চট্টগ্রাম বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস

জনসংখ্যাকে জনসম্পদে রুপান্তরে চাই কার্যকর পদক্ষেপ

মোহাম্মদ শাহজাহান

১১ জুলাই, ২০২১ | ৮:০৫ অপরাহ্ণ

আজ বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস। ১৯৮৯ সালে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির গভর্নিং কাউন্সিল জনসংখ্যা ইস্যুতে গুরুত্ব প্রদান ও জরুরি মনোযোগ আকর্ষণের লক্ষ্যে বিশ্বব্যাপী ১১ জুলাই বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেয়। ১৯৯০ সালের ১১ জুলাই প্রথমবারের মতো ৯০টি দেশে বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস উদযাপিত হয়। এরপর থেকে প্রতিবছর দিবসটি পালিত হচ্ছে।

সময় এবং জন্ম, কোনোটাই থেমে নেই বিশ্বের সর্বোচ্চ জনঘনত্বের এই দেশে। প্রতিটি দেশের সামর্থ সমান নয়। তাছাড়া যেসব দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার বেশি সেসব দেশ উন্নত নয়। দারিদ্র্য দূর করতেই দেশগুলো যখন হিমশিম খায়, তখন জনসংখ্যা বৃদ্ধির কাজটি মোকাবিলা করা বেশ কঠিন হয়ে পড়ে। দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে অসচেনতা এবং কুসংস্কারাচ্ছন্ন মনোভাব থাকে যা জনসংখ্যা বৃদ্ধি রোধের অন্তরায় হিসেবে কাজ করে।

তবে কিশোরী বিবাহ এবং কিশোরীদের মা হওয়াই অপরিকল্পিত জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রধান কারণ। অন্য সমস্যা বাদ দিলেও, ওইটুকু বয়সে যে মেয়েটির দৌড়ঝাঁপ করে খেলার কথা, বিদ্যালয়ে যাওয়ার কথা, সেই মেয়েটিকে নিতে হচ্ছে সংসার ও সন্তান প্রজননের মতো গুরুদায়িত্ব! এ কারণেই এসব মেয়ের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে মারা যায়, বড় অংশেরই স্বাস্থ্য হয়ে পড়ে নাজুক, জীবনের স্বাভাবিক সুযোগ থেকে তারা হয় বঞ্চিত।

জনসংখ্যা বৃদ্ধির দিক থেকে এশিয়ায় মধ্যে দ্রুতদের তালিকায় রয়েছে ভারত। ২০১৭ সালে জাতিসংঘের একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায় যে ২০৫০ সালে বিশ্বের জনসংখ্যা হবে ৯৮০ কোটি। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী দেশের মানুষের প্রত্যাশিত আয়ুষ্কাল বেড়ে হয়েছে ৭২ দশমিক ৬ বছর। পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর তথ্যানুসারে, দেশে বর্তমানে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১ দশমিক ৩৭ শতাংশ। এক বছরের কম বয়সী শিশুর মৃত্যুহার (প্রতি হাজার জীবিত জন্মে) ১৬ এবং মাতৃমৃত্যু হার ১ দশমিক ৬৯ শতাংশ। সক্ষম দম্পতিদের মধ্যে বর্তমানে ৭৭ দশমিক ৯৬ শতাংশ দম্পতি পরিবার পরিকল্পনা গ্রহণ করে।

সূত্র জানায়, দেশে এখনও অনেক ক্ষেত্রে পরিবার থেকে কন্যাশিশুর বিয়ের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এমনকি বিয়ের পর সন্তান নেয়ার ক্ষেত্রেও তাদের কোনো ভূমিকা থাকে না। এসবের কারণে একদিকে বাল্যবিবাহ, সন্তান নেয়া, মাতৃমৃত্যু, নবজাতকের মৃত্যু ইত্যাদি ক্ষেত্রে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। অন্যদিকে এটি মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।

জনসংখ্যা দেশের সম্পদ নাকি বোঝা- বিষয়টি দীর্ঘদিন ধরেই আলোচিত। জনসংখ্যা দারিদ্র্য সৃষ্টি করে কিনা নির্ভর করে জনসংখ্যাকে কীভাবে তৈরি করা হয় তার ওপর। যেমন প্রতিটি মানুষ যদি শিক্ষা লাভের আওতায় আসে, প্রযুক্তি জ্ঞানের অধিকারী হয় এবং আত্মনির্ভরশীল হওয়ার প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হয় তাহলে সে নিজেকে সম্পদ হিসেবেই গড়ে তোলে।

প্রতিটি মানুষই একজন সম্পদ। এ জন্য তাকে পর্যাপ্ত সুযোগ দিতে হবে। সবসময় রাষ্ট্রের এই সক্ষমতা পুরোপুরি থাকে না। ক্রমে তা অর্জন করতে হয়। বিশাল জনসংখ্যার চ্যালেঞ্জ নিয়েই বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে যদি বাসস্থানের সুযোগ, কাজের নতুন নতুন ক্ষেত্র তৈরি, আবাদী জমি রক্ষা, পুকুর ডোবা ভরাট থেকে বিরত থাকাসহ নানা পদক্ষেপ নিতে না পারলে সমাজে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হবে।

বর্ধিত জনসংখ্যার জন্য সবকিছুই প্রয়োজন যা একজন নাগরিক রাষ্ট্রের কাছে দাবি করতে পারে। ক্রমেই সেই চাহিদা বৃদ্ধি পাবে। আজ যেমন পথশিশুরা অবহেলায় বা অনাদরে বড় হচ্ছে, যাদের এই সমাজে শিক্ষা থেকে সবকিছু পাওয়ার কথা ছিল কিন্তু তা পাচ্ছে না। এ ধরনের অধিকার না পাওয়াদের সংখ্যাও বাড়তে থাকবে। যা আমাদের দেশের উন্নয়ন কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করবে।

শুধু তাই নয়, সমাজে তখন বিশৃঙ্খলা দেখা দিতে পারে, অস্থিরতা বাড়তে পারে, দ্বিধাগ্রস্ত যুবকের সংখ্যা বাড়তে পারে যারা আমাদের দেশের সম্পদ হতে পারতো। কিন্ত তাদের সেই মেধা, সেই যোগ্যতা কাজে না লাগাতে পারলে জনসম্পদ রূপান্তর করা কঠিন হয়ে পড়বে। সুতরাং জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমকে সফল করতে হলে সবার মধ্যে চাই সচেতনতা। সচেতন না হলে কোনো কার্যক্রমই ফলপ্রসূ হবে না।

লেখক: মোহাম্মদ শাহজাহান ব্যাংকার, প্রাবন্ধিক, পরিবেশ-মানবাধিকারকর্মী।

পূর্বকোণ/সাফা/পারভেজ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট