চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

শিশু কিডনি রোগে করণীয়

১০ মার্চ, ২০২২ | ৫:৫৬ পূর্বাহ্ণ

দেশে মোট জনসংখ্যার ৪২ শতাংশ শিশু। শিশু বলতে আমরা জন্ম থেকে ১৮ বছর শেষ হওয়া পর্যন্ত সবাইকে বুঝি। প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী এদেশে ৬.৬ শতাংশ শিশুর কিডনী রোগ রয়েছে। শিশু কিডনী রোগগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে নেফ্রোটিক সিনড্রোম (প্রপ্রাবে এ্যালবুমিন যেয়ে ফুলে যাওয়া), মূত্রনালীর সংক্রমণ, নেফ্রাইটিস (প্রশ্রাবে রক্ত যাওয়া, রক্তচাপ বেড়ে যাওয়া, মুখ ফুলে যাওয়া, কিডনী কিছুটা কম কাজ করা), স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদী কিডনী বিকল হওয়া, কিডনী ও মূত্রনালীতে জন্মগত ত্রুটি, মূত্রনালীতে প্রতিবন্ধকতা, লুপাস নেফ্রাইটিস সহ বিভিন্ন ধরনের ভাসকুলাইটিস রোগে শিশুদের কিডনী আক্রান্ত হয়ে বিকল হয়ে যেতে পারে। স্থূলতা ও স্বল্প ওজনে জন্মগ্রহণকারী শিশুদের কিডনীতে অল্প অল্প এ্যালবুমিন যাওয়া এবং দীর্ঘদিন পরে কিডনী চিরকালের জন্য বিকল হয়ে যাবার সম্ভাবনা থাকে। ২-৫ শতাংশ শিশু উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত, তাদের কেউ এটা জানে না। কখনো কেউ মেপেও দেখেনি এবং কোন ব্যবস্থা গ্রহণও করেনি। অধিকাংশ কিডনী রোগগুলো উপসর্গবিহীন অথবা খুব সামান্য উপসর্গ, যা ভালো ভাবে খুটিয়ে না দেখলে বা পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করলে বোঝা যায় না। যখন বোঝা যাওয়ার মত উপসর্গ হয় তখন হয়তো যা দেখা গিয়েছে, বহুদূর চলে গিয়েছে, কিডনী বিকল হয়ে পড়েছে। কিডনী চিকিৎসা ডায়ালাইসিস অত্যন্ত ব্যয়বহুল, সপ্তাহে ৩ বার ডায়ালাইসিস করতে হয় এবং এর মাসিক খরচ প্রতি শিশুর জন্য প্রায় ১-২ লক্ষ টাকা, যা আমাদের সাধারণ মানুষের সংগতির বাইরে।
কিডনী প্রতিস্থাপনে এককালীন খরচ আনুমানিক ৫-৬ লক্ষ টাকা হলেও পরবর্তীতে মাসে ৫-১০ হাজার টাকার ঔষধ ও সারাজীবন স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপন ও বিধি মানলে, যা আমাদের প্রায় সব মানুষেই কিছু সামাজিক অনুদানসহ হয়তো বা গ্রহণ করতে পারে। একবার কিডনী প্রতিস্থাপনে ১০-৩০ বছর ভালো ও প্রায় সুস্থ জীবন যাপন সম্ভব। এই চিকিৎসা এদেশেই সম্ভব এবং এদেশের এই চিকিৎসার মান আন্তর্জাতিক পর্যায়ের। কিডনী দানকারীর সাধারণত কোন অসুবিধা হয় না। তিনি বাকী জীবন প্রায় স্বাভাবিকভাবে কাটাতে পারেন। তাই এই বিষয়ে কোন ভ্রান্ত-ধারণা সঠিক নয়। আপনার প্রিয়জনকে একটি কিডনী দিলে আপনি ও কিডনী গ্রহীতা দু’জনেই ভালো থাকবেন, এটা নিশ্চিত, বিজ্ঞানভিত্তিক। ইন্টারনেটের এই যুগে আপনি বিষয়গুলো উন্নত বিশ্বের ডাটা দেখে জেনে নিতে পারেন।
শিশুদের অধিকাংশ কিডনী রোগ নিরাময়যোগ্য। ৪০-৬০ শতাংশ শিশু কিডনী রোগীর দীর্ঘমেয়াদী কিডনী বিকল হওয়ার কারণ হলো জন্মগত ত্রুটি ও মূত্রনালীতে প্রতিবন্ধকতা। এগুলো অল্পবয়সে সারিয়ে নিতে হবে। ধৈর্য, বুদ্ধিমত্তা এবং সঠিক চিকিৎসা বা সঠিক হাসপাতালে গ্রহণ করতে হবে। সমস্ত অসুখের ব্যবস্থা গ্রহণ অল্প উপসর্গেই নিরাপদ, কিডনী রোগের চিকিৎসাও অল্প উপসর্গে ভালো। বেশী দূর গড়িয়ে গেলে আপনার শিশু ঝুঁকিতে চলে গেলো, আপনি একটি ব্যাপক জীবন ও অর্থযুদ্ধে চলে গেলেন, এমনকি পরাজিতও হতে পারেন। আজ ১০ই মার্চ বিশ্ব কিডনী দিবসের প্রাক্কালে সকল মুক্তচিন্তা, বিবেক-বুদ্ধি সম্পন্ন মানুষের প্রতি আবেদন রইল আমরা, আপনারা সবাই এই বিষয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত সঠিক সময়ে নিব, সবাই ভালো থাকবো। ভালো থাকতে জানা একটি নিপূণ শিল্পকর্ম। সকলের কল্যাণ, সু-স্বাস্থ্য, দীর্ঘ-সুখী জীবন কামনা করছি।

অধ্যাপক রনজিত রায়
কোর্স-ডিরেক্টর (শিশু পেডিয়াট্রিকস),
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়;
সভাপতি, পেডিয়াট্রিক নেফ্রোলজি সোসাইটি অব বাংলাদেশ।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট