চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

স্বাস্থ্যকর পরিবেশের জন্য নেই নির্মল বাতাস

মোহাম্মদ ইলিয়াছ

২৬ জুন, ২০১৯ | ১২:৫৫ পূর্বাহ্ণ

বাতাস অস্বাস্থ্যকর হওয়া মানে মানব জাতি বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়া। আমরা বিভিন্ন কারণে বাতাসকে দূষিত করে ফেলছি। যেখানে-সেখানে ময়লা-আর্বজনা ফেলা এবং আবর্জনাকে দ্রুত সংরক্ষণ না করা, অপরিকল্পিত নগরায়ন, যানবাহন-কলকারখানার কালো ধোঁয়া, ইত্যাদিকে দায়ি করা হচ্ছে।
অন্যদিকে, জলবায়ুও পরিবর্তনের ফলে বায়ুমন্ডলীয় অবস্থার পরিবর্তন ঘটছে। বায়ুমন্ডলীয় অবস্থার পরিবর্তনের কারণে বায়ু দূষণের প্রভাব আরো খারাপ হচ্ছে। চিকিৎসকের মতে, বায়ুদুষণের কারণে ফুসফুসের ক্যান্সার, হার্ট অ্যাটাক, অ্যাজমা. ব্র্রংকাইটিসসহ শ্বাস-প্রশ্বাস জণিত বিভিন্ন রোগ হতে পারে। ইতিমধ্যে আমরা লক্ষ্য করছি পৃথিবীর বড় বড় শহরগুলোর বাতাস খুবই অস্বাস্থ্যকর হচ্ছে। আন্তর্জাতিক পরিবেশবাদী সংস্থা গ্রিন পিস-এর মতে পৃথিবীর ৩ হাজার ৯৫টি শহরের মধ্যে ৩০টি শহর বেশি দূষিত হয়েছে। দেশের শহরাঞ্চলের বাতাসে খুবই অস্বাস্থ্যকর ক্ষতিকর উপাদান রয়েছে। বাতাসে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর উপাদান পার্টিকুলেট ম্যাটার ২ দশমিক ৫ নামে পরিচিত এক ধরণের সূক্ষ্ম কণা।
বাতাসের এই কণা খুব সহজেই নি:শ্বাসের মাধ্যমে আমাদের শরীরে প্রবেশ করে। বিশেষজ্ঞদের মতে, পার্টিকুলেট ম্যাটার বা পিএম ২ দশমিক ৫ এর মাত্রা ৫০ এর উপওে উঠলে তা হবে মারাত্মক ক্ষতিকর। জরিপে বলা হয়েছে চলতি বছরে বায়ু দুষণের প্রভাবে বিশ্বের প্রায় ৭০ লাখ মানুষের অকাল মৃত্যু ঘটতে পারে। বায়ু দুষণ আমাদের জীবিকা এবং ভবিষ্যৎ ধ্বংস করে দিচ্ছে। বায়ু দুষণের কারণে বিশ্বব্যাপী চিকিৎসা খরচ পড়েছে প্রায় ২২৩ বিলিয়ন ডলার।
আমাদের স্বাস্থ্যেও মারাত্মক প্রভাব পড়ছে। বায়ূ দুষণ কিন্তু আমরা নিজেরাই সৃষ্টি করছি। বাসা-বাড়ির ভাড়াটিয়াদের জমানো ময়লা-আবর্জনা ফেলছি আরেক বাসা বা জনবসতির পাশে খোলা আকাশের নিচে। কোন মার্কেট কিংবা বাণিজ্যিক এলাকার জমানো আবর্জনা ফেলছি চলাচলের রাস্তার কিংবা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশে। কিন্তু চিন্তা করি না যে, ছুঁড়ে ফেলালো ময়লা-আবর্জনা আশপাশের পরিবেশকে অস্বাস্থ্যকর করে তুলছে।
এভাবে তো মানুষের জীবন চলতে পারে না। নির্মল বাতাসে মানুষকে বাঁচতে হবে। কিন্তু নির্মল বাতাস পাবো কোথায়? অবশ্যই নির্মল বাতাস আমাদেরকে পেতে হবে। আমাদের জন্য এবং আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য নির্মল বাতাস আমাদেরকে তৈরী করতে হবে। কিভাবে তৈরী করব তা জানতে হবে। সেখানে-সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলবো না। ময়লা-আবর্জনা থেকে গন্ধ বের হয় সে অবস্থায় ময়লা-আবর্জনা রাখব না। জীবাণু ধ্বংসকারী ও দুর্গন্ধ বের হবে না এমন উপকরণ মিশ্রিত ড্রামে ময়লা আবর্জনা ফেলার ব্যবস্থা করতে হবে।
ড্রামের ময়লাগুলো কিভাবে সার হিসেবে তৈরী করা যায় তার ব্যবস্থা নিতে হবে। এক্ষেত্রে উন্নত প্রযুক্তির ব্যবস্থা নিতে হবে। উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে বিশ্বের কোন দেশ ময়লা-আবর্জনাকে দুর্গন্ধ মুক্ত রেখেছে তার ধারণা নিতে হবে। ময়লা-আবর্জনাকে কিভাবে কাজে লাগানো যায় সেই ধারণাও নিতে হবে। তবে এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন মানুষের সচেতনতা। মানুষ সচেতন হলে ময়লা-আবর্জনা সঠিক স্থানে ব্যবহার সম্ভব।
কলকারখানার কালো ধোঁয়া, যেখানে-সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলা, অপরিকল্পিত ইটভাটা, যানবাহনের কালো ধোঁয়া ইত্যাদি বন্ধ করতে হবে। মানুষকে এ ব্যাপারে সচেতন হবে। প্রয়োজনে প্রতিরোধ গড়ে করতে হবে।
স্বাস্থ্যকর পরিবেশে আমাদের বসবাসের পরিবেশ আমাদেরকে তৈরি করে নিতে হবে। এজন্য নির্মল বাতাস বেশি প্রয়োজন।

লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, আলহাজ্ব মোস্তফিজুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, লোহাগাড়া, চট্টগ্রাম।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট