চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

বিশ্ব কিডনি দিবসে গণ্ডির বাইরে দেখা

হিমোডায়ালাইসিসে সরকারি বেসরকারি অংশীদারিত্ব

অধ্যাপক ইমরান বিন ইউনুস

১০ মার্চ, ২০২২ | ৫:৪৮ পূর্বাহ্ণ

মার্চ ১০, বছর ঘুরে আবার বিশ্ব কিডনী দিবস। আবার নতুন প্রতিপাদ্য। এসব কিছুই কিডনী রোগ নিয়েও ভালো থাকার জন্য, প্রতিরোধের জন্য। হিমোডায়ালাইসিস এন্ড স্টেজ কিডনী ফেইলিওর অবস্থায় জীবন রক্ষাকারী চিকিতসা পদ্ধতি। ভালো থাকার এক উপায়। হিমোডায়ালাইসিস ব্যয়বহুল, দজ্ঞ জনশক্তি এবং উচ্চতর প্রযুক্তিনির্ভর। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ সহ কয়েকটি সরকারী প্রতিষ্টানে হিমোডায়ালাইসিস চালু আছে। যেখানে আমলান্ত্রিক লাল ফিতার দৌরাত্বে হিমোডায়লাইসিস কার্যক্রম নিরবচ্ছিন্ন ভাবে চলা প্রায়ই ব্যাহত হয়। অন্যদিকে অনেক বেসরকারী মেডিকেল চিকিতসা প্রতিষ্টানে হিমোডায়ালাইসিস চালু হয়েছে এবং দিনে দিনে নতু নতুন ক্লিনিকসমূহে প্রসারিত হচ্ছে। ক্লিনিকসমূহে হিমোডায়ালাইসিসের অনেক সীমাবদ্ধতা আছে। অন্যতম হলো- দক্ষ জনবলের অভাব, স্পেস সেটিং আর সাপ্লাই অপ্রতুলতা, যন্ত্রপাতির মল্যমানের অবচয়, বিভিন্ন প্রকার করের প্রভাব ও ইনভেস্টমেন্টের ডিভিডেন্ড। এসব কারণে ডায়ালাসিস ব্যয় অনেক বেশী হয় এবং ডায়ালাইসিস প্রদানকারী কেন্দ্রগুলো ব্রেক ইভেন সংকটে নিপতিত থাকে।
সরকারী হাসপাতালগুলোর জনবল, সেটআপ, যন্ত্রপাতি, আনুসঙ্গিক সব কিছুর সুযোগ ও ঊৎস বিধ্যমান। কিন্তু আমলাতান্ত্রিক মানসিকতা ও কর্মপদ্ধতি হিমোডায়ালাইসিসের মত সংবেদনশীল সময়াবদ্ধ ক্রিয়াকে পুনঃপুনিকভাবে বাধাগ্রস্ত করে। সবচেয়ে বারবার য়া হয় তা হলো হিমোডায়ালাইসিস মেশিন বিকল হলে তা তাৎক্ষণিক ঠিক করার ব্যবস্থাপনা নেটওয়ার্কের প্রকট অভাব। নিয়মিত চলমান হিমোডায়াইসিস অনিয়মিত বা বন্ধ হওয়া একজন ডায়ালাইসিস নির্ভর রোগীর জন্য জটিলটা বা মৃত্যুর পথে ঠেলে দেয়ার সামিল।
সরকারী বেসরকারী অংশীদারিত্ব (সবঅ) আধুনিক ব্যবস্থাপনাপদ্ধতি যাতে যার যার সুযোগ, সম্পদ আর সংগতি সম্পুরক আর পরিপুরক সমন্বিত ও সহযোজন করে কার্যক্রম সুচারুভাবে পরিচালনা করা। কার্যকর অংশীদারিত্বে পরিকল্পনা থেকে শুরু করে সবকিছু যৌথভাবে হতে হবে। পরিকল্পনা, বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ, নীরিক্ষা, পরিচালনা। অন্যদিকে লীজ হলো কোন একটা কার্যক্রমের সবকিছু ঠিক করে একপক্ষ অন্যপক্ষকে পরিচালনার জন্য দেয়া যা থেকে অন্যপক্ষ আয় করে লীজ দাতাকে চুক্তিকৃত মূল্য প্রদান করে। এখানে সম্পুরক বা পরিপুরক ভাবে কাজ করা হয় না।
অন্য কয়েকটির মতো চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও সবঅ-র নামে ডায়ালাইসিস কেন্দ্র চালু করা হয়েছে কয়েক বছর খেকে। উদ্দ্যেশ্য হলো নিরবচ্ছিন্নভাবে আর্থিক ব্যয় ক্ষমতার মধ্যে ডায়ালাইসিস করে জীবন ধারন করবে রোগীগণ। বিদেশী কম্পানির স্থানীয় সাবিসিডিয়ারী তাদের নাম দিয়ে কেন্দ্র হাসপাতালের স্পেস সহ সবকিছু ব্যবহার করে চালাচ্ছে। নেফ্রোলজী বিভাগের সাথে যথাযথ সমন্নয়বিহীন। নামে কমমূল্যে ডায়ালাইসিস দিচ্ছে কিন্তু পুরো মেকআপ মূল্যটা সরকার থেকে নিচ্ছে। নিয়মিত ডায়ালাইসিস এডিকুয়েসি নির্ণয় না করা, পেরিডায়ালাইটিক জটিলটা যথাযথ ভাবে মেনেজে ব্যর্থতা, বিশেষজ্ঞের তত্ববধানের অভাব, ডায়ালাইজার রিইউজের সমস্যা জর্জরিত। জনকল্যাণে আউটকাম আর আউটপুটের কোন পরিবীক্ষণ নীরিক্ষা ছাড়াই চলছে। এ কার্যক্রমকে তাই লীজ বলা যায়। অংশীদারিত্ব নয়, নেফ্রোলজী বিভাগের অঙ্গ না হয়ে। অসমন্নিত ভাবে হাসপাতালের মধ্যে কেনটিন লীজ নেয়ার মতো। আমার কাছে খুব অবাক লাগে আরও অনেক ব্যয়বহুল চিকিতসা ব্যবস্থা যেমন ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজী, কেন্সার, হাই এন্ড ল্যাব ইত্যাদি বাদ দিয়ে শুধু হিমোডায়ালাইসিসকে লীজে দেয়া হলো কেনো? বাংলাদেশ সরকারের কি কয়েকটা হিমোডায়ালাসিস মেশিন ও আনুসঙ্গিক সরঞ্জাম সংগ্রহ ও সংশ্লিষ্ট অন্য কিছু দেয়ার কি ক্ষমতা নেই?
সবঅ-র মাধ্যমে যৌক্তিকভাবে অনেক কিছু করা যেতে পারে। চট্টগ্রামের সকল বেসরকারী ডায়ালাইসিস কেন্দ্রসমূহকে নিয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নেফ্রোলজী বিভাগের নেতৃত্বে হিমোডায়ালাইসিস এলায়েন্স করা যায়। সকল ডায়ালাইসিস কেন্দ্র সমূহের অবস্থা নীরিক্ষা করে একটা স্টান্ডার্ড বেঞ্চমার্ক তৈরী করে সবকেন্দ্রকে সেই পর্যায়ে উন্নীত করে একটি ইউনিফরম ও স্টান্ডার্ড অপারেশন প্রটোকলের অনুসরণ করে ডায়ালাইসিস চালানো। আর তা করতে জনবল, সরঞ্জাম, সামগ্রী, সম্পদ, প্রশিক্ষণ ইত্যাদি শেয়ারিং ও নেটওয়ার্কিং এর মাধ্যমে সম্পূরক ও পরিপূরকভাবে সজ্জিত করা। যে যেখানে ডায়ালাইসিস করুক ফিসের রোগীর অংশ রোগী দেবে বাকী সরকার প্রদেয় অংশ সরকার থেকে কেন্দ্র বিল করে নেবে। এবং সরকারী প্রদেয় অংশ পেতে হলে বেঞ্চ মার্ক মান অর্জন ও বজায় রাখতে হবে। কেন্দ্রসমূহকে এক্রিডেটেড হতে হবে। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের নেফ্রোলজীর বিভাগের প্রধানের নেতৃত্বে একটি ব্যবস্থাপনা ও পরিবীক্ষণ এবং নীরিক্ষা কমিটি হিমোডায়ালাইসিসের সবঅ পরিচালনা করবে। এতে মানসম্মত ডায়ালাইসিস আর্থিক ক্ষমতার মধ্যে রোগীগণ পাবেন। এই কার্যক্রম আরও গতিশীল ও জনকল্যাণমূলক হবে যদি সমাজসেবা বিভাগের চিকিৎসা সহায়তার অনুদান সরকারী প্রদেয়র সাথে যোগ করে ডায়ালাইসিস ইন্সিওরেন্স তহবিল করা যায়। চিকিতসকদের গতানুতিক চিকিতসা মানসিকতা আর আমলাদের গন্ডিভুত ধারনায় এসব ফলনধর্মী কর্মকা- কখনই হবে না।
এবারের বিশ্ব কিডনী দিবসের প্রতিপাদ্য হলো, ‘সুস্থ কিডনী সবার জন্য, জ্ঞানের সেতুবন্ধনে সাফল্য’। স্বাধীনতার আহবানে বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘তোমাদের যার যা কিছু আছে তা নিয়ে যাপিয়ে পড়ো’। কিডনী বিকল রোগ নিয়ে ভালো থাকার জন্য নিরবচ্ছিন্ন হিমোডায়ালাইসিস পেতে যথাযথ উদ্ভাবনীমূলক কার্যকর সরকারী বেসরকারী অংশীদারিত্বে তার অনুরণন উঠুক চারিদিকে। এবং গন্ডির বাইরে দেখার কোন বিকল্প নেই।

অধ্যাপক ইমরান বিন ইউনুস

ইন্টারনিস্ট ও নেফ্রোলজিস্ট এবং গবেষক।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট