চট্টগ্রাম বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

কোরআন ও হাদিসের আলোকে সালামের গুরুত্ব ও ফজিলত

  মো. দিদারুল আলম 

২২ জানুয়ারি, ২০২১ | ১২:৪৮ অপরাহ্ণ

কোরআন ও হাদিসে সালামের গুরুত্ব ও ফজিলত অসীম। আল্লাহতাআলা বলেন, ‘হে মুমিনগণ, তোমরা নিজদের গৃহ ছাড়া অন্য কারও গৃহে প্রবেশ করো না, যতক্ষণ না তোমরা অনুমতি নেবে এবং গৃহবাসীদেরকে সালাম দেবে। এটাই তোমাদের জন্য কল্যাণকর, যাতে তোমরা উপদেশ গ্রহণ কর’। (সূরা নূর, আয়াত: ২৭] আল্লাহ্ধসঢ়;তাআলা আরও বলেন, ‘তবে তোমরা যখন কোন ঘরে প্রবেশ করবে তখন তোমরা নিজদের ওপর সালাম করবে, আল্লাহর পক্ষ থেকে বরকতপূর্ণ ও পবিত্র অভিবাদনস্বরূপ’। [সূরা নূর, আয়াত: ৬১]

আল্লাহতাআলা আরও বলেন, ‘আর যখন তোমাদেরকে সালাম দেয়া হবে তখন তোমরা তার চেয়ে উত্তম সালাম দেবে। অথবা জবাবে তাই দেবে’। [সূরা নিসা, আয়াত: ৮৬] ‘‘এক ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রশ্ন করল, হে আল্লাহর রাসূল! ইসলামে কোন আমলটি সর্বউত্তম? উত্তরে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বললেন, মানুষকে খানা খাওয়ানো এবং তুমি যাকে চিনো আর যাকে চিনো না সবাইকে সালাম দেয়া”। [বুখারি ও মুসলিম]।

রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বলেন, ‘তোমরা ততক্ষণ পর্যন্ত জান্নাতে প্রবেশ করবে না যতক্ষণ পর্যন্ত তোমরা পরিপূর্ণ ঈমানদার হতে পারবে না। আর ততক্ষণ পর্যন্ত তোমরা পরিপূর্ণ ঈমানদার হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত তোমরা একে অপরকে ভালবাসবে না, আমি কী তোমাদেরকে এমন একটি জিনিস বাতলেয়ে দেব যা করলে, তোমরা পরস্পর পরস্পরকে ভালো বাসবে? তারপর তিনি বললেন, তোমারা বেশি বেশি করে সালামকে প্রসার কর” । [মুসলিম]।

মানবসৃষ্টির সূচনালগ্ন থেকেই সালামের প্রচলন শুরু হয়েছে। আল্লাহতায়ালা যখন হযরত আদম (আ.) কে সৃষ্টি করেন, তখন থেকেই সালাম-এর প্রচলন শুরু হয়। হযরত আবূ হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদীসে মহানবী (সা.) ইরশাদ করেছেন-“আল্লাহতায়ালা আদমকে যখন সৃষ্ট করলেন, তখন বললেন, যাও, অবস্থানরত ফেরেস্তাাদের দলটিকে সালাম করো। আর তাঁরা তোমার সালামের কী উত্তর দেয়া তা শ্রবণ করো। তাই হবে তোমার এবং তোমার সন্তানদের সালাম-এর পদ্ধতি।” তখন আদম (আ.) বললেন- “আস-সালামু আলাইকুম”। জবাবে ফেরেশতাগণ বললেন, আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, “তারা ওয়া রাহমাতুল্লাহ অংশটি বৃদ্ধি করে বলেছেন।” (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৪৬২৮)

হযরত আবু যর গিফারী (রা.) হতে বর্ণিত হাদীসে পাই, তিনি বলেন “আমি মহানবী (সা.) এর দরবারে হাজির হলে তিনি আমাকে ‘আসসালামু আলাইকুম’ বলে অভিবাদন জানালেন। তখন আমি উত্তরে বললাম, “ওয়া আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।” অতঃপর হযরত আবু যর গিফারী (রা.) বলেন, “ইসলামের ইতিহাসে সর্বপ্রথম যাকে সালাম দেয়া হয়, আমিই সেই ব্যক্তি।” (ফাতহুল বারী, ১১: পৃষ্ঠা ৪) সালাম একাধারে দোয়া ও ইবাদত।

আনাস (রা.) হতে বর্নিত এক হাদীসে আছে, “হযরত মুহাম্মদ (সা.) একবার একদল শিশু-কিশোরদের কাছ দিয়ে কোথাও যাচ্ছিলেন, তখন তিনি তাদেরকে সালাম দিলেন।” (মুসলিম শরীফ ২য় খন্ড) তাই হযরত আনাস (রা.) ও ছোট ছোট ছেলে-মেয়েদের সাথে দেখা সাক্ষাৎ হলে সালাম দিতেন। বড়রা উদার মন নিয়ে বিন¤্রভাবে হাসতে হাসতে শিশুদেরকে সালাম দিলে শিশুরাও অন্যকে দ্রুত সালাম দিতে অভ্যস্ত হবে। শিশুদের মাঝে ধর্মীয় আবেগ-অনুভূতি জাগ্রত হবে। শিশুদের পক্ষ থেকে বড়দেরকে শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শনের মন-মানসিকতা সৃষ্টি হবে।

প্রতিটি গৃহ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, জনসমাবেশ, অফিস-আদালত সর্বত্রই সালাম আদান-প্রদানে সকলকে উৎসাহিত করা উচিৎ। হযরত কাতাদাহ (রা.) হতে বর্নিত হাদীসে পাই, “হযরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, যখন তোমরা গৃহে প্রবেশ করবে, তখন গৃহবাসীকে সালাম দিবে। আর যখন বের হবে, তখনও গৃহবাসীকে সালাম দিয়ে বিদায় নেবে।” (বায়হাকী)

সালামের মাহাত্ম্য সম্পর্কে হযরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত এক হাদীসে পাই- “হযরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, তোমরা ততক্ষণ পর্যন্ত জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না যতক্ষণ না তোমরা ঈমান গ্রহণ করবে। ততক্ষণ পর্যন্ত ঈমান লাভ করতে পারবে না যতক্ষণ না তোমরা পরস্পরকে ভালোবাসবে। আমি কী তোমাদেরকে এমন কথা বলবো, যাতে তোমাদের মাঝে পারস্পরিক ভালোবাসা বৃদ্ধি পাবে? তোমরা পরস্পরের মাঝে সালামের ব্যাপক প্রচলন করবে।(মুসলিম, আবু দাউদ) অপর এক হাদীসে নবী কারীম (সা.) ইরশাদ করেন, “তোমরা করুণাময় আল্লাহ্ধসঢ়;তালার ইবাদত কর এবং সালামের ব্যাপক প্রচলন কর।”

হাদীসে আছে, “যে ব্যক্তি সালাম দিতে কার্পণ্য করে সে কৃপণ বলে গণ্য হবে।” অন্য এক হাদীসে আছে, “যে ব্যক্তি  প্রথমে সালাম দেয়, সে অহঙ্কারমুক্ত।” তাই মনের মাঝে বিন্দুমাত্র অহঙ্কারও যদি থাকে তা ত্যাগ করুন ও ছোট-বড় সবাইকে সালাম দিন। আমাদের উচিৎ পরিবারে ও পরিবারের বাইরে বেশি বেশি সালামের প্রচলন করা। নিজেরা পরস্পর সালাম আদান-প্রদান করা এবং অন্যদের সালাম দিতে উৎসাহিত করা। পরিবারে মা-বাবা ও মুরুব্বীদের উচিৎ ছোটবেলা থেকেই শিশুদেরকে শুদ্ধরুপে ও সঠিক নিয়মে সালাম দেয়ার শিক্ষা দেয়া। অনেকে খুব দ্রুত বলেন, ‘স্লামালাইকুম’। এর কোনো অর্থ হয় না, তাই এরূপ বলা উচিৎ নয়। পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা বলেছেন, “যখন তোমাদেরকে সালাম দেয়া হয়, তখন তোমরা তার চেয়ে উত্তম অথবা অনুরূপ সালাম দ্ধারা তার উত্তর দাও।” (সূরা নিসা, আয়াত নং ৮৬) সালাম আদান-প্রদানে পরস্পরের প্রতি স্নেহ, মায়া-মমতা ও ভালবাসা সৃষ্টি হয় এবং উপস্থিত শ্রোতাদের ওপর এর অপরূপ সুন্দর প্রভাব পড়ে।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট