চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

ডেঙ্গু : দরকার সতর্কতা ও সচেতনতা

অধ্যক্ষ ডা. রতন কুমার নাথ

১ আগস্ট, ২০১৯ | ১:০৩ পূর্বাহ্ণ

এখন ডেঙ্গু ভাই রাস সর্বত্র বেশ সরস আলো চনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। ডেঙ্গু ভাইরাস ফ্রেভিভাইরাস গ্রুপের সদস্য এক ধরনের আর. এন. ভাইরাস। এই ভাইরাস সাধারণত দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় অধিকমাত্রায় সংক্রমণ হতে দেখা যায় এবং বাচ্চারাই মূলত এ রোগে বেশী আক্রান্ত হয়ে থাকে। এ রোগের বাহক এডিস এজিপটাই ও এডিস এলবোপিকটাস এই দুই প্রজাতির স্ত্রী মশা বাংলাদেশে ডেঙ্গু রোগ ছড়ায়। এই মশা রাতের বেলা মানুষকে কামড়ায় না বরং দিনের বেলাতেই ডেঙ্গু বাহিত মশা মানুষকে কামড়ায়। তাই যাদের দিনের বেলায় ঘুমানোর অভ্যাস আছে তাদের অতি অবশ্যই মশারি ব্যভহার করা উত্তম।
ডেঙ্গু মশার ডিম শুষ্ক অবস্থায় কয়েক বছর জীবিত থাকে। এই মশা প্রাকৃতিক পাত্র ও কৃত্রিম পাত্রের জমা পানিতে ডিম পাড়ে কিন্তু ড্রেন, পুকুর, নদীর পানিতে ডিম পারে না। ঘরে নিত কাজের জন্য রাখা পানিতেই ডেঙ্গু মশার বংশবৃদ্ধির উপযুক্ত স্থান।
ডেঙ্গু মশা দেখতে নিলাভ কালো, দেহ সাদা ডোরা কাটা দাগ আছে। সাধারণত সমুদ্র হতে ১০০০ মিটার ওপরে, ভারতে ২১২১ মিটার উচ্চতা ও কলাম্বিয়ায় ২২০০ মিটার উচ্চতায় ডেঙ্গু মশা পাওয়া যায়। বিশ^স্বাস্থ্য সংস্থার ১৯৯৬ সালের রিপোর্টে বলা হয়েছে বিশে^ ২০ মিলিয়ন মানুষ ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয় এবং ২৪০০০ লোক এতে মারা যায়। ডেঙ্গু জ¦রের সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা বা কার্যকর প্রতিষেধক টিকা নেই। ম্যালেরিয়ার মত ডেঙ্গুর সরাসরি ওষুধ নেই। এ দেশে ডেঙ্গু জ¦রের উপস্থিতি চিকিৎসকের জানা ছিল। খুব কম লোকের ডেঙ্গু হত। তাই পরিচিতি ছিল কম। এ জ¦র হঠাৎ করে আসে। তীব্র মাথা ব্যথা হবে। হাড় ও মাংশপেশীতে ব্যথা প্রচ-ভাবে অনুভব হবে। জ¦র ১০৪০ ফাঃ পর্যন্ত উঠে যেতে থাকবে। শীত ও বমিভাব হবে। লীম্ফ গ্ল্যান্ড ফুলে যাবে। দু’তিন দিন পর বেশ ঘাম দিয়ে জ¦রছেড়ে যাবে। পরিদন আবার জ¦র ওঠে।
দ্বিতীয় বারের জ¦রের সময় গায়ে লাল লাল ফোলা দাগ দেখা যাবে। সাধারণত হাতের পিঠে এ র‌্যাশ প্রথম দেখা দেয়। জ¦র ছাড়ার পর বিষণœতা ও অবসাদ সপ্তাহ পর্যন্ত চলতে থাকবে। সুতরাং পরীক্ষা ছাড়াও রোগ চেনা সহজ। যদি অন্য জ¦রের সঙ্গে গুলিয়ে যায় তাও বেশী অসুবিধে নেই্ কারণ ভাইরাস জনিত জ¦রগুলির চিকিৎসা প্রায় একই ধরনের। তবে এবারের ডেঙ্গুর ধরনে পরিবর্তন এসেছে।
কেন ডেঙ্গু হিমোরেজিক ফিভারে (উঐঋ) হয়ে থাকে তার সঠিক কারণ এখনও নির্ণয় করা সম্ভব না হলেও ডেঙ্গুর অস্বাভাবিক স্তর বিন্যাসকেই অদ্যাবধি স্বতঃসিদ্ধ কারণ হিসেবে ধরে নেয়া হচ্ছে। ডেঙ্গু ভাইরাস শরীরের ছোট ছোট রক্ত সঞ্চালন নালী (ঈঅচওখওঅজণ) গুলোর প্রতি অতিমাত্রায় আকৃষ্ট হয়ে এবং তাদের পানি নিঃসরণ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। এতে রক্তের ঘনত্ব বেড়ে যায়, রক্তের পরিমাণ হ্রাস পায়। লিভার কোষের পচন ধরতে পারে। কিডনীতে প্রদাহ হতে পারে। অস্থি মজ্জায় রক্ত কণিকা তৈরীতে প্রবল ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
রোগের চিকিৎসা বলতে মূলত উপসর্গের চিকিৎসাকে বুঝায়। তাই হোমিওপ্যাথিতেও এ রোগের লক্ষণভিত্তিক কার্যকরী চিকিৎসা রয়েছে। বিজ্ঞানী চিকিৎসক ডা. হানেমানের অর্গাননের ৬ষ্ঠ সংস্করণের অনুবাদক বিশ^খ্যাত হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক ডা. উইলিয়াম বোরিকের রের্পাটরীর ৯০৬ পৃষ্ঠায় ডেঙ্গু জ¦রে ব্যবহৃত ওষুধ সমূহের সংক্ষিপ্ত বিবরণ এবং ডা. নারায়ণ চন্দ্র ঘোষের কম্পারেটিভ মেচেরিয়া মেডিকার ১০৯৬ পৃষ্ঠায় সংক্ষিপ্ত বিবরণ উল্লেখযোগ্য।
ডেঙ্গু জ¦রে প্রচ- শক্তিশালী ওষুধ হচ্ছে ‘ইউপেটোরিয়াম পার্ফোলিয়েটাম’ যেটা ইঙঘঊ ঝঊঞ নামে পরিচিত। এ ওষুধের আরও ২টি প্রুপ আছে একটি – এরোমেটিকাম অপরটি পারপিউরিয়াম যেটা গ্যাভেল রুট নামে পরিচিত এগুলি অন্য রোগে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া যখন উচ্চ জ¦র থাকে চোখ মুখ লাল হয়ে গায়ে ফুসকুড়ি দেখা দেয় তখন হোমিও ওষুধ ‘বেলেডোনা’ অত্যন্ত কার্যকরী। জ¦রের শুরুতেই একোনাইট অনেক ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। এ রোগের মোছড়ানী ব্যথায় রাসটক্স এবং জ¦ালাপোড়া বা প্রদাহ থাকলে আর্সেনিক এলবাম কার্যকরী ভূমিকা রাখে। তাই ডেঙ্গু জ¦রে আতঙ্ক হবার কোন অবকাশ নেই। উল্লেখিত ওষুধগুলো সাহসিকতা, বিচক্ষণতা ও দৃঢ়তার সাথে প্রয়োগ করে ডেঙ্গু মোকাবিলা করার জন্য হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা পদ্ধতিতে লক্ষণ ভেদে এ সমস্ত ওষুধ গুলো দীর্ঘযুগ ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা এবং প্রচার মাধ্যমের সহযোগিতায় এটা আয়ত্বে আনা সম্ভব।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট