চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

শিশুর জন্য চাই ভয়হীন পরিবেশ

কাজী আবু মোহাম্মদ খালেদ নিজাম

২৯ জুলাই, ২০১৯ | ১:০৩ পূর্বাহ্ণ

শিশুর জীবন গঠনে মা-বাবার পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট সকলে চেষ্টার অন্ত রাখেন না। অথচ সেই শিশুদেরই উপর বেড়ে চলেছে নির্যাতনের মাত্রা। উদ্বেগ দেখা দিয়েছে তার নিরাপত্তা নিয়ে। ‘পদ্মাসেতুর জন্য শিশুর কাটা মাথা লাগবে’- সাম্প্রতিক সময় এ ধরণের গুজব ছড়ানো হয় যে কারণে মা-বাবা, অভিভাবকগণ তাদের ছেলেমেয়েদের স্কুলে বা বাইরে বের করতে আতংকিত হচ্ছেন কিংবা নিরাপদ মনে করছেন না।যদিও সেতু কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যে তা নাকচ করেছে। প্রশাসনও অভয় দিচ্ছে। এমনিতে খবরের কাগজে শিশুহত্যা, ধর্ষণ সংবাদ শিরোনাম হচ্ছে। মাতা-পিতা, অভিভাবক তাদের সন্তানদের নিয়ে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছেন। নিষ্পাপ এসব শিশুনির্যাতন ও হত্যায় আঁৎকে উঠছেন দেশের সচেতন মানুষ। নানাসময়ে শিশুহত্যা, ধর্ষণ ও অপহরণ বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন মিডিয়ায় ফলাও করে প্রচার হয়। কিছুদিন আগে ঢাকায় শিশু সায়মার ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা নাড়া দিয়ে যায় সকলকে।যদিও হত্যাকারীকে ইতিমধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে। হত্যাকা-,নির্যাতন ও ধর্ষণে পেশাদার খুনি,সন্ত্রাসীর পাশাপাশি জড়িত থাকে পারিবারিক ও সামাজিক বিরোধের ভয়াবহতা। আপনজনের কাছেও শিশু নিরাপদ নয় ! শিশুর উপর নির্মমতার মাত্রা ছাড়িয়েছে। মানুষ কীভাবে যে এত নির্দয় ও পাষ- হতে পারে তা ভাবতেই গা শিউরে ওঠে।বিদেশের নানা জায়গায়ও শিশুদের উপর অমানবিক আচরণ করা হয়। বিশ্বসংস্থাসহ দেশ-বিদেশের নানা সংগঠন, সরকার ও ব্যক্তি শিশুদের নিয়ে কাজ করে চলেছেন। শিশুদের জন্য একটি নিরাপদ আবাস গড়তে চলছে নিরন্তর প্রচেষ্টা। অথচ এসব কিছুর মাঝেও শিশুদের উপর চলছে অমানবিক ও নির্দয় নির্যাতন, হত্যা। যে অবস্থা চলছে তাতে শিশুদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ কীভাবে তৈরি হবে তা বলাই মুশকিল। যেখানে মায়ের কোলও শিশুর জন্য নিরাপদ হচ্ছে না! মানুষ ব্যক্তিস্বার্থে, লালসায় শিশুদের উপর কেমন করে এত বর্বর নির্যাতন চালাতে পারে? প্রতিটি শিশুর নিরাপদ পরিবেশ গড়ে তোলার দায়িত্ব আমাদের সকলের। এই দায়িত্ব এড়ানোর কোন সুযোগ নেই। নিজের পায়ে না দাঁড়ানো পর্যন্ত শিশুকে গড়ে তোলার দায়িত্ব নিতে হবে মা, বাবা, অভিভাবক, রাষ্ট্র সর্বোপরি সমাজের সকল মানুষকে। সব ধরনের ভীতিকর পরিবেশ থেকে শিশুকে মুক্ত রাখতে হবে।শিশুর গড়ে ওঠার জন্য যা যা করণীয় তার সবটুকু করতে হবে। যে শিশুরা আগামীদিনের ভবিষ্যৎ, তাদের অন্ধকারের দিকে ঠেলে দেবার কোন সুযোগ নেই। দিতে হবে তাকে সব মৌলিক অধিকার। যে সব পাষ-, নরপশু শিশুদের হত্যা ও ধর্ষণ করছে, অপহরণ করছে তাদের কঠোর থেকে কঠোরতম শাস্তি দিতে হবে। ভবিষ্যতে যেন কেউ শিশুদের উপর কোন ধরনের নির্যাতন করতে না পারে সে ধরনের আইন প্রণয়ন ও তার বাস্তবায়ন করতে হবে। শিশুর প্রতি ভালোবাসা আমাদের দিন দিন কমে যাচ্ছে। তাদের প্রতি হিংস্রতা ও নিষ্ঠুরতার মাত্রা বাড়ছে। এ অবস্থার অবসান না হলে বিপন্ন হবে শিশুর ভবিষ্যৎ জীবন। গোটা মানব সমাজকেই যা গ্রাস করতে পারে। রাষ্ট্রকে এ ব্যাপারে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। শিশুরা ফুলের মতো।আবার তারা অসহায়ও। অন্যের সাহায্য ও ভালোবাসা ছাড়া সে বেড়ে উঠতে পারে না।তার জীবনের গাঁথুনি নির্ভর করে অভিভাবক, নিকটাত্মীয় ও সচেতন মানুষের ভূমিকার উপর। শিশুর অধিকার, তার গড়ে ওঠা, নিরাপত্তা ইত্যাদি নিয়ে সরব দেখা যায় অনেক সংগঠনকে। সরকারের সহযোগিতা না পেলে তারা কার্যকর তেমন কোনকিছুই করতে পারে না। সমাজের প্রভাবশালী ও নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গকে শিশুদের অধিকার এবং তাদের নিরাপত্তার ব্যাপারে দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ নিতে হবে। আন্তর্জাতিকভাবেও শিশুদের অধিকার রক্ষার ব্যাপারে নানামুখী উদ্যোগ ও পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়। কিন্তু এর পরেও পৃথিবীর বহু দেশে শিশুরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। তাদের নিয়োগ করা হচ্ছে নানা ঝুঁকিপূর্ণ কাজে।
আমাদের দেশে এ ধরনের কাজে নিয়োজিত শিশুদের প্রতি নির্দয় ব্যবহার করা হয়,তাদের মজুরিও অনেক কম, বিশ্রাম বিনোদন, লেখাপড়া করার পর্যাপ্ত কোন সুযোগ নেই। আর একটি শিশুও যেন হত্যা ও নির্যাতনের শিকার না হয় সে ব্যাপারে সচেতন মানুষ তথা রাষ্ট্রেকে প্রধান ভূমিকা পালন করতে হবে। রাষ্ট্র যদি শিশুদের অধিকার ও নিরাপত্তার ব্যাপারে আন্তরিকভাবে চেষ্টা চালায় তাহলে কারো কোন সাধ্য নেই শিশুদের উপর অমানবিক আচরণ করার। আমরা চাই প্রত্যেক শিশু ফিরে পাক তার মৌলিক অধিকার ও নিরাপদ পরিবেশ। গড়ে উঠুক একটি ভয়হীন পরিবেশ। সব মা ও অভিভাবকের কোল হোক শিশুর নিরাপদ আশ্রয়স্থল। তাদের জন্য একটি নিরাপদ, বাসযোগ্য ও ভয়হীন পরিবেশ সুনিশ্চিতে কাজ করতে হবে। কেননা আগামীদিনের তারাই তো কর্ণধার।

লেখক : শিক্ষক ও প্রাবন্ধিক

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট