চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

ডেঙ্গু : সচেতনতাই বাঁচার উপায়

রাশেদ আহমেদ

৩ আগস্ট, ২০১৯ | ১:১৭ পূর্বাহ্ণ

বর্তমান ডেঙ্গু আতঙ্কে কাঁপছে দেশ। প্রতিদিন বাড়ছে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ পর্যন্ত কম-বেশি ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে। ঢাকা থেকে ছড়িয়ে পড়ছে সমগ্র দেশে। বলতে গেলে এক ধরনের মহামারি আকার ধারন করছে ডেঙ্গুজ্বর। ইতোমধ্যে ৬০ টির অধিক জেলায় শনাক্ত হয়েছে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত রোগী। শুধুমাত্র জুলাই মাসে ভর্তি হয়েছে ১১ হাজারের অধিক। অর্থাৎ ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা হু হু করে করে রাড়ছে। যারা এখন চিকিৎসা নিচ্ছে সরকারিসহ বিভিন্ন হাসপাতালে। সেইসাথে বাড়ছে মৃত্যুর ঝুঁকি রোগীর সংখ্যাও। যা দিন দিন প্রকট আকার ধারণ করছে।
ডেঙ্গু জ্বরে সম্পর্কে জেনেই আঁতকে ওঠছে গ্রামের সাধারণ মানুষ। না জানি কতই কঠিন রোগ! তাদের মধ্যে এক ধরনের ভয় কাজ করছে। ডেঙ্গুজ্বর মূলত এডিস মশার কামড়ে হয়ে থাকে। ডেঙ্গু একটি ভাইরাসজনিত সংক্রমণ। ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হলে যে লক্ষণগুলো দেখা দিতে হতে পারে তা হচ্ছে। প্রথমে, ১০১ থেকে ১০৪ ডিগ্রি পর্যন্ত জ্বর এবং তা কয়েকদিন স্থায়ী হয়। দ্বিতীয়ত : প্রচ- মাথা ব্যাথা, তৃতীয়ত: চোখের পিছনে ব্যাথা, চতুর্থত: পেশি মেরুদ- হাড়ে ব্যাথা, পঞ্চমত : খাবারে রুচি কমে যায় ষষ্ঠত : বমি ও হালকা পায়খানা হতে পারে, সপ্তমত: শরীর খুব দুর্বল লাগবে, অষ্টমত: দাঁতের মাড়ি দিয়ে রক্তক্ষরণ হতে পারে।
উপরোক্ত চিহ্নগুলো দেখা দিলে বসে না থেকে চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিৎ। অন্যথায় অবহেলা করে বসে থাকলে ক্রমান্বয়ে অবনতি ঘটবে, এমনি রোগীর মৃত্যু ঘটতে পারে। অবশ্যই মনে রাখতে হবে, ডেঙ্গুজ্বর কোন ভয়াবহ রোগ নয় এবং এর কোন সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীকে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চলতে হবে। জ্বরের প্রভাব কমানোর জন্য নাপা বা প্যারাসিটামল ট্যাবলেট খাওয়া যেতে পারে। অবশ্যই ব্যাথানাশক ঔষধ এড়িয়ে চলতে হবে। এসময় প্রচুর পরিমাণ স্যালাইন, ডাবের পানি, লেবুর শরবত খেতে হবে। যাতে পানির শূন্যতা না দেখা দেয় এবং সম্পূর্ণ বিশ্রামে থাকতে হবে। সেইসাথে রোগীকে মশারির নিচে ঘুমাতে হবে।
ডেঙ্গুজ্বর সাধারণ আগস্ট থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত বেশি হয়। কারণ গ্রীষ্মের এ সময় এডিস মশা বেশি বিস্তার লাভ করে। এই মশা সকালবেলা এবং সন্ধ্যার পূর্বে বেশি লক্ষ্য করা যায়। আর এসময় সজাগ থাকতে হবে। এডিস মশা সাধারণত অল্প পানি, ময়লা আবর্জনায়, নালা-নর্দমা, স্যাঁতসেতে ও অন্ধকারাছন্ন ঝোপঝাড় জায়গায় বংশ বিস্তার করে রাখে। তাদের বংশ বিস্তার রোধে অবশ্যই এ জায়গাগুলো পরিষ্কার রাখতে হবে।
ডেঙ্গুজ্বরের প্রভাব কমাতে বেশ কিছু পদক্ষেপ কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, সাধারণ জনগণের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি করা। সরকারি বিভিন্ন সংস্থার পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থাকেও এগিয়ে আসতে হবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ডেঙ্গু সম্পর্কে সচেতনতামূলক পোস্ট বা শেয়ার করা, বিভিন্ন স্কুল, কলেজ প্রতিষ্ঠান গুলোতে ডেঙ্গুজ্বর রোধে সচেতনতামূলক কর্মসূচি পালন করা, হাটবাজারে লিফলেট বিতরণ করা, গ্রাম মহল্লায় মাইকিং করে ডেঙ্গু সম্পর্কে জানিয়ে দেওয়া, প্রয়োজনে যুবকদের নিয়ে কমিটি করা যেতে পারে। এসব ডেঙ্গু রোধে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব এটাই প্রথম তা নয়, ২০০০ সালে দেশে প্রথম ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা যায়। সরকারের হিসাব মতে, সেই বছরে ৫ হাজার ৫৫১ জন ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়েছিল। আর মারা গিয়েছিল ৯৩ জন। তারপর থেকে ডেঙ্গর প্রভাব কমতে থাকে।
আবারও ২০১৯ সালে এসে ডেঙ্গুজ্বরের প্রতাপ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এ যাবত সরকারের হিসাব মতে, ১৮ জন ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। তবে বেসরকারি হিসাব মতে, মৃত্যুর সংখ্যা ৫০ ছাড়িয়েছে। সুতরাং ডেঙ্গুজ্বর থেকে বাঁচতে সমাজে ব্যাপকভাবে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। আর ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হলেও আতঙ্ক হওয়ার কিছু নেই, চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিলে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত রোগীকে বড় ধরনের হুমকির মুখে পড়তে হবে না। মনে রাখতে হবে সতর্কতা ও সচেতনতাই ডেঙ্গু থেকে বাঁচার প্রধান উপায়।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট