চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

হৃদপিন্ডের সুস্থতায় করণীয়

ডা. জয়ব্রত দাশ

৪ অক্টোবর, ২০২১ | ১১:৫৪ অপরাহ্ণ

আপনি মহাব্যস্ত অফিস, বাসা, বন্ধু-বান্ধব, সামাজিকতা নিয়ে; কিন্তু আপনার নিজের খোঁজ-খবর রাখেন তো? আপনার হৃদপিন্ড কেমন আছে জানেন তো,হৃদপিন্ডের যত্ন নিচ্ছেন তো। যদি যত্ন নেন হৃদয় আপনার যত্ন নিবে, আপনাকে সুস্থ থাকতে সহায়তা করবে। তা না হলে হৃদয় বিদ্রোহ করবে, অকালে চলে যেতে হবে।

আপনার বুকের ভিতর স্বযত্নে আগলে রাখা ভালোবাসার এই যন্ত্রটিকে ভালো রাখতে খুব বেশি কষ্ট করতে হয় না। প্রয়োজন শুধু সামান্য সচেতনতার। আপনাকে সতর্ক খেয়াল রাখতে হবে কয়েকটি বিষয়ের ওপর।

১) প্রথমেই আপনার শরীরের ওজন উচ্চতা অনুযায়ী পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আনুন ও আপনার বিএমআই ঠিক করুন। বিএমআই পঁচিশের নীচে রাখুন। আপনার রক্তে সুগারের পরিমাণ নরমাল রাখুন। খালিপেটে ছয় মিলিমোল ভরাপেটে আট মিলিমোলের নীচে রাখুন। হিমোগ্লোবিন এওয়ান সি সাতের নীচে রাখুন। রক্তে চর্বির পরিমাণ নরমাল রাখুন। রক্তে চার ধরনের চর্বি পরীক্ষা করা হয়। টোটাল কোলেস্টেরল, এলডিএল, এইচডিএল, ট্রাইগ্লিসারাইড। চর্বি পরীক্ষার জন্য খালিপেটে রক্ত দিতে হয়।

২) মন্দ কোলেস্টেরল এলডিএল ১০০মিলিগ্রামের নিচে হলে ভাল। তবে যাদের হৃদরোগ তাদের কমাতে হবে সত্তরের নীচে। ভাল কোলেস্টেরল  এইচডিএল, যত বেশি তত ভাল, ৬০ মিলিগ্রাম এর ওপর হলে মহাভালো। ট্রাইগ্লিসারাইড ১৫০ মিলিগ্রাম এর বেশি হলে সমস্যা। হার্টের অসুখের পাশাপাশি প্যানক্রিয়াটাইটিস হবার ঝুঁকি বেশি থাকে। টোটাল কোলেস্টেরল ২০০মিলিগ্রাম এর নিচে থাকা ভালো। নাহলে চর্বিঘটিত রোগ হার্ট এটাক স্ট্রোকের সম্ভাবনা বেড়ে যাবে। কোলেস্টেরল বেশি থাকে এমন খাবার ডিমের কুসুম, খাসীর মগজ, কাকড়া, চিংড়ি, গরু খাসীর মাংস, ঘি, মাখন, বিরিয়ানি চকোলেট ও দুগ্ধ জাতীয় খাদ্য কম খেতে হবে।

৩) অনেকের পরিবারে থাকে জন্মগত উচ্চ কোলেস্টেরলের ইতিহাস। ঘন চর্বি আর কোলেস্টেরল আছে এমন খাবার বেশি খেলে, স্থুল হলে, পারিবারিক হৃদরোগের ইতিহাস থাকলে, বয়স বেশি হলে, মদ্যপান করলে, উচ্চ রক্তচাপ, থাইরয়েড ও বহুমুত্র রোগ থাকলে উচ্চমাত্রার চর্বির ঝুঁকি বেড়ে যায়। ঋতুবতী নারীদের এলডিএল কম ও এইচডিএল বেশি থাকে। এর মূলে হল স্ত্রী হরমোন ইস্টোজেন, যা কিছুটা সুরক্ষা দেয়। কিন্তু মাসিক উঠে যাবার পরে সেই সুরক্ষা আর থাকে না, ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাই চর্বি নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। কোলেস্টেরল ধমনীতে চর্বির স্তর ফেলতে থাকে শৈশব থেকেই। এরপর কোলেস্টেরল আস্তে আস্তে জমতে থাকলে ঝুঁকি বাড়ায় হৃদরোগ, স্ট্রোক, হার্ট এটাক, রক্তনালীর রোগ, আলজাইমারস ডিজিজসহ বহু রোগের।

৪) আমরা বাংলাদেশীরা যেহেতু ভাত বেশি খায় অথবা অনেকে তিন বেলা ভাত খায়, তাই আমাদের রক্তে ট্রাইগ্লিসারাইড বেশি থাকে। আর বিদেশীরা যেহেতু মাংস ও ফাস্টফুড বেশি খায় তাদের এলডিএল বেশি থাকে। রক্তে চর্বি কমাবেন কিভাবে? ডাটা ও আঁশ যুক্ত খাবার খাবেন বেশি বেশি করে। খাবেন ভাল ফ্যাট যেমন জলপাই সয়াবিন তেল।

৫) এনিমেল ফ্যাট বাদ। কেক পেস্ট্রি, নরম পানীয়, ক্রিম বিস্কিট, বেকারির খাবার, ফাস্ট ফুড বাদ। প্রোটিনের বেলায় মাছ, ডাল, সয়াবীজ, বাদাম, সীমের বীচি ও উদ্ভিজ্জ প্রোটিন খাবেন। লো ফ্যাট আর লো কার্বোহাইড্রেট ডায়েট। চিনি খাবেন খুবই কম। এলকোহল ছাড়ুন। প্রয়োজনে চর্বি কমার ওষুধ খান মেডিসিন ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে। রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখুন। রক্তচাপ ১২০/৮০ এর নীচে রাখুন। সরাসরি সুগার, মিষ্টি জাতীয় খাওয়া নিয়ন্ত্রণ করুন। রসগোল্লার লোভ সামলে নিন। আলগা লবন খাবেন না। ধুমপান ও এলকোহলকে সরাসরি না বলুন। আপনার ইউরিক এসিডের মাত্রা ছয় মিগ্রা এর নীচে রাখুন।

৬) বয়স পঞ্চাশ হলে হৃদরোগ বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে ইসিজি, ইকো, ইটিটি করে দেখে নিন হৃদপিন্ডের রক্ত চলাচল ও কর্মক্ষমতা স্বাভাবিক আছে কিনা। পরিবারের কোন সদস্যর আকস্মিক মৃত্যু অথবা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে পঞ্চান্ন বছরের আগে মৃত্যু হলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হোন। বুকে ব্যাথা, অল্পে শ্বাসকষ্ট, সিড়ি বেয়ে দুই তলার উপরে যেতে কষ্ট হলে অবহেলা না করে আপনার ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

৭) অল্প বয়সে হৃদরোগ হলে রক্ত জমাট বাধার উপকরণ পরীক্ষা করে দেখে নিন। বাচ্চাদের বাতজ্বরের ইতিহাস থাকলে নিয়মিত ইকো পরীক্ষা করে ভালব ঠিক আছে কিনা দেখে নিন ও চিকিৎসা চালিয়ে যান নির্দিষ্ট সময়মত। দৈনিক কম করে হলেও সাত ঘণ্টা ঘুমান। কাজের পাশাপাশি নিজে বিশ্রাম নিন ও হৃদয় সুস্থ রাখুন। সুস্থ হৃদয় সুস্থ জীবন।

লেখক: অধ্যাপক ডা. জয়ব্রত দাশ অধ্যক্ষ ও বিভাগীয় প্রধান মেডিসিন বিভাগ, সাউদার্ন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল

পূর্বকোণ/সাফা/পারভেজ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট