময়মত খরচ করতে না পারা আরো বেশি দুঃখজনক। এতে সরকারের যেমন ভাবমূর্তি নষ্ট হয় তেমনি নগরবাসীর কষ্ট লাঘবে বিলম্ব ঘটে। আসুন আমরা সবাই স্ব স্ব দায়িত্ব পালনে যত্নবান হই, জলাবদ্ধতামুক্ত চট্টগ্রাম নগরী গড়ে তুলি।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট