চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

বঙ্গবন্ধু ও আধুনিক বাংলাদেশ

সঞ্জয় চৌধুরী

১৫ আগস্ট, ২০১৯ | ১২:৪৭ পূর্বাহ্ণ

হাজারো বছরের ইতিহাসে কালের পরিক্রমায় বাঙালির ভাগ্যাকাশে এক উজ্জ্বল জ্যোতিষ্কের আবির্ভাব ঘটেছিল, যে জ্যোতিষ্কের দ্যুতিতে বাঙালি জাতি পাকিস্তান থেকে একটি নতুন ভূখ- লাভ করে স্বীয় অধিকার অর্জনের মাধ্যমে বিশ্বের মানচিত্রে স্থান করে দিয়েছে একটি দেশ বাংলাদেশ। আর যে জ্যোতিষ্কের দ্যুতিতে আমরা এই বাংলাদেশ পেয়েছি তিনি আর কেউ নন, বাঙালির হাজারো বছরের শ্রেষ্ঠ সন্তান আমাদের গর্বের ধন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান। তিনি এখন শুধু বাঙালির বঙ্গবন্ধু নন, বিশ্বের নির্যাতিত ও নিপীড়িত মানুষের শোষণ বঞ্চনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদকারী এক উজ্জ্বল আলোকবর্তিকা ও অনুপ্রেরণার উৎস, যাঁর থেকে নব প্রেরণায় নতুনভাবে উজ্জীবিত হয়ে শোষিত মানুষ নিজের হৃত অধিকার ফিরে পেয়েছে। বঙ্গবন্ধু দৃপ্তকণ্ঠে বলতেন, ‘এ বিশ্বের মানুষ দুই শিবিরে বিভক্ত’। কেউ শোষকের পক্ষে, আর কেউ শোষিতের পক্ষে। এক্ষেত্রে আমার অবস্থান হবে সর্বদা শোষিতের পক্ষে। তাঁর ৭ই মার্চের ভাষণ ছিল বিশ্বের সর্ববৃহৎ সংগ্রামী গণসমাবেশ। স্বাধীনতাকামী বাঁধভাঙ্গা ঢলের মাঝখানে বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলনের মহানায়ক জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সেই দিন ঘোষণা দেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম’। এই ভাষণের রূপরেখার আলোকে, অনেক ত্যাগ তিতীক্ষার বিনিময়ে বাঙালি শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানের পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হয়ে মুক্ত বিহঙ্গের মত জীবন যাপন করতে লাগল।
১৯৭২ সালের ১০ই জানুয়ারী তিনি স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে তাঁর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশে ফিরে এলেন। যুদ্ধ বিধ্বস্ত একটি দেশ। খাদ্য, বস্ত্র, অর্থ কিছুই নেই। চারিদিকে সীমাহীন অভাব ও অপরিসীম চাহিদার মধ্যে খালি হাতে তিনি বাংলাদেশের হাল ধরেন। বাংলার গরিব-দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফুটাবেন, সোনার বাংলা গড়বেন এটাই ছিল তাঁর জীবনের ব্রত। তিনি সবসময় বলতেন, এ স্বাধীনতা আমার ব্যর্থ হবে যদি আমার বাংলার মানুষ পেট ভরে ভাত না খায়।
এ স্বাধীনতা আমার পূর্ণ হবে না, যদি বাংলার মা-বোনেরা কাপড় না পায়। এ স্বাধীনতা অপূর্ণ হবে যদি, এদেশের যুবকশ্রেণি কাজ না পায়। এ কারণে তিনি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত অর্থনৈতিক সমতা প্রতিষ্ঠার লড়াই করে গেছেন। তিনি ছিলেন দেশপ্রেমের মূর্ত প্রতীক এবং আমাদের চেতনার অগ্নিমশাল। তাঁর আদর্শ চির অম্লান।
আমি মনে করি সেই আদর্শকে বুকে ধারন করে, তাঁরই স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে সবার দৃঢ় শপথ গ্রহণই হবে আজ ৪৪তম মৃত্যুবার্ষিকীতে তাঁর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানানো।
তাঁর সংগ্রামী জীবন থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সমস্ত জাতি একযোগে যার যার অবস্থান থেকে দেশের জন্য কাজ করতে পারলেই প্রতিষ্ঠিত হবে বঙ্গবন্ধুর ক্ষুধা ও দারিদ্র্য মুক্ত বাংলাদেশ যেমনটি তিনি চেয়েছিলেন।
বর্তমানে তাঁরই সুযোগ্য কন্যা বাংলাদেশের তিনবারের সফল প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন ও জননেত্রী শেখ হাসিনার উন্নত চিন্তা, জনহিতৈষী বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ ও স্থিতিশীল অর্থনীতির সচল চাকায় জোড় কদমে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন এদেশকে উন্নত বিভিন্ন রাষ্ট্রের কাতারে। অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি দারিদ্র্য নিরসন ও সামাজিক উন্নয়নেও আমাদের অর্জন এখন লক্ষ্যণীয়। অর্থনীতির সুদৃঢ় ভিত্তিতে বিদেশী অর্থায়ন ছাড়া এখন পদ্মা সেতুর বাস্তবায়ন দৃশ্যমান। ইতিমধ্যেই আমাদের দেশ নি¤œ মধ্যম আয়ের দেশে পরিচয় পেয়ে গেছে। এখন আমরা দ্রুত এগুচ্ছি উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশ হওয়ার পথে।
যদি সবার সদিচ্ছা থাকে তবে অচিরেই আমরা আমাদের অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছতে সক্ষম হব। কোন ষড়যন্ত্রই আমাদের এ অগ্রযাত্রাকে স্তব্ধ করতে পারবে না। পরিশেষে আজ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৪ তম মৃত্যুবার্ষিকীতে তাঁর আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে সবাইকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এক ও অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছার সক্ষমতা অর্জনে সচেষ্ট হবার বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি। এ সক্ষমতা অর্জনই হবে আমাদের একমাত্র মুক্তির পথ, যে পথের সন্ধান পেয়ে বাংলাদেশ একদিন বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে আমি সেই দিনের অপেক্ষায় রইলাম।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট