চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

হেপাটাইটিস ভাইরাস ও জনসচেতনতা

অধ্যক্ষ ডা. রতন কুমার নাথ

২২ আগস্ট, ২০১৯ | ১:১৪ পূর্বাহ্ণ

লি ভার সিরো সিস ও লিভার ক্যান সারের জন্য প্রধানত দায়ী হেপাটাইটিস। রোগটি বিশ^ব্যাপী মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ার সামর্থ্য রাখে। ডব্লিওএইচ ও প্রকাশিত নুতন এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করে পাঁচটি ভাইরাসের মধ্যে ‘বি’ ভাইরাসটি সবচেয়ে সাধারণ। ভাইরাসটি আক্রান্ত মায়ের শরীর থেকে নবজাতক বা দুগ্ধপোষ্য শিশুর মধ্যে বাহিত হতে পারে। এছাড়া দুষিত সিরিঞ্জের মাধ্যমে মাদক গ্রহণকারীদের মাঝে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ার প্রবল আশংকা আছে।
‘ই’ ভাইরাসটি সাধারণত দূষিত পানি বা খাবারের মাধ্যমে ছড়িয়ে থাকে। ডঐঙ এর মতে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে হেপাটাইটিস ছড়িয়ে পড়ার জন্য ‘ই’ ভাইরাসটি প্রধানত দায়ী। উন্নত অর্থনীতির দেশগুলোতেও এর সংক্রমণ ক্রমেই বাড়ছে। ‘এ’ ও ‘বি’ ভাইরাসের কার্যকরি ভ্যাকসিন বাজারে পাওয়া যায়। এটি ‘ডি’র সংক্রমণেও ব্যবহার করা যায়। আর আই ভাইরাসের ভ্যাকসিন বাজারে পাওয়া যায়, আর আই ভাইরাসের ‘ভ্যাকসিন’ তৈরী হলে ওটা এখনও সহজলভ্য হয়ে উঠেনি। ‘সি’ ভাইরাস এর কোন ভ্যাকসিন এখনও তৈরি করা যায় নি। রোগটি প্রতিরোধে ও নিয়ন্ত্রণে এখনও অনেক কিছু করা বাকি বলে মনে করছে বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থা (ডঐঙ)।
হেপাটাইটিস-বি ভাইরাস ঘটিত এক বিপজ্জনক রোগ। এ রোগের লক্ষণ হলো দুর্বলতা, খিদে না হওয়া, বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া এবং দেহের ত্বক ও চোখ হলুদ বর্ণ ধারণ করা। তবে লিভার কোষের একটা ক্ষমতা বা গুণ সেটা হল মৃত কোষের জায়গায় নতুন কোষ জন্মায় Ñ তাই হেপাটাইটিস রোগে বিশ্রামের পরামর্শ দেয়া হয়। এ বিশ্রামের ফলে এ এবং ই ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হওয়া হেপাটাইটিস সম্পূর্ণরূপে সেরে যায় যদি খুব খারাপ অবস্থায় না পৌঁছে যায়। হেপাটাইটিস ‘বি’ এবং ‘সি’র রোগী ক্রনিক হেপাটাইটিসে পরিণত হয়। বয়স্ক যারা হেপাটাইটিস ‘বি’ তে আক্রান্ত হন তাদের ৯০ শতাংশ ব্যক্তি সুস্থ হয়ে ওঠেন যদি বিশ্রাম এবং ডাক্তারের পরামর্শ ঠিকমত মেনে চলেন, আর ১০ শতাংশ ক্ষেত্রে ভাইরাস শরীরে থেকে যায়। শিশুদের ক্ষেত্রে উল্টো ব্যাপার। যদিও হেপাটাইটিস ‘বি’ শিশুদের ক্ষেত্রে কম হয় কিন্তু যাদের হয় তাদের ১০ শতাংশ সুস্থ হয় এবং ৯০ শতাংশের ভাইরাস শরীরে থেকে যায়। ৬ মাসের পরেও যদি দেখা যায় ভাইরাস শরীরে আছে তবে তারা ক্রনিক হেপাটাইটিস রোগী বা বাহকে পরিণত হয়। এ ক্রনিক হেপাটাইটিস রোগীদের ভবিষ্যত জীবনে লিভার ক্যান্সার বা সিরোসিস হতে দেখা যায়।
এ রোগ এইডসের মতোই মূলত রক্তের ও যৌন সম্পর্কের মাধ্যমে সংক্রামিত হয়। এ রোগ ইনজেকশনের সিরিঞ্জ, নিডল, প্রামাণিক্ষের ক্ষুর, ব্লাড ট্রান্সফিউশনের মাধ্যমে সংক্রামিত ব্যক্তির শরীর থেকে আর ব্যক্তির শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। তা ছাড়া আক্রান্ত মায়ের থেকে গর্ভস্থ সন্তান প্লাসেন্টার মাধ্যমে শিশু এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে। এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা সব থেকে বেশী ডাক্তার, নার্স, প্যাথলজিকাল ল্যাবরেটরীর কর্মী, আক্রান্ত মায়ের গর্ভস্থ সন্তান, যে সব রোগীর নিয়মিত রক্ত নিতে হয় যেমন থ্যালাসেমিয়া, হিমোকিলিয়া, নিউকোমিয়া, ডায়ালাইসিসের রোগী, ড্রাগাসক্ত, যৌন ব্যাভিচারে লিপ্ত ও সমকামীদের মধ্যে। শিশুরা আক্রান্ত হলে ক্রনিক রোগে পৌঁছে যাওয়ার প্রবণতা বেশি দেখা যায়। এ রোগের আক্রমণ থেকে বাঁচার অন্যতম বিধি বিধান হল যৌন ব্যভিচারে লিপ্ত না হওয়া, দাড়ি কাটার জন্য আ লাদা আলাদা ব্লেড ব্যবহার করা। এ রোগের সংক্রমণ রক্ত থেকে সবচেয়ে বেশি হয় বলে ব্লাড ব্যাঙ্কগুলিতেও এখন হেপাটাইটিস বি-র পরীক্ষা বাধ্যতামূলক।

লেখক : সাবেক অধ্যক্ষ ডা. জাকির হোসেন হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ, চট্টগ্রাম।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট