চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নিয়ন্ত্রণ আবশ্যক নয় কি

ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী

২২ সেপ্টেম্বর, ২০২২ | ৮:৩৮ অপরাহ্ণ

এটি প্রতিষ্ঠিত সত্য যে সমাকালীন বিশ্বে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম অতিশয় জনপ্রিয়তা পেয়েছে। একদিকে এর অত্যধিক ব্যবহারিক গুরুত্ব, অন্যদিকে অপব্যবহারের মাত্রা বিভ্রান্তির বেড়াজালে পুরো সমাজে নির্মাণ করছে কদর্য সংশয়-আশঙ্কার অনাকাঙ্ক্ষিত প্রাচীর। অপসংস্কৃতির মোড়কে রাজনীতি-ধর্ম-অর্থনীতি-সামগ্রিক সামাজিক প্রপঞ্চসমূহের মিথ্যা-ভিত্তিহীন প্রচারণা সাম্প্রদায়িকতা-কুপমন্ডুকতা-অসহিষ্ণুতা-সহিংসতা-বিরোধ-বিচ্ছেদ জীবনপ্রবাহের সাবলীল গতিময়তায় প্রচ- অন্তরায় হয়ে দাঁড়াচ্ছে। কথিত অবসরপ্রাপ্ত সামরিক-বেসামরিক আমলা, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, গণমাধ্যমকর্মীসহ পেশাজীবী-বুদ্ধিজীবী-সুশীলনামধারী ব্যক্তিত্বের পরিচয়ে নানামুখী নেতিবাচক বক্তব্য পরিবেশন অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করছে। ফলশ্রুতিতে সামাজিক অসঙ্গতি গণমানুষের জীবনে অসহনীয় দুর্ভোগ দীর্ঘায়িত করছে। আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির আচ্ছাদনে দূরভিসন্ধিমূলক তরুণসমাজের সৃজন-মনন-মানবিক-নৈতিক চরিত্রের বিচ্যুতি ভবিষ্যত স্বাভাবিক সমাজ বিনির্মাণে কতটুকু ভূমিকা রাখবে তার গভীর বিশ্লেষণ অতীব জরুরী।

সমৃদ্ধ পাঠ্যপুস্তক-বিশ্বখ্যাত ব্যক্তিমানসের জীবনচরিত-জ্ঞান ও যুক্তিনির্ভর পঠন-পাঠন থেকে দূরে সরিয়ে সামাজিক যোগাযোগ নির্ভরতা যে ভয়াবহ বাস্তবতার ভিন্নরূপ পরিগ্রহ করছে তা অনুধাবনে ব্যর্থ হলে সুন্দর ধরিত্রী কঠিন অন্ধকারের অতল গহ্বরে নিপতিত হবে এ সম্পর্কে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই। ২০১০ সালে বুকার পুরষ্কার বিজয়ী খ্যাতিমান ব্রিটিশ লেখক হাওয়ার্ড জ্যাকবসন আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছিলেন, ‘২০ বছরের মধ্যে শিশুদের মূর্খ বানাবে ফেসবুক-টুইটার। ফেসবুক ও টুইটারসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের আধিপত্যের কারণে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের শিশুরা অশিক্ষিত হবে। স্মার্টফোনের ব্যবহার এবং প্রচুর পরিমাণে ফেসবুক, টুইটারসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারে নাটকীয়ভাবে তরুণ প্রজন্মের যোগাযোগের পদ্ধতি বদলে যাচ্ছে। আর এসবের কারণে তারা হারাচ্ছে বই পড়ার অভ্যাসও।’ অপরাধবিজ্ঞানী-বিশেষজ্ঞদের মতে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইদানীং আমাদের নিত্যদিনের সঙ্গী হয়ে উঠেছে। এই মাধ্যম আমাদের মানবিক গুনাবলিকে প্রভাবিত করছে।

মানি লন্ডারিং, আক্রমণাত্মক গেমস, ধর্ষণের মতো অপরাধে জড়িয়ে যাচ্ছে অনেকে। মানসিকভাবে অনেকেই আছে আনস্টেবল অবস্থায়। এর মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে ক্রমশ রাগ-ক্রোধ-অবসাদ-বিষন্নতা-একাকিত্ব-হতাশা-হৃদরোগসহ বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অপব্যবহার নিয়ে শঙ্কিত স্বয়ং ফেসবুকের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও মার্ক জাকারবার্গ এর ভাষ্যমতে, ‘সোশ্যাল মিডিয়া সময় নষ্টের জন্য নয়। এটি সত্যিকারে উপকারে আসতে পারে, যদি এর সঠিক ব্যবহার করা হয়। কিন্তু আপনি যদি শুধু এখানে বসে থাকেন আর যা দেখানো হবে, তাই গলাধঃকরণ করেন, তাহলে তো হবে না।’

সাম্প্রতিক সময়ে বিদেশে অবস্থান করে কথিত কিছু লোক দেশে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে সাইবার যুদ্ধের সূচনা করেছে। জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সর্ম্পকিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে উপস্থাপিত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন মতে, ইতিবাচক অবদান রাখার পাশাপাশি প্রবাসী ও অভিবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে অনেকেই বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে অপ্রচারণায় লিপ্ত রয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে এদের সরব উপস্থিতি ও দেশবিরোধী আপত্তিকর মন্তব্য-বক্তব্য প্রচারের কারণে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। তারা যেসব দেশে অবস্থান করছে, সেসব দেশের নানা আইনি জটিলতার কারণে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া অনেক সময় দুরূহ হয়ে পড়ে । যারা এসব ঘৃণ্য কাজে নিয়োজিত-তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসীদের তালিকা ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট বাংলাদেশ মিশনগুলোতে পাঠানো হয়েছে। ঐসব দেশের আইনের আওতায় এনে তাদের বিচারের মুখোমুখী করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ দূতাবাসগুলো থেকে সংশ্লিষ্ট সরকারগুলোর কাছে আবেদন জানানো হবে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, রাষ্ট্র-সরকারবিরোধী এই ব্যক্তিদের কার্যক্রম ও সামাজিক যোগযোগমাধ্যমে তাদের পোস্টগুলো নিয়মিত নজরদারি করা এবং তা চিহ্নিত করে সংশ্লিষ্ট দেশের কর্তৃপক্ষকে জানানোর জন্য রাষ্টদূতদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ১৮ জানুয়ারি ২০২২ অনুষ্ঠিত ডিসি সম্মেলন উদ্বোধনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা দেশের সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিতকল্পে জেলা প্রশাসকদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম অপব্যবহার, গুজব ও ধর্মীয় উগ্রবাদ রোধে কঠোর হওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত সূত্রমতে, বিশ্বে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের ৭০ শতাংশ মানুষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সংযুক্ত যার প্রায় ৯০ শতাংশই তরুণ। বর্তমানে বাংলাদেশে প্রচলিত ফেসবুক, ইউটিউব, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম, লিঙ্কডিন, স্কাইপ ইত্যাদি জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে সর্বাধিক জনপ্রিয় ফেসবুক। বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের মধ্যে ৮০ শতাংশের রয়েছে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট এবং এর একটি বিশাল অংশ কিশোর-কিশোরী। বিভিন্ন দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থার জরিপের ফলাফল অনুসারে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অপব্যবহারের কারণে উল্লেখযোগ্য তরুণ ও তরুণী বিপথগামী-মানসিক সমস্যায় জর্জরিত হচ্ছে-পড়াশোনায় মনোযোগ হারাচ্ছে-খেলাধুলা ছেড়ে দিয়ে রাতদিন ইলেকট্রনিক ডিভাইস নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছে। চরম স্খলন হচ্ছে শিক্ষা-নীতি-নৈতিকতার। ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দিচ্ছে সংঘাত-সহিংসতা-উগ্রবাদ। ভুয়া তথ্য সরবরাহ-ঘৃণা-বিদ্বেষ, যৌনতা ও অশ্লীলতা-চরিত্রহনন-মুদ্রা ও মানবপাচার-জুয়া-সাইবার সহিংসতাসহ নানামাত্রিক অপরাধের মাধ্যম হিসেবে পরিগণিত হয়েছে এই সামাজিক যোগাযোগ।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপরাধের ক্রমবর্ধনশীলতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের আইন-চাপ প্রয়োগের ফলে ইউটিউব ও ফেসবুকের মতো অনেক সাইট তাদের নিজস্ব নিয়মে অগ্রহণযোগ্য ও ক্ষতিকর বিষয়বস্তু দ্রুত মুছে ফেলাসহ প্রথম প্রকাশ হওয়া প্রতিরোধের পদক্ষেপ নিয়েছে। ইউটিউব ও ফেসবুক কর্তৃপক্ষ নিয়মিত অনুপযুক্ত বিষয়বস্তু অপসারণের তথ্য প্রকাশ করছে। গুগল এর মালিকানাধীন ভিডিও শেয়ারিং সাইটের তথ্যমতে, তারা ২০১৯ সালের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে ৮৮ লাখ ভিডিও, ৩৩ লাখ ক্ষতিকারক চ্যানেল ও ৫১ কোটি ৭০ লাখ অগ্রহণযোগ্য মন্তব্য অপসারণ করেছে। ফেসবুক কর্তৃপক্ষের দাবী তারা উল্লেখ্য সময়ে ৩ কোটি ৩০ লাখ ক্ষতিকারক বিষয় সরিয়ে নিলেও অগ্রহণযোগ্য ও ক্ষতিকর বিষয়বস্তুর আধিক্যের কারণে শুধু কোম্পানির একার পক্ষে এটি ঠেকানো সম্ভব হচ্ছে না।

নিয়ন্ত্রক কোম্পানিগুলোর শত প্রচেষ্টা সত্ত্বেও এটি দিন দিন ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০২১ সালে শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ফিলিপাইনের সাংবাদিক মারিয়ে রেসা ফেসবুকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, ‘ঘৃণা ও ভুয়া তথ্য ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে ব্যর্থ হয়েছে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ। এর মধ্য দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমটি গণতন্ত্রের জন্য হুমকি তৈরি করেছে। প্রতিষ্ঠানটির অ্যালগরিদম ভুয়া তথ্য ও ঘৃণা ছড়ানো ঠেকানোকে অগ্রাধিকার দিতে সফল হয়নি। এমনকি তথ্য প্রকাশ ও সাংবাদিকতার পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ করে ফেসবুক।’ বিশেষজ্ঞদের ভাষ্যমতে ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান-সরকার-রাষ্ট্রবিরোধী কর্মতৎপরতা বন্ধে কঠোর আইনের পাশাপাশি দেশে ইউটিউব, ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর অফিস স্থাপনের প্রয়োজনীয়তা অত্যধিক। 

কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘটিত সহিংস ঘটনার পর ওটিটি ফ্ল্যাটফর্ম এবং সামাজিক মাধ্যমে শৃঙ্খলার বিষয়ে রিট মামলার প্রেক্ষিতে মহামান্য হাইকোর্ট বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনকে (বিটিআরসি) একটি নীতিমালা তৈরির নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। উচ্চ আদালতের নির্দেশ মোতাবেক বিটিআরসি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, ডিজিটাল মাধ্যম ও অনলাইন প্ল্যাটফর্মের (ওটিটি) জন্য ‘দ্য বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশন ফর ডিজিটাল, সোশ্যাল মিডিয়া অ্যান্ড ওটিটি প্ল্যাটফর্মস’ নামের খসড়া নীতিমালা তৈরি করে। নীতিমালাটি জন মতামতের জন্য চলতি বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি বিটিআরসির ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। খসড়া নীতিমালা অনুযায়ী,  ‘ফেসবুক ও ইউটিউবসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে কোনও মন্তব্য এবং খবর প্রচার বা পোস্ট করলে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।’ নীতিমালার অধিকতর উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে মুক্তির মহানায়ক স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হেয় করে মন্তব্য বা কটুক্তি, কোন ধর্মের অনুসারীদের আহত করে বা আঘাত দেয় এমন মন্তব্য বা বিষয় প্রচার যাতে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট না করে, বিনোদনের ওটিটি প্লাটফর্মগুলোতে অশ্লীল-অনৈতিক যেকোনও কন্টেন্ট প্রচার নিয়ন্ত্রণে এই আইন কায়কর হবে।

এছাড়াও বাংলাদেশে পরিচালিত প্রতিটি ওয়েবসাইট, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও অনলাইন বিনোদনমূলক প্ল্যাটফর্মগুলোর জন্য বিটিআরসি থেকে কিছু শর্তসাপেক্ষে নিবন্ধ নেওয়ার প্রস্তাবও রাখা হয়েছে। শর্তগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো, দেশে পরিচালিত যেকোনও ওয়েবসাইট ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অফিস বাংলাদেশে থাকতে হবে। সংবাদ-কিউরেটেড কন্টেন্ট-ফিল্ম-ওয়েব সিরিজ রয়েছে এমন ওয়েবসাইটের জন্য তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের এনওসি বাধ্যতামূলক। কোনও ব্যক্তি ফৌজদারি অপরাধের দায়ে দুই বছর দন্ডিত হলে এবং কারামুক্তির পর ৫ বছর অতিবাহিত না হলে তিনি কোনও নিবন্ধনের জন্য আবেদন করতে পারবেন না। কোনও ব্যক্তি ঋণের দায়ে দেউলিয়া অথবা ব্যাংক কর্তৃক খেলাপী ঘোষিত হলেও নিবন্ধন পাওয়ার অযোগ্য বলে বিবেচিত হবেন।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশও আইনি কাঠামোর ভিত্তিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। গণমাধ্যমের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায় জার্মান সরকার ২০১৮ সালে ঘবঃুউএ আইন প্রণয়নের মাধ্যমে সোশ্যাল মিড়িয়া কোম্পানিকে তাদের সাইটে প্রকাশিত আপত্তিকর বিষয়বস্তু সম্পর্কে অভিযোগ পর্যালোচনা করার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা-বিষয়বস্তু প্রকাশের ২৪ ঘন্টার মধ্যে তা অপসারণ-কোম্পানিগুলোর কাজের বিবরণ সম্পর্কে প্রতি ছয় মাস অন্তর আপডেট প্রতিবেদন প্রকাশ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ভারতে ২০২১ সালে প্রণীত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নিয়ন্ত্রণ নীতিমালা মতে ফেসবুক-টুইটার-হোয়াটসঅ্যাপ ও অন্যান্য যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর কর্তৃপক্ষকে ভারতীয় সরকার কোনও ব্যবহারকারীর পোস্ট মুছে দেওয়া এবং ব্যবহারকারীর নাম-পরিচয় প্রকাশের অনুরোধ করতে পারবে। ঘৃণ্য ও হিংসাত্মক বিষয়বস্তু প্রকাশের কারণে সংস্থাগুলোর বৈশ্বিক টার্নওভারের ১০ শতাংশ পর্যন্ত আর্থিক দন্ড ও প্রযুক্তি নির্বাহীদের জন্য তিন বছরের কারাদন্ডের বিধান রেখে আস্ট্রেলিয়ায় ২০১৯ সালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নিয়ন্ত্রণ আইন করা হয়। 

২০২১ সালের নভেম্বরে কার্যকর আইনে রাশিয়া জরুরী অবস্থায় বিশ্বব্যাপী ওয়েবে সংযোগ বন্ধ করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে এবং রাশিয়ার ডাটা আইনে সোশ্যাল মিডিয়া সংস্থাগুলো কেবল দেশের অভ্যন্তরীণ সার্ভারগুলোতে রাশিয়ানদের সম্পর্কে ডাটা সংরক্ষণ করতে পারবে। শিশু পর্নোগ্রাফি, হেইট স্পিচ এবং বিনা সম্মতীতে কারো অন্তরঙ্গ ছবি প্রকাশ করাকে অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করে কানাডা সরকার কর্তৃক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নিয়ন্ত্রণ আইনে পুলিশ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্ম এবং বক্তব্য পোস্টকারীর বিরুদ্ধে সরাসরি ব্যবস্থা নিতে পারবে। চীনে সাইবারস্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন নিয়মিতভাবে বিভিন্ন ওয়েবসাইট বন্ধ ও জুয়ো খেলা সহ ক্ষতিকারক নানা মোবাইল অ্যাপ অপসারণ করে থাকে। দেশটিতে থাকা কয়েক হাজার সাইবার পুলিশের কাজ হচ্ছে সামাজিক মিডিয়া ফ্ল্যাটফর্ম এবং সংবেদনশীল স্ক্রিন বার্তাগুলোকে নিয়মিত পর্যবেক্ষন করে থাকে।

মূলত প্রত্যেক পবিত্র ধর্মের ধর্মগ্রন্থ অনুসারে এতদিনকার প্রচলিত রীতি-নীতি-সমাজআদর্শ-সত্য-সুন্দর-ক্যল্যাণ আনন্দের অনুষঙ্গ ভিত্তিক সংস্কৃতি-কৃষ্টি-ঐতিহ্যের মূলে কুঠারাঘাত করে বিকৃত চিন্তাচেতনা-ধ্যান-ধারণার অনুপ্রবেশ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে নিগূঢ় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখী করছে। মিথ্যাচার-প্রতারণা-জালিয়াতি-অসংলগ্ন কর্মযজ্ঞের সমীকরণে প্রজন্ম কী পেতে যাচ্ছে তা ভেবে দেখার এখনই উপযুক্ত সময়। মাদকাসক্ত কতিপয় হিতাহিত জ্ঞানশূন্য ব্যক্তির মতো সমাজ বিধ্বংসী যেকোনও ধরনের আচরণ অবশ্যই পরিত্যাজ্য। কালক্ষেপন না করে বাংলাদেশসহ পৃথিবী নামক এই গ্রহের যৌক্তিক ভবিষ্যৎ ভাবনা ও দৃশ্যমান পদক্ষেপ গ্রহণে কর্মকৌশল প্রণয়ন উদ্ভূত সমস্যার পন্থারোধ-নিয়ন্ত্রণের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা বাস্তবায়ন সময়ের জোরালো দাবী।

লেখক: প্রফেসর ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী, শিক্ষাবিদ, সাবেক উপাচার্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

পূর্বকোণ/সাফা

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট