চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

অক্সিজেন মোড়ের জ্যাম ও জনদুর্ভোগ

জহিরুদ্দীন মো. ইমরুল কায়েস

২৮ জুন, ২০১৯ | ১:১৬ পূর্বাহ্ণ

দি ন দি ন অ ক্সি জে ন মোড়ের জ্যাম ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। উপর্যুপরী ট্রাফিক জ্যামে অক্সিজেন মোড়ের জ্যামে নাকাল হচ্ছে উত্তর চট্টগ্রামের লাখ লাখ মানুষ। চট্টগ্রাম-হাটহাজারী-নাজিরহাট-ফটিকছড়ি-নারায়ণহাট-হেঁয়াকো-রামগড়-খাগড়াছড়ি, চট্টগ্রাম-রাউজান-রাঙ্গুনীয়া-কাপ্তাই-রাঙ্গামাটির বাস স্ট্যান্ড এবং সিএনজি স্ট্যান্ড দুটি অক্সিজেনের মোড়ে অবস্থিত। বাস স্ট্যান্ডের জন্য আলাদা কোন জায়গা নেই। সেজন্য যাত্রীপানে অগণিত বাস ও শতশত সিএনজি অক্সিজেনের মোড়ে ঠাঁই দাঁড়িয়ে থাকে।
বছরখানেক ধরে জ্যামের অস্থিত্ব লক্ষ্য করা যায়। গত ঈদে অক্সিজেন মোড়ের জ্যামে পরিবার পরিজন নিয়ে মানুষ অনেক কষ্ট পেয়েছে। চারিদিকে শুধু গাড়ী আর গাড়ী। নিজ গন্তব্যে পৌঁছতে গিয়ে ভোররাত থেকেই মানুষ গোলক ধাধাঁর জ্যামে ৪-৫ ঘণ্টা আটকা পড়েছিল। অক্সিজেনের মোড়ের এ জ্যামে মানুষ সত্যিই এখন বিপর্যস্ত। অক্সিজেন-বায়েজীদ বোস্তামী সড়ক, অক্সিজেন-মুরাদপুর সড়ক, অক্সিজেন-বঙ্গবন্ধু এভিনিউ সড়ক (সাবেক অক্সিজেন-কুয়াইশ সংযোগ সড়ক) তিনটিই চারলেনের। মোট বার লেনের গাড়ী ধাবিত হচ্ছে চারলেনের একটি মাত্র চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি-রাঙ্গামাটি সড়কে। বার লেনের গাড়ীকে চারলেনে ধারণ করা কোনভাবেই সম্ভব নয়। এ সড়কের বিকল্প সড়কও নাই। অন্যদিকে অক্সিজেনের মোড়ে আছে ভ্রাম্যমাণ বাস-ট্যাক্সি টার্মিনাল। আছে ট্রাক স্ট্যান্ড, রিকশা স্ট্যান্ড, টেম্পো স্ট্যান্ডও। সাথে গাড়ী ধরার জন্য হাজার হাজার মানুষের পদচারণা। কোথাও তিল ধারণের জায়গা নেই। সবকিছু মিলে এ জায়গাটি এখন অতিশয় বেদনাদায়ক এলাকায় পরিণত হয়েছে। জঘন্য জ্যামে মানুষ প্রায়শই দুর্ঘটনায় পতিত হচ্ছে। কর্মক্ষেত্রে গমনেচ্ছু মানুষ ও স্কুল কলেজে যাতায়াতরত ছাত্র-ছাত্রীরা পাঠশালায় সময়মত পৌঁছতে পারছে না। জরুরী রোগী নিয়ে এ্যাম্বুলেন্স এবং ফায়ার ব্রিগেডের গাড়ীও আটকে যাচ্ছে। বায়েজীদ বোস্তামী রোডের রেল ক্রসিংটি অক্সিজেন মোড়ের খুব কাছাকাছি হওয়ায় জ্যামের পরিধিকে আরো বিস্তৃত করেছে।
এই জঠিল জায়গায় সুচারুভাবে গাড়ী চলাচল ব্যবস্থা করা ট্রাফিক পুলিশের পক্ষে সম্ভব নয়। ট্রাফিক পুলিশ রাত-দিন উপস্থিত থাকলেও অবকাঠামোগত অপ্রতুলতার দরুণ এখানে তাঁদেরও বেশি কিছু করার নেই। চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি এবং রাঙ্গামাটি রুটের জন্য সুবিধাজনক জায়গায় পূর্ণাঙ্গ বাস টার্মিনাল নির্মাণ এখন সময়ের দাবী। যদিওবা এই রুটের জন্য একটি পরিপূর্ণ বাস টার্মিনাল নির্মাণ করা অনেক আগেই দরকার ছিল। মুরাদপুরে একসময় এই রুট দুটির ভ্রাম্যমাণ বাস স্ট্যান্ড ছিল। ঐ সময়েও যাত্রিদের ভোগান্তি ছিল। এখন ভোগান্তি কয়েকগুণ বেড়েছে। প্রশাসন অনতি বিলম্বে ভ্রাম্যমাণ বাস/ট্যাক্সি স্ট্যান্ড দুটি সরিয়ে না দিলে কোন ট্রাফিক ব্যবস্থা এখানে কাজ করবে না। পরিবার পরিজন নিয়ে এ বাস স্ট্যান্ডে গাড়ীতে উঠা এবং গন্তেব্যে পৌঁছা কত কষ্টের তা সংশ্লিষ্ট ভুক্তভোগীরাই জানেন। ভ্রাম্যমাণ বাস টার্মিনাল হওয়ার দরুণ এখানে কোন ওয়াস রুম বা শৌচাগারের ব্যবস্থা নাই।
মোটকথা যাত্রীসেবার ন্যূনতম নাগরিকসুবিধা এ বাস স্ট্যান্ডে নেই। ভ্রাম্যমাণ বাস স্ট্যান্ডকে ঘিরে রাস্তার পশ্চিম পার্শ্বে গড়ে উঠেছে অনেক অবৈধ দোকান। এ অবৈধ দোকানগুলো গাড়ী চলাচলের রাস্তাকে আরো সংকুচিত করেছে। অনতিবিলম্বে এই অবৈধ দোকানগুলোকে উচ্ছেদ করে রাস্তাকে আরো উন্মুক্ত করা প্রয়োজন। মানুষের জীবনে গতি না থাকলে কাজের গতিও স্থবির হয়ে পড়ে। অযাচিত ট্র্যাফিক জ্যামে হাজার হাজার মানুষের কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। সাথে কোটি কোটি টাকার জ্বালানী বিনাকারণে অনুৎপাদনশীল খাতে নিঃশেষিত হচ্ছে। আমদানীকৃত জ্বালানীগুলো অনর্থক নষ্ট হওয়ায় আমাদের কষ্টার্জিত বৈদেশিক মুদ্রারও অপচয় হচ্ছে। ট্রাফিক জ্যাম আমাদের সামষ্টিক অর্থনীতিতে বড় প্রভাব ফেলে এতে সন্দেহের অবকাশ নাই। সিডিএর তত্ত্বাবধানে চট্টগ্রাম শহরে অনেক ফ্লাইওভার নির্মিত হয়েছে। জ্যাম নিরসনকল্পে অক্সিজেন মোড়েও ফ্লাই ওভারের প্রয়োজন আছে বলে মনে হয়। সম্ভ্যাব্যতা যাচাই করে সিডিএ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ওড়ালসেতু নির্মাণ করলে জ্যাম কিছুটা সহনীয় পর্যায়ে নেমে আসত বলে প্রতীয়মাণ হয়।
অক্সিজেন মোড়ের জ্যামকে গতানুগতিক ট্রাফিক জ্যাম মনে করার কোন কারণ নেই। জরুরী ভিত্তিতে বিকল্প সড়ক বা পরিকল্পিত কিছু অবকাঠামো তৈরি না করলে পরিস্থিতি আরো জটিল হবে।
লেখক : পরিবেশকর্মী, কলাম লেখক।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট