চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

আর্সেনিক দূষণ ও জনস্বাস্থ্য

অধ্যক্ষ ডা. রতন কুমার নাথ

২৫ জুলাই, ২০১৯ | ১২:৫৭ পূর্বাহ্ণ

আর্সে নিক একটি মৌলিক পদার্থ। এর মধ্যে ধাতু এবং অধাতু দুরকমেরই গুণাবলি আছে। তাই একে ধাতুকল্প বা মেটালয়েড বলা হয়। চলতি ভাষায় সেঁকেবিষ হিসেবে এর ব্যবহার প্রাচীনকাল থেকে গুপ্ত হত্যার কাজে। স¤্রাট নেপোলিয়নকেও এই বিষ প্রয়োগে হত্যা করা হয়েছিল। ভূগর্ভ থেকে অতিরিক্ত মাত্রায় সেচের জল তোলার ফলে ভূগর্ভের মাটি ও পাথরে ফাটল ধরে। তাতে ‘নাইট্রাইট’ ও ‘আর্সেনোনাইট্রাইট’ আছে তার সঙ্গে অক্সিজেন যুক্ত হওয়ার ফলে আর্সেনিক জলে দ্রবীভূত হয়ে যায় এবং অগভীর নলকুপের জলে উঠে আসে। গভীর নলকুপ, পুকুর বা নদীর জলে বা বৃষ্টির জলে আর্সেনিক থাকে না। বিশ^স্বাস্থ্য সংস্থা নির্ধারিত পানীয় জলে আর্সেনিকের সর্বোচ্চ অনুমোদিত মাত্রা ০.০১ মিলিগ্রাম প্রতিলিটার জলে। দীর্ঘদিনের অধিকমাত্রায় আর্সেনিকযুক্ত জল পানের ফলে উত্তর বঙ্গের বিভিন্ন জেলায় এই রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা যাচ্ছে বেশি।
দীর্ঘস্থায়ী দূষণের ফলে ত্বকে নানা বিকৃতি দেখা যায়। মেলানিন পিগমেন্টেশন কম বেশি হওয়ার ফলে ত্বকে ছিট ছিট দাগ দেখা যায়। হাতে-পায়ের চেটো পুরু হয়ে যায়। এই ধরনের কোনও লক্ষণ দেখা দিলে তৎক্ষণাৎ স্বাস্থ্যকর্মী বা ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করা উচিত। এই রোগ হয়েছে সে বিষয়ে নিশ্চিত হলে তৎক্ষণাৎ দূষিত জল পান করা বন্ধ করতে হবে। অপুষ্ট দুর্বল লোকেরা সহজেই এই রোগে আক্রান্ত হন। পুষ্টিকর, সুষম ও প্রোটিনযুক্ত খাবার আর্সেনিক দূষণ বিলম্বিত করে। এই রোগটি ছোঁয়াচে নয়।
আর্সেনিকের বিষক্রিয়াজাত রোগকে আর্সেনোকোসিস বলে। পৃথিবীর বহু দেশে যেমন পোলান্ড, আমেরিকা, উত্তর আর্জেন্টিনা, উত্তর মেক্সিকো, চিলি, মঙ্গোলিয়া প্রভৃতি দেশে এই রোগ চিহ্নিত হয়েছে। বাংলাদেশের উত্তর বঙ্গের বিভিন্ন জেলায় এই রোগ প্রকটভাবে প্রকাশ পেয়েছে। মাটির তলা থেকে আর্সেনিক অগভীর নলকুপের জলের মাধ্যমে রোগটি ছড়িয়ে পড়ছে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায়, যেমন উত্তর ২৪ পরগনা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, নাদীয়া, মালদা মুর্শিদাবাদ, বর্ধমান, হুগলী ও হাওড়ার কিছু ব্লকের এই রোগ দেখা যাচ্ছে।
দীর্ঘস্থায়ী বিষক্রিয়ার ফলে শরীরের নানা ক্ষতি হয়। প্রায় ৯৫% ক্ষেত্রে ত্বকের নানা বিকৃতি লক্ষ্য করা যায়। মুখ ও গলার চামড়া কালো হয়ে যাওয়াকে মেলাসমা বলে। মেলানিন পিগমেন্টেশন ত্বকের কোথাও বেশি আবার কেথাও কম হওয়ার জন্য ত্বকের ওপরে বৃষ্টির ফোটার মত ছিট ছিট দাগ দেখা যায়। হাত এবং পায়ের চেটো পুরু হয়ে যাওয়া ও আরেকটি লক্ষণ। হাত ও পায়ের পাতায় গুটির মত হওয়ার দরুণ রোগী অনেক সময়ে হাঁটতে পারে না। এছাড়া কাশির সঙ্গে রক্তের ছিটে ওঠা, পেটে ব্যথা, বমিভাব, ক্ষুধামন্দা, হাত-পা ঝিন ঝিন করা, হাতে পায়ে জোর কম বোধ হওয়া, চোখ লাল হওয়া, পা ফোলা। এছাড়া লিভার, কিডনি ইউরিনারি ব্লাডার এবং ফুসফুসে ক্যান্সার পর্যন্ত হতে পারে।
আর্সেনিক দূষণ লক্ষণে হোমিওপ্যাথিক ওষুধের প্রয়োগ সংকেত অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা রাখে। এই দূষণে যে ওষুধ হোমিওপ্যাথিতে প্রস্তুত ও প্রয়োগ করা হয় তা প্রচলিত ‘সেকোবিষ’ থেকেই হয়। এই ওষুধ অত্যন্ত সেনসেটিভ। তাই চিকিৎসকের সরাসরি তত্ত্বাবধানে ওষুধ প্রয়োগ ও সেবন করতে হবে। না হলে হিতে বিপরীত হতে পারে।

লেখক : সাবেক অধ্যক্ষ ডা. জাকির হোসেন
হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ, চট্টগ্রাম।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট