চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

ঝুঁকির মুখে সুন্দরবন

সাইমুম চৌধুরী

২১ জুন, ২০১৯ | ১:২৩ পূর্বাহ্ণ

জাতি সংঘের বিজ্ঞান, শিক্ষা ও ঐতিহ্য বিষয়ক সংস্থা ইউনেসকোর মতে, বিশ^ ঐতিহ্যম-িত বাংলাদেশের সুন্দরবন বর্তমানে ঝুঁকিপূর্ণ তালিকায় রয়েছে। আন্তর্জাতিক সংস্থাটি কেন এমন ধারণা পোষণ করেছে তা নিয়ে বিস্তারিত একটি প্রতিবেদন সদ্য প্রকাশিত একটি জাতীয় দৈনিকে দেখতে পেলাম।
আন্তর্জাতিক সংস্থা ইউনেসকোর বিশ^ ঐতিহ্য বলে আসছে বিশ^ ঐতিহ্যের সম্মান অটুট রাখতে রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাজ বন্ধ রাখা ও এর চারপাশের শিল্প কারখানা তৈরীর অনুমোদন না দেয়ার অঙ্গীকার বাস্তবায়নে বাংলাদেশ সরকারের অগ্রগতি খুবই ধীর। তাছাড়া, সরকার সুন্দরবনের ২০ কিলোমিটারের মধ্যে দু’টো কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের কাজ এগিয়ে নিচ্ছে যা সুন্দরবনের জন্য হুমকি বললে ভুল হবে না। জুনের মধ্য সপ্তাহে বিশ^ ঐতিহ্য কমিটি সুন্দরবনকে ঝুঁকিপূর্ণ বিশ^ ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করেছে বলে প্রকাশ। ৩০ জুন থেকে ১০ জুলাই পর্যন্ত আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে বিশ^ ঐতিহ্য কমিটির বার্ষিক সাধারণ সভা হবে। ওই সভায় বিশ^ ঐতিহ্য কমিটির কাছে সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য সুপারিশ হিসেবে ১০৪ পৃষ্ঠার একটি খসড়া উপস্থাপন করার কথা রয়েছে। ওই সভায় সুন্দরবনকে বিশ^ঐতিহ্য রক্ষায় বাংলাদেশের প্রতিবেদন, বিশ^ ঐতিহ্য কমিটির পর্যালোচনায় আলোচনা হবে। উল্লেখ্য, ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশ সরকারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সুন্দরবনকে বিশ^ ঐতিহ্যের সম্মান দেয় ইউনেসকো। তাতে শর্ত ছিল এই বনের জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি হয় এমন কোনো তৎপরতা চালানো যাবে না। শর্ত লংঘনের কারণে সুন্দরবনের ক্ষতি হলে বিশ^ ঐতিহ্যের সম্মান আর থাকবে না। এ বিষয়ে সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক সুলতানা কামাল পত্রিকার প্রতিবেদককে বলেন, বাংলাদেশ সুন্দরবনের বিশ^ ঐতিহ্য ধরে রাখতে বেশ কিছু নিয়ম ও শর্ত পালনে অঙ্গীকার করেছিল। সেগুলো লঙ্ঘন হলে এবং সুন্দরবনের প্রাকৃতিক সম্পদের অপূরণীয় ক্ষতি হলে সেই সম্মান আর থাকবে না। তবে, এখনো সময় শেষ হয়ে যায় নি বলে মনে করেন সুলতানা কামাল। তিনি আরো বলেন, সরকারের উচিত হবে বিশ^ ঐতিহ্য কমিটির সভায় রামপালসহ সুন্দরবনের চারপাশের শিল্প কারখানাগুলো বাতিলের বিষয়ে নতুন করে অঙ্গীকার করা। একই সঙ্গে সুন্দরবন রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া। কিন্তু অবাক হতে হয়, ইউনেসকো’র সিদ্ধান্তের সাথে একমত পোষণ করছে না সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী। তিনি বলেন, রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র সুন্দরবন থেকে ১৩ কিলোমিটার দূরে।
তিনি আরো বলেন বিশে^র অনেক দেশেই বনের পাশে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র রয়েছে। সেখানে বনের কোনো ক্ষতি হচ্ছে না। পত্রিকার শেষাংশে পরিবেশিত খবরে জানা যায়, গেল বছরের এপ্রিলে সরকার সুন্দরবনের চারপাশে ১০ কিলোমিটারের মধ্যে ১৯০টি শিল্প-কারখানার অনুমোদন দিয়েছে। প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন হিসেবে চিহ্নিত ওই এলাকায় ১৫৪টি শিল্পকারখানা চালু রয়েছে।
এখন প্রশ্ন, হাজার হাজার বছর যাবৎ সুন্দরবনে বসবাসরত জীবজন্তুগুলো কি শান্তিতে নিরাপদে আর বনে থাকতে পারবে? দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের কথা ভেবে বনের পশুগুলোকে বন ছাড়া করা এ কোন ধরনের আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত? মহান সৃষ্টিকর্তা তার সৃষ্ট পশুগলো থাকার জন্যই বন সৃষ্টি করেছেন। আর, এই বন হাজার বছর পর আমরা ধ্বংস করতে চলেছি। বিষয়টি ভেবে দেখার ভার আম জনতার।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট