চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় হজযাত্রা নির্বিঘœ হোক

কাজী আবু মোহাম্মদ খালেদ নিজাম

১৬ জুলাই, ২০১৯ | ১:১১ পূর্বাহ্ণ

হজ বিশ্ব মুস ল মা নের এক বি শাল সম্মিলন। পবিত্র কাবায় এসময় একত্রিত হন পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত লাখ লাখ
মুসলমান। আমাদের দেশ থেকেও প্রতিবছর লক্ষাধিক ধর্মপ্রাণ মুসলমান হজ করতে যান। ইতিমধ্যে অবশ্য হজফ্লাইট যাত্রা শুরু করেছে। আমাদের দেশে প্রতিবছর এ মৌসুমে হজে যেতে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের হয়রানির অভিযোগ থাকে। ঢাকার নানা সমস্যা মোকাবেলা করে সৌদি আরবে পৌঁছানোর পরেও বাড়ি ভাড়া, খাওয়া-দাওয়াসহ নানা জটিলতায় পড়েন হাজিরা। এসব বিষয়ে কর্তাব্যক্তিদের দৌড়ঝাঁপ করতে দেখা গেলেও কদিন পরেই তা আবার স্তিমিত হয়ে যায়। আবার হজের মওসুমে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে নানা অনিয়ম।
বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে, হজ যাত্রীদের প্রথম ধাক্কাটা আসে খাবার নিয়ে। হজ প্যাকেজ ঘোষণার সময় হজযাত্রীদের কাছ থেকে ক্যাটারিং সর্ভিসের মাধ্যমে খাবারের মূল্য পরিশোধের জন্য টাকা গ্রহণ করা হয়। কিন্তু দেখা যায় বিভিন্ন সময় সৌদি ক্যাটারিং সার্ভিসেস কোম্পানি হজযাত্রীদের খাবার সরবরাহে গড়িমসি করে থাকে। যদিও কর্তৃপক্ষ তা সমাধানের চেষ্টা চালিয়ে যান। ভিসা জটিলতা ও মোয়াল্লেম ফিসহ নানা কারণে হজযাত্রীরা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। ফলে বাতিল করতে হয় বহু সংখ্যক হজ ফ্লাইট। যে কারণে যাত্রী পরিবহনে চাপ বাড়ে। প্রতিবছরই কতিপয় হজ এজেন্সির বিরুদ্ধে অনিয়ম ও হজযাত্রীদের সংগে প্রতারণার অভিযোগ উঠে। হজ ফ্লাইট বাতিল, ফ্লাইটে বিলম্ব, হজযাত্রীদের কাছ থেকে অর্থ নিয়ে হজে না পাঠানো, চুক্তিহীন বাড়িতে হজযাত্রীদের রাখা, এক বাড়ির হজযাত্রীকে অন্য বাড়িতে ওঠানো, নি¤œমানের খাবার পরিবেশন, চুক্তি অনুযায়ী কাক্সিক্ষত সুবিধা না দেয়াসহ নানা অনিয়ম ও প্রতারণার অভিযোগ করছেন হজযাত্রীরা।
অনিয়ম ও প্রতারণার সঙ্গে জড়িত এসব হজ এজেন্সির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া না হলে একদিকে প্রতারক এজেন্সিগুলোর দৌরাত্ম্য যেমন বাড়বে, অন্যদিকে ধর্মপ্রাণ হজ যাত্রীদের আর্থিক ক্ষতি ও দুর্ভোগ অব্যাহত থাকবে। কর্তৃপক্ষ ও এজেন্সিগুলো একে অপরকে অভিযোগ করে থাকে। মাঝখানে নিরীহ হজ যাত্রীদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এ সংকটের স্থায়ী একটা সমাধান খুঁজে বের করা দরকার।
হজ ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা বজায় রাখার পাশাপাশি হজে যেতে ইচ্ছুকরা যাতে কোন ধরনের হয়রানি ছাড়াই সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে হজ পালন করতে পারেন সে লক্ষে বিদ্যমান পদক্ষেপগুলোর যথাযথ বাস্তবায়ন এবং কার্যকর কর্মকৌশল ও পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি। এ ব্যাপারে সরকারকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে।
বাংলাদেশ এবং সৌদি এয়ারলাইন্স ছাড়াও বাকী এয়ারলাইন্সগুলোকেও হজযাত্রী পরিবহণের সুযোগ দিলে হজব্যয় কিছুটা কমতো। যদিও অন্যান্য দেশে সব এয়ারলাইন্সকে হজযাত্রী পরিবহণের সুযোগ দেওয়া হয়। নানা ঝক্কিঝামেলা থেকে মুক্ত থাকতে দেশের সব পাসপোর্ট অফিসে বিশেষ হজবুথ চালুর ব্যবস্থা নেওয়া যায়। এবছর থেকে সৌদিআরবের জেদ্দা এবং মদিনা বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন কার্যক্রম আমাদের দেশের ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিমান বন্দরগুলোতে সম্পন্ন করার প্রশংসনীয় উদ্যোগ নেওয়ায় সরকার, হাব এবং সৌদি কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানাই। এর ফলে হাজীদের দুর্ভোগ অনেক কমে যাবে। প্রতিবছর প্রতারণার শিকার হয়ে বহু মানুষ হজে যেতে পারেন না। তাদের বুক ভরা কষ্ট ও চোখের জল দেখলে মন কেঁদে উঠে, দুঃখ লাগে। কত আশা আর স্বপ্ন নিয়ে তারা কাবার উদ্দেশ্যে রওনা হন। সবকিছু গুছিয়েও শেষ মুহূর্তে হজে যেতে পারেন না। বহুসংখ্যক হজযাত্রীর হজে যাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। এর চেয়ে মনে হয় বড় দুঃখ তাদের জীবনে আর থাকে না। একজন মুসলমানের স্বপ্ন থাকে জীবনে অন্তত একবার হজ সম্পাদন করবেন। কিন্তু তা থেকেও তারা বঞ্চিত হন। যারাই এসব অনিয়ম ও প্রতারণার সাথে জড়িত থাকুকনা কেন তাদেরকে আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি দেওয়া দরকার। পাশাপাশি দুর্নীতিবাজ এজেন্সিগুলোর লাইন্সেস বাতিল করাও উচিত। সব ধরনের অনিয়ম ও হয়রানিমুক্ত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে যেন হজযাত্রীরা সুষ্ঠুভাবে হজ সম্পাদন করতে পারেন সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সকলের কার্যকর ভূমিকা প্রত্যাশা করছি। নির্বিঘœ হোক হজযাত্রা।

লেখক: শিক্ষক ও প্রাবন্ধিক

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট