চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

বিধ্বস্ত সড়ক মহাসড়ক ও জনদুর্ভোগ

কাজী আবু মো. খালেদ নিজাম

১৭ আগস্ট, ২০১৯ | ১২:৪৬ পূর্বাহ্ণ

গত ৩ আগ স্ট বহ দ্দার হাট ফ্লাইওভারে লরির ধাক্কায় মর্মান্তিকভাবে নিহত হন সিএনজি চালিত লেগুনা যাত্রী রাংগুনিয়া উপজেলার দ. নোয়াগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা আমেনা ইয়াসমিনসহ দু’জন। গুরুতর আহত হন একই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা, সরফভাটা নিবাসি ও আমার স্কুল জীবনের এক সময়ের প্রধান শিক্ষক জনাব শামসুল হুদা স্যারের মেয়ে জোবাইদা খানম, সহকারি শিক্ষিকা সোমা ঘোষ। এই লেখা যখন লিখছি (১০ আগস্ট) তখন জোবাইদা খানম মারা যান। তিনি বাচ্চাদের পরীক্ষার জন্য ছুটি নিয়েছিলেন দু’দিন। সেই ছুটি যে চির ছুটি হবে কে জানত ! অন্যজন এখনো মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন। এই ঘটনায় সংশ্লিষ্ট উপজেলার শিক্ষকদের মাঝে শোকের ছায়া নেমে আসে। পরিবারগুলোতে চলছে শোকের মাতম। সন্তানরা মা হারিয়ে বাকরুদ্ধ। এভাবে প্রতিনিয়ত সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাচ্ছে বহু মানুষ। আহত হচ্ছেন হাজারে হাজার।
গত ১২ জুন সংসদে মাননীয় সড়ক ও সেতুমন্ত্রী জনাব ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন, গত ১০ বছরে ২৫ হাজার মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন।
সড়ক-মহাসড়কের পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়াও নিরাপদ নয়। কখন চাকার নিচে চাপা পড়ে সে শংকায় থাকতে হয়। মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে দেশের সড়ক-মহাসড়কগুলো। প্রতিদিন অসংখ্য মানুষকে চাকরি, ব্যবসাসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ কাজে বাইরে বেরোতে হয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতে হয় শিক্ষার্থীদের। পথে দুর্ঘটনার ভয় থাকলেও একপ্রকার জানবাজি রেখেই কাজে যেতে হয়। কোন উপায় নেই। প্রতিবছরই দেশের বিভিন্ন জায়গায় সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান অনেক মানুষ। গত ঈদুল ফিতরের একসপ্তাহেই মারা গেছেন দেড় শতাধিকেরও অধিক মানুষ। কেবল মোটর সাইকেল দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ২২/২৩ জন। বলা যায়, সড়ক দুর্ঘটনা এদেশে একটি মানবসৃষ্ট মহাদুর্যোগ। যা প্রতিরোধ বা নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে কোন পক্ষ থেকেই কার্যকর কোন পদক্ষেপ নেই। বিভিন্ন বেসরকারি ও সামাজিক সংগঠন এ ‘দুর্যোগ’ থেকে মানুষকে রক্ষার জন্য জনসচেতনতামূলক কর্মসূচি পালন করে থাকে। কিন্তু তা তেমন কার্যকরী নয়। এ অবস্থায় সংশ্লিষ্ট সকলকে কার্যকর ও দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। বিশেষ করে গাড়ি চালকদের মাঝে সচেতনতা তৈরির পদক্ষেপ নিতে হবে। দায়ী চালকদের কঠোর শাস্তি দিতে হবে। নিষিদ্ধ করতে হবে গাড়ি চালানোর সময় চালকদের মোবাইলে কথাবার্তা বলা। মানুষ মারার পরও যখন দেখা যায় গাড়ি চালক সদর্পে ঘুরে বেড়ায় তখন ভয়টা বেড়ে যায়। আইনে পরিবর্তন এনে অপরাধীর সর্বোচ্চ শাস্তি ‘মৃত্যুদ-’র বিধান রাখা উচিত। রাস্তায় যেন কোন ধরনের লক্কর-ঝক্কর মার্কা কিংবা দুর্বল ইঞ্জিনের যান চলাচল করতে না পারে সে ব্যাপারে কঠোর হতে হবে। পাল্লা দিয়ে ‘ওভারটেকিং’ করা বন্ধ করতে হবে। চোখে ঘুম নিয়ে গাড়ি চালানো থেকে বিরত থাকতে ড্রাইভারদের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়ার সময় চালকদের বাস্তব অভিজ্ঞতাকেই আমলে নিতে হবে। কোন অযোগ্য ও অদক্ষ চালক যেন লাইসেন্স না পায় তা নিশ্চিত করতে হবে। দেশের বিভিন্ন সড়ক, মহাসড়কের পাশাপাশি স্টেশনগুলোকেও প্রশস্ত করার উদ্যোগ নিতে হবে। এবারের আষাঢ়ের বৃষ্টি ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক মহাসড়কগুলো সংস্কারের উদ্যোগ নিতে হবে। একজন চালক কত মানুষের প্রাণ হাতে নিয়ে রাস্তায় গাড়ি চালান। সেই মানুষগুলোর প্রতি চালকদের দরদ থাকা উচিত। যেভাবেই হোক একজন চালককে মানুষের প্রাণ বাঁচাতে সম্ভব সবকিছুই করতে হবে। ‘সময়ের চেয়ে জীবনের মূল্য বেশি’- একথা চালকদের মাথায় রাখতে হবে। দুর্ঘটনায় মৃত্যুর পাশাপাশি অসংখ্য মানুষ সারাজীবনের জন্য পঙ্গুত্ব বরণ করছে। সরকারি, বেসরকারি সংস্থা এবং সংশ্লিষ্ট যানবাহন কর্তৃপক্ষকে নিহত ও আহত হওয়া পরিবারগুলোকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। করতে হবে সব ধরনের সাহায্য-সহযোগিতা। আমরা সড়ক দুর্ঘটনামুক্ত একটি সুন্দর বাংলাদেশ চাই। সড়কে এই মৃত্যুর মিছিল কবে থামবে? আর কত প্রাণ ঝরবে? মৃত্যুফাঁদে পরিণত হওয়া সড়কগুলোকে যেভাবেই হোক নিরাপদ করতে হবে সকলের জন্য।

লেখক : শিক্ষক ও প্রাবন্ধিক

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট