চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

ডিপথেরিয়ার প্রতিকার ও সচেতনতা

অধ্যক্ষ ডা. রতন কুমার নাথ

২০ জুন, ২০১৯ | ১:০৬ পূর্বাহ্ণ

ডিপথে রিয়া একটি মারাত্মক সংক্রামক ব্যাধি। এ রোগে শিশুরাই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আক্রান্ত হয়ে থাকে। কখই জীবাণু থেকে এটা সংক্রামিত হয়ে থাকে। এ জীবাণুর বিষের প্রভাবে প্রধানত রক্ত সংবহন অচল হয়ে যায় এবং পক্ষাঘাত হয়ে থাকে। ডিপথেরিয়ার জীবাণু বংশধারা অনুসারে ৩ প্রকারের হয়ে থাকে। ১) গ্রাভিস ২) ইন্টারমিডিয়াস এবং ৩) মিটিস। এর মধ্যে প্রথম দু’টি বেশি ক্ষতিকারক। তৃতীয়টি বিষক্রিয়াহীন। তবে কখনো কখনো তৃতীয়টিও বিষ উৎপাদন করতে পারে। আবার কখনো বা ১ম দুটিও বিষ উৎপাদন ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। এ রোগ সারা পৃথিবীতেই হয়ে থাকে। হেমন্ত ও শীতকালেই এটির প্রাদুর্ভাব ঘটে বেশী। কিন্তু আমাদের দেশে এ রোগের প্রকোপ দেখা যায় প্রায় সারাবছরেই। ৬ মাস বয়সের আগে সাধারণত কোন শিশু এ রোগে আক্রান্ত ঞয় না। ২ থেকে ১০ বৎসর বয়সীদের বেশী হয়ে থাকে। কখনও সরাসরি রোগী থেকে কখনও রোগীর ব্যবহার করা জিনিষপত্র থেকে, দূষিত খাবার, হাঁচি-কাশি ও থুথু থেকে বিভিন্নভাবে এটা সংক্রমিত হয়ে থাকে। জীবাণুগুলো যথেষ্ট তাপ ও ঠা-া সহ্য করতে পারে। শুকিয়ে গেলেও বেঁচে থাকে। সংক্রমণের জায়গায় বসেই এগুলো বংশবৃদ্ধি করে থাকে। গলার ভিতরে, স্বরযন্ত্রে, নাকে, কানে, কংজাংটিভাতে, দেহের যেকোন ক্ষতস্থানে ও যোনিপথে ও ডিপথেরিয়া বাসা বাঁধতে পারে। প্রতিটি স্থানের নাম অনুযায়ী রোগের নামকরণ করা হয়। জীবাণু প্রবেশ করার ২ থেকে ৫ দিনের মধ্যেই রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায়। তবে এ সময়কাল ১ থেকে ১০ দিনও হতে পারে। টনসিলের স্থানে বা স্বরযন্ত্রের কাছে এ পর্দা তৈরী হলে শিশুর স্বাভাবিক শ^াস প্রশ^াস বাধাগ্রস্ত হয়ে জীবন বিপণœ করে তোলে। ডিপথেরিয়ার জীবাণুগুলো ‘একসোটকসিন’ নামক এক প্রকার ক্ষতিকর পদার্থ নিঃসরণ করতে থাকে। শরীরের বিভিন্ন অংশের কোষে এ পদার্থ ছড়িয়ে পড়ে এবং কোষকে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত করে তোলে। আক্রান্ত রোগীদের শরীর ম্যাজমেজে অস্বস্তিভাব করবে, দুর্বলতা দেখা দেবে, ঢোক গিলতে কষ্ট হবে, সামান্য জ¦র ও মাথাব্যথা হবে, হাতে ও পায়ে ব্যথা অনুভব করবে। মায়ের বুকের দুধ টানতে শিশুদের কষ্ট হবে, গলার স্বর ভেঙ্গে যাবে, কাশতে থাকবে। মারাত্মক আকার ধারণ করলে রোগী ছটফট করবে, উত্তেজিত ও ফ্যাকাশে হয়ে পড়বে। মুখ হাঁ করে থাকবে, গলার চারপাশের গ্রন্থি প্রদাহের দরুন গলা ফুলে যাবে, বার বার বমি হবে, খাওয়া কষ্টকর হবে, প্রস্রাবের সাথে এলবুমেন বেরিয়ে আসবে,নাড়ির গতি দ্রুততর হবে, রক্তচাপ কমে আসবে, শ^াসপ্রশ^াসের গতি দ্রুততর ও কষ্টকর হবে। রোগীর মুখম-ল নীলাভ হতে থাকবে, নাক থেকে রক্ত মেশা সর্দি বেরুবে, মুখের ভিতর ও রক্তপাত দেখা যেতে পারে। এরকম অবস্থায় হৃদপিন্ড অচল হয়ে ৫ থেকে ২১ দিনের মধ্যে রোগীর মৃত্যু হতে পারে।
জীবাণু থেকে ‘এক্সোটেক্সিন’ নিঃসরণ ঘটায় হৃদপিন্ড ও ¯œায়ুতন্ত্রের নানা জটিলতা সৃষ্টি করে। হৃদপিন্ড দুর্বল হয়ে যায় এবং হার্ট ফেল করার সম্ভাবনা থাকে। ¯œায়ুপ্রদাহ হবার ফলে পক্ষাঘাত দেখা দেয়। আলজিবে পক্ষাঘাত হলে নাক দিয়ে পানি বেরিয়ে আসবে। মাংশপেশীতে পক্ষাঘাত হলে রোগী ঢোক গিলতে পারে না। স্বরযন্ত্রে হলে গলা বসে যাবে। অক্ষি গোলকের ছোট ছোট মাংসপেশীতে পক্ষাঘাত হলে রোগীকে চোখ ট্যারা দেখাবে। এছাড়াও হাত-পা ও দেহের অন্যান্য স্থানেও পক্ষাঘাত হতে পারে। এ রোগের ক্ষেত্রে প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধই উত্তম। ডিপথেরিয়া প্রতিরোধে কার্যকর টিকা “ট্রিপল এন্টিজেন” আবিষ্কৃত হয়েছে। আমাদের দেশের স্বাস্থ্যকেন্দ্র গুলোতে এগুলি পাওয়া যায়।
হোমিওপ্যাথিক প্রতিবিধান : ডিপথেরিয়ায় হোমিওপ্যাথিক ওষুধের প্রয়োগ সংকেত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এ রোগে যে সমস্ত হোমিওপ্যাথিক ওষুধ ব্যবহৃত হয়ে থাকে তার মধ্যে ১) ডিপথেরিনাম, ২) মার্কুরিয়াস সিয়ানেটাস ও ৩) ফাইটোলক্কা উল্লেখযোগ্য।
এছাড়াও ১) ল্যাক ক্যানাইনাম ২) বেলেডোনা, ৩) মাকুরিয়াস বিন আয়োড ৪) ক্যালি বাইক্রস, ৫) এমন কষ্টিকাম ৬) এসিড কার্বলিক, ৭) এসিড মিউর ৮) এসিড নাইট্রিক ৯) এপিস মেল ১০) ক্যালি-ক্লোরিকাম, ১১) এরাম-ট্রাইফাই নাম ও ১২) ল্যাকেসিস লক্ষণ ভেদে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

লেখক : সাবেক অধ্যক্ষ, ডা. জাকির হোসেন হোমিওপ্যাথিক মেডিক্যাল কলেজ-চট্টগ্রাম।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট