চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

ডা. এ. এ. গোলাম মর্তুজা হারুনের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ

অধ্যাপক (ডা.) মো. আবদুল মোত্তালিব

৩০ মে, ২০২১ | ৩:৪১ পূর্বাহ্ণ

একজন সফল উদ্যোক্তা, একজন দক্ষ সংঘটক, অত্যন্ত দুরদর্শী এক মেধাবী চিকিৎসক ডা. এ. .এ. গোলাম মর্তুজা হারুন আর আমাদের মাঝে নেই। তিনি গত ২৯ মে ২০২১ রাত ৩টায় চট্টগ্রামের একটি বেসরকারী হাসপাতালে (সিএসসিআর) চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন। তার জন্ম ২৭ মার্চ ১৯৫২। তিনি করোনা আক্রান্ত হয়ে করোনা জয় করলেও করোনা পরবর্তি নানা শারীরিক জটিলতার কাছে অবশেষে হেরে গেলেন। তার পিতা জনাব এ. এ. গোলাম আহমেদ বৃহত্তর সিলেটের মৌলভীবাজার এর অধিবাসী তৎকালীন আসাম-বেঙ্গল রেলওয়ের উর্ধতন কর্মকর্তা ছিলেন। ভারত বিভাজনের পর বদলী হয়ে চট্টগ্রাম আসেন এবং চট্টগ্রামেই স্থায়ী বাসিন্দা হয়ে যান। তার মাতার নাম মোমেনা খানম। অবশ্য দু’জনেই আজ বেঁচে নেই। ডা. হারুন চট্টগ্রামের কলেজিয়েট স্কুল, উচ্চমাধ্যমিক কলেজ (বর্তমান মহসিন কলেজ) থেকে অত্যন্ত কৃতিত্বপূর্র্ণ ফলাফল নিয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন। এমবিবিএস ডিগ্রী অর্জনের পর যথারীতি আর দশজনের মতোই সরকারী চাকরীতে যোগদান করেন। চাকুরী জীবনের প্রথম দিনেই সরকারী চাকুরীর বাঁধাধরা নিয়মে নিজেকে আবদ্ধ না রেখে সরকারী চাকুরীতে ইস্তফা দিয়ে চট্টগ্রাম শহরে ফিরে আসেন।
সফল উদ্যোক্তা : তিনি নিজে এবং আরো তিনজন মিলে চট্টগ্রামে প্রথম সফল বেসরকারী হাসপাতাল ‘ফেয়ার হেলথ’ প্রতিষ্ঠা করেন। তার আন্তরিক প্রচেষ্ঠায় ‘ফেয়ার হেলথ’ চট্টগ্রামের বেসরকারী চিকিৎসাসেবায় একটি ‘প্রতীক’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। এ সাফল্য তাকে চট্টগ্রামে রোগ নির্ণয়ে এক যুগান্তকারী উদ্যোগ নিতে সাহসী করে তোলে। তার পিতার একমাত্র বাড়িটি ব্যাংকে বন্ধক রেখে কয়েকজন ব্যবসায়ী সহযোগীকে নিয়ে বাংলাদেশের প্রথম কম্পিউটারাইজড ক্লিনিক্যাল ল্যাবরেটরি তথা শেভরন ক্লিনিক্যাল ল্যাবরেটরি প্রতিষ্ঠা করেন, যা তৎকালীন সময়ে ঢাকাসহ দেশের প্রতিথযশা চিকিৎসকদের কাছে এক বিস্ময়কর উদ্যোগ হিসেবে বিবেচিত হয়েছিল। ঢাকার তৎকালীন নামীদামী চিকিৎসকরা এই ক্লিনিক্যাল ল্যাবকে ঢাকায় স্থানান্তরের অনুরোধ করা স্বত্বেও তিনি অনেক প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে চট্টগ্রামেই থেকে গেলেন। তিনি ১৯৯৮ থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত শেভরন ক্লিনিক্যাল ল্যাব এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে সফলতার সহিত দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও তিনি একটি ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানিসহ অনেকগুলো ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সফল উদ্যোক্তা ছিলেন এবং অনেক মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেন।
ক্রীড়াবিদ এবং ক্রীড়া সংঘটক : তিনি নিজে নিয়মিত খেলাধুলায় অংশগ্রহণ করতেন এবং বিশেষত ক্রিকেটের প্রতি ছিল তার আজন্ম ভালোবাসা। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে ক্রিকেট টিম গঠন করেন এবং তার নেতৃত্বে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ক্রিকেট টিম একসময় চট্টগ্রাম স্টেডিয়ামে ক্রিকেট টুর্নামেন্টে নিয়মিত অংশগ্রহণ করতো।
পেশাজীবী সংঘটন এবং সামাজিক সংঘটনের নেতৃত্ব : চট্টগ্রামের সর্বস্তরের চিকিৎসকদের শ্রদ্ধা ভালোবাসায় অভিষিক্ত হয়ে বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন চট্টগ্রাম শাখার ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং পরবর্তীতে বিএমএ চট্টগ্রাম শাখার প্রেসিডেন্ট হিসেবে দেশের সবচেয়ে বড় পেশাজীবী সংঘটনের সফল একজন নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। চিকিৎসক হয়েও সকল স্তরের মানুষের সাথে ছিল তার হৃদ্যতা। যার ফলশ্রুতিতে চট্টগ্রাম ক্লাব লিমিটেড এর ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে দু’দুবার নির্বাচিত হন। ডা. হারুন আজ আমাদের মাঝে নেই। মহান আল্লাহ্ তাকে জান্নাতবাসী করুন এবং তাঁর পরিবারের সদস্যরা এই শোক যেন কাটিয়ে উঠতে পারেন সেই কামনা করি।

অধ্যাপক (ডা.) মো. আবদুল মোত্তালিব চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের মানসিক বিভাগের প্রাক্তন বিভাগীয় প্রধান।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট