চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

ডেঙ্গুর প্রকোপ ও দায়িত্বশীল কার্যক্রম

এটিএম মোসলেহ উদ্দিন জাবেদ

১৯ আগস্ট, ২০১৯ | ১২:৩১ পূর্বাহ্ণ

ডেঙ্গু ভাইরাসজনিত জ¦র। এ ভাইরাস এডিস মশার মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে মানুষের মধ্যে। রাজধানীসহ সারা দেশে ডেঙ্গু ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুসহ সব বয়সের মানুষ। তবে শিশুরাই বেশি আক্রান্ত হচ্ছে বলে জানা গেছে। অনেক শিশুর ডেঙ্গু জ¦রে মৃত্যুও হয়েছে। ডেঙ্গুতে শিশু-নারীসহ কয়েকজনের মৃত্যুর খবর পত্রিকায় এসেছে। বাংলাদেশে ২০০০ সালে প্রথম ডেঙ্গুর আবির্ভাব হয়েছিল। দেড়যুগের রেকর্ড ভেঙ্গে একদিনে হাসপাতালে ৬৮৩ জন ভর্তি হয়েছে। এছাড়াও বর্তমানে সারাদেশে বিভিন্ন হাসাপাতালে ডেঙ্গু জ¦রে আক্রান্ত ২ হাজার ৬৭১ জন বিভিন্ন হাসাপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তবে এজন্য আতঙ্কিত না হয়ে ডেঙ্গু প্রতিরোধে আমাদের সচেতনতা বাড়াতে হবে।

কেউ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে তার দ্রুত ও সঠিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। জ¦র হলে তাই অবহেলা না করে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত। তাছাড়া যেহেতু এবারের জ¦রে ফ্লুইড ঝরে যাচ্ছে শরীর থেকে তাই জ¦র হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রচুর ফ্লুইড জাতীয় খাবার খাওয়া উচিত।

রাজধানী ছাড়িয়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছে ডেঙ্গুর সংক্রমণ। বিভিন্ন জেলার হাসপাতালগুলোতে প্রতিদিনই বেড়ে চলেছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। চিকিৎসক ও রোগীর পরিবারের সদস্যরা বলছেন, আক্রান্ত রোগীর বেশির ভাগই সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকায় এসেছিলেন কিংবা ঢাকায় থাকেন। তারা ঢাকা থেকেই সংক্রমিত হয়েছেন বলে ধারণা করছেন।
মশক নিধন কার্যক্রমের স্থবিরতা, ভালোমানের মশক নিধন ঔষধ আমদানী না করা, যথাযথ পরিকল্পনার অভাব এবং মানুষের অসেচতনতাই ডেঙ্গুর প্রকোপ বৃদ্ধির জন্য প্রধানত দায়ী বলে বিশেষজ্ঞ মহলের ধারণা। মাঝেমধ্যে বৃষ্টিতে ডেঙ্গুর বাহক ডেঙ্গু নির্মূলের জন্য আমদানিকৃত ঔষধের কার্যকারিতা নিয়েও নেতিবাচক খবর পাওয়া যাচ্ছে। যারা এগুলো আমদানির সাথে জড়িত তাদের কাজের সঠিক তদারকি করতে হবে এবং তাদেরকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে।
বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, বিশ^জুড়ে যে উষ্ণতা বাড়ছে তাতে ২০৮০ সালের মধ্যে দেড় থেকে সাড়ে ৩ বিলিয়ন মানুষ ডেঙ্গু ঝুঁকিতে থাকবে। আমাদের দেশও এই ঝুঁকির মধ্যে আছে। তাই এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের পরামর্শ এডিস মশার প্রজননস্থল ধ্বংসের জন্য ব্যক্তি পর্যায় থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে সবার সচেতনতা বাড়ানোর। ডেঙ্গুর প্রকোপ কমাতে খুঁজে খুঁজে মশার উৎস ধ্বংস করতে হবে। মশার উৎস কমলে ডেঙ্গুর ঝুঁকিও অনেকাংশে কমে যাবে। দেশের সকল সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভা তথা স্থানীয় সরকার প্রশাসনকে এডিস মশা নিধন এবং এডিসের বংশ বিস্তার রোধের কার্যক্রম জোরদার করতে হবে। পাশাপাশি ডেঙ্গু প্রতিরোধে জনসচেতনতা সৃষ্টিতে কাজ করতে হবে। ডেঙ্গুর প্রাথমিক লক্ষণগুলো সম্পর্কে মানুষকে জানাতে হবে। ডেঙ্গু হলে করণীয় সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করে জেলা-উপজেলা সদরের সরকারি হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু শনাক্তকরণ ও চিকিৎসার বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তবেই সম্ভব ডেঙ্গু প্রতিরোধ করা।

কোন দেশে ডেঙ্গু একবার প্রবেশ করলে তা আর নির্মূল হয় না। এটাকে প্রতিরোধের সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নিতে হবে। সাধারণ মানুষকে সচেতন করার পাশাপাশি সংশ্লিষ্টদের মশা নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি নিয়ে কাজ চালিয়ে যেতে হবে। বলতে পারেন এটি একটি ধারাবাহিক কাজ।

কঠোর নজরদারির মধ্যে দিয়ে একে মোকাবিলা করতে হবে। এছাড়া ডেঙ্গু থেকে বাঁচতে ডেঙ্গু মশা নিধন করতে হবে। দায়িত্বশীল পর্যায়ে থেকে নেতিবাচক কথা ও কার্যক্রম বন্ধ করতে হবে, নতুবা যোগ্যদেরকে দায়িত্বশীল পর্যায়ে বসাতে হবে। সরকারের পাশাপাশি সাধারণ মানুষকেও এগিয়ে আসতে হবে।
ডেঙ্গু মশা থেকে বাঁচতে নিজ নিজ বাড়ির সামনে-পেছনে সব জায়গা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। ময়লা-আবর্জনা যত্রতত্র ফেলা যাবে না। মনে রাখতে হবে জীবন আপনার এবং আপনাকেই প্রথমে এগিয়ে আসতে হবে। কোনো সমস্যা মোকাবিলায় সরকারের পাশাপাশি সাধারণ মানুষ এগিয়ে না এলে সরকারের পক্ষে একা সমস্যা উত্তরণ কঠিন হবে। সরকার ও জনগণের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমাদের ডেঙ্গু সমস্যা দূর করতে হবে।

লেখক : সমাজ গবেষক, কলামিস্ট।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট