চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

রুখে দাঁড়াও মানব পাচার

মুহাম্মদ আবু নাসের

১৮ আগস্ট, ২০১৯ | ১২:৩৯ পূর্বাহ্ণ

এ দেশে মানব পাচার মামলায় বিচার পাওয়া বেশ দুরূহ বিষয় – এমন চিত্র তুলে ধরে দৈনিক পত্রিকার পাতায় সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। শুধু তাই নয়, বিচার চেয়ে উল্টো বিচারপ্রার্থীদের ওপর নেমে আসে বিপদ, তাদের ওপর চলে প্রাণনাশের হুমকি। মানব পাচার মামলায় দ্রুত শাস্তি না হওয়ার কারণে এই রকম পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
মানব পাচার একটি জঘন্য অপরাধ। এটি সমাজে তৈরি করে মানবিক সংকট। আর এই পাচারের কবলে পড়ে বেশিরভাগই নারী-শিশু। এই নারী শিশুদের চাকরি পাইয়ে সচ্ছল জীবনের স্বপ্ন দেখিয়ে ঠেলে দেয়া হয় অন্ধকার জগতের কালো অধ্যায়ে। তাদের জড়িয়ে দেয়া হয় পতিতাবৃত্তির ন্যায় অমানবিক পেশায়। এসব অপহৃত নারী-শিশুকে একের পর এক হাত বদলে বিক্রি করা হয়।
সাধারণত অজপাড়া গ্রামের গরিব ঘরের অসহায় যুবতী মেয়েদের পাচারকারী চক্র টার্গেট করে। চক্রের প্রথম স্তরের সদস্যরা আশপাশের পরিচিত কাউকে প্রলোভন দিয়ে ফাঁদ পাতে। কর্মহীন যুবতী মেয়েরা সহজ শিকারে পরিণত হয় এই চক্রের। পরিবার, আত্মীয়স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী সবার অজান্তে একদিন অপহরণকারী চক্রের কাউকে অবলম্বন ভেবে ওই সব নারী রাতের আঁধারে পাড়ি জমায় অজানার উদ্দেশ্যে। যখন বুঝতে পারে, তখন সব শেষ হয়ে যায়, কেটে যায় স্বচ্ছলভাবে বাঁচার রঙিন স্বপ্নের ঘোর। পাচারের শিকার এসব নারীর যাওয়ার পথ অনেক সময় সরল হলেও ফেরার পথ হয় জটিল। অনেকে জীবনের মূল্যবান অনেক কিছু হারিয়ে ‘সব শেষ হয়ে গেছে’ ভেবে ওই অন্ধকার পল্লী থেকে আর ফিরতে চায় না।
মানব পাচারের ক্ষেত্রে যা ও বা দু-চারটা মামলা হয়, তার বিচার পাওয়া হয়ে যায় দুরূহ। বছরের পর বছর আদালতে ঘুরতে হয় বাদীকে। এই দীর্ঘসূত্রিতার সুযোগে মামলার আসামীরা উল্টো বাদীকে ভয়ভীতি দেখাতে শুরু করে।
অধিকাংশ মামলায় এমন চিত্রই ফুঠে উঠে। এক সময় বাদীরা বিচার পাওয়ার প্রত্যাশা হারিয়ে নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়। এ দেশের আদালতগুলোর মামলা জটের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি। একটি বিচারের জন্য বিশ বছর ধরে আদালতে ঘুরছেন এমন বাদীও পাওয়া যায়।
এই যদি হয় দেশে মামলার অবস্থা, তাহলে বিচার প্রক্রিয়া এগোবে কি করে?
দীর্ঘ বিচার প্রক্রিয়ার ফলে আসামিরা অনেক সময় বাদী পক্ষের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে নানা রকম হুমকি ধমকি মূলক আচরণ করে। তারা অবজ্ঞাসূচক মন্তব্য করে বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে। যার ফলে বাদীপক্ষের মাঝে তৈরি হয় বিচার না পাওয়ার হতাশা। মানব পাচার একটি সামাজিক অপরাধ। এই অপরাধ রুখতে হলে বিচার ব্যবস্থার প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন অপরিহার্য। সমাজে ঘৃণ্য এই প্রথা নির্মূল করতে হলে রাষ্ট্রকে কঠোর হতে হবে জনস্বার্থেই।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট