চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

সুস্থ জীবনের জন্যে চাই সুস্থ পরিবেশ

মোহাম্মদ ইলিয়াছ

১৮ জুলাই, ২০১৯ | ১২:৪৯ পূর্বাহ্ণ

বাতাস অস্বাস্থ্যকর হওয়া মানে মানবজাতি বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়া। আমরা বিভিন্ন কারণে বাতাসকে দূষিত করে ফেলছি। যেখানে-সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলা এবং আবর্জনাকে দ্রুত সংরক্ষণ না করা, অপরিকল্পিত নগরায়ন, যানবাহন-কলকারখানার কালো ধোঁয়া ইত্যাদিকে দায়ি করা হচ্ছে। অন্যদিকে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বায়ুমন্ডলীয় অবস্থার পরিবর্তন ঘটছে। বায়ুমন্ডলীয় অবস্থার পরিবর্তনের কারণে বায়ু দূষণের প্রভাব আরো খারাপ হচ্ছে। বায়ু দূষণের কারণে ফুসফুসের ক্যান্সার, হার্ট অ্যাটাক, অ্যাজমা. ব্র্রংকাইটিসসহ শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত বিভিন্ন রোগ হতে পারে। ইতিমধ্যে আমরা লক্ষ্য করছি পৃথিবীর বড় বড় শহরগুলোর বাতাস খুবই অস্বাস্থ্যকর হচ্ছে। আন্তর্জাতিক পরিবেশবাদী সংস্থা প্রিন পিস-এর মতে পৃথিবীর ৩ হাজার ৯৫টি শহরের মধ্যে ৩০টি শহর বেশি দূষিত হয়েছে। এতে আমাদের দেশের রাজধানী ঢাকার শহরের নাম রয়েছে। বায়ু দূষণে ঢাকা শহর বিশ্বে ১৭তম অবস্থানে রয়েছে। গ্রিন পিসের প্রতিবেদনে বলা হয়, ঢাকার বাতাসে খুবই অস্বাস্থ্যকর ক্ষতিকর উপাদান রয়েছে। বাতাসে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর উপাদান পার্টিকুলেট ম্যাটার ২ দশমিক ৫ নামে পরিচিত এক ধরণের সূক্ষè কণা। বাতাসের এই কণা খুব সহজেই নি:শ্বাসের মাধ্যমে আমাদের শরীরে প্রবেশ করে। ঢাকার বাতাস অস্বাস্থ্যকর। সংস্থার জরিপে বলা হয়েছে চলতি বছরে বায়ু দূষণের প্রভাবে বিশ্বের প্রায় ৭০ লাখ মানুষের অকাল মৃত্যু ঘটতে পারে। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, বায়ু দূষণ আমাদের জীবিকা এবং ভবিষ্যৎ ধ্বংস করে দিচ্ছে। বায়ু দূষণের কারণে বিশ্বব্যাপী চিকিৎসা খরচ পড়েছে প্রায় ২২৩ বিলিয়ন ডলার।
বায়ু দূষণের কারণে আমাদের স্বাস্থ্য ও মানিব্যাগে মারাত্মক প্রভাব পড়ছে। বায়ু দূষণ কিন্তু আমরা নিজেরাই সৃষ্টি করছি। ময়লা-আবর্জনার দুর্গন্ধের কারণে মানবজীবন হচ্ছে অস্বস্তিকর। নাকে রুমাল বা মুখোশ কিংবা নাক ছেপে চলাফেরা করতে হয় মানুষকে।
এভাবেতো মানুষের জীবন চলতে পারে না। নির্মল বাতাসে মানুষকে বাঁচতে হবে। কিন্তু নির্মল বাতাস পাবো কোথায়। অবশ্যই নির্মল বাতাস আমাদেরকে পেতে হবে। আমাদের জন্য এবং আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য নির্মল বাতাস আমাদেরকে তৈরী করতে হবে। কিভাবে তৈরী করব তা জানতে হবে। যেখানে-সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলবো না। ময়লা-আবর্জনা থেকে গন্ধ বের হয় সে অবস্থায় ময়লা-আবর্জনা রাখব না। জীবাণু ধ্বংসকারী ও দুর্গন্ধ বের হবে না এমন উপকরণ মিশ্রিত ড্রামে ময়লা আবর্জনা ফেলার ব্যবস্থা করতে হবে। ড্রামের ময়লাগুলো কিভাবে সার হিসেবে তৈরী করা যায় তার ব্যবস্থা নিতে হবে। এক্ষেত্রে উন্নত প্রযুক্তির ব্যবস্থা নিতে হবে। উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে বিশ্বের কোন দেশ ময়লা-আবর্জনাকে দুর্গন্ধ মুক্ত রেখেছে তার ধারণা নিতে হবে। ময়লা-আবর্জনাকে কিভাবে কাজে লাগানো যায় সেই ধারণাও নিতে হবে। তবে এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন মানুষের সচেতনতা। মানুষ সচেতন হলে ময়লা-আবর্জনা সঠিক স্থানে ব্যবহার সম্ভব।
অন্যদিকে সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদকে এলকায়-এলাকায় ময়লা-আবর্জনা রোধে এবং ময়লা-আবর্জনা থেকে দুর্গন্ধ বের হতে না পারে সে ব্যবস্থা করতে হবে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে বায়ুদূষণ রোধ আধুনিক ও উন্নত প্রযুক্তির দিকে আমাদেরকে যেতে হবে। আধুনিক ও উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে ময়লা-আবর্জনাকে কিভাবে সম্পদে পরিণত করা যায় সেই ব্যবস্থা রাষ্ট্রকে নিতে হবে। কেননা দেশের শহরগুলো নানাভাবে বায়ুদূষণের শিকার হচ্ছে। শুধু শহর নয় এখন গ্রামকে দূষিত বায়ু আক্রমন করতে শুরু করেছে। গ্রামের কৃষি জমিতে যেভাবে অপরিকল্পিতভাবে ইটভাটা গড়ে উঠছে তাতে মাটি ও বায়ু দূষণ একসাথে হচ্ছে। এসব ইটভাটা পরিবেশ দূষিত করছে।
নির্মল বাতাস না হলে আমাদের মানুষসহ সকল জীবকুলের বেঁচে থাকা অসম্ভব। দূষিত বাতাসের কারণে জীবকুল দ্রুত বিভিন্ন রোগের শিকার হবে। কলকারখানার কালো ধোঁয়া, যেখানে-সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলা, অপরিকল্পিত ইটভাটা, যানবাহনের কালো ধোঁয়া ইত্যাদি বন্ধ করতে হবে। মানুষকে এ ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। প্রয়োজনে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। স্বাস্থ্যকর পরিবেশে আমাদের বসবাসের পরিবেশ আমাদেরকে তৈরি করে নিতে হবে। এজন্য নির্মল বাতাস বেশি প্রয়োজন।

লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, আলহাজ্ব মোস্তফিজুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট