চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

জাপানের নতুন রাজা কি নতুন যুগের দিশারী হতে পারবেন?

অধ্যাপক রতন কুমার তুরী

১৮ জুন, ২০১৯ | ১:৩৮ পূর্বাহ্ণ

জা পা নের সেই এশি য়ার উত্তর-পূর্ব প্রান্ত থেকে দক্ষিণ এশিয়ার ভারত পর্যন্ত বিস্তৃত সা¤্রাজ্য নেই বহু বছর যাবৎ। ইঙ্গ-মার্কিন মিত্র শক্তির প্রতিরক্ষারূপী জাপ-জার্মান-অক্ষশক্তির অবসান ঘটেছে প্রায় ৭৫ বছর আগে। তবুও জাপান এক ধরনের বৃহৎশক্তি বটে – সমরাঙ্গনে না হোক, শিল্পাঙ্গনে আর অর্থনীতির ক্ষেত্রে। তাই জাপানকে দ্রুত বর্ধনশীল শিল্প অর্থনীতির দেশ বলা হয়। জাপানের সর্বশেষ খবর হলো জাপানি রাজা আকিহিতোর বড় ছেলে যুবরাজ নারুহিতো গত ১ মে নতুন রাজা হিসেবে বাবার কাছ থেকে সিংহাসন লাভ করেছেন। তার আগের দিন জাপানের স¤্রাট আকিহিতো ক্রিস্যান থিমাস সিংহাসন পরিত্যাগ করেন চিরতরে। রাজপ্রাসাদের দরবার হলে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে স¤্রাজ্ঞী মিচিকো, যুবরাজ নারুহিতো ও স্ত্রী মাসাকো হাজির ছিলেন। প্রকৃতপক্ষে সারা পৃথিবীতে বেশ কিছু দেশে এখনও রাজা আছেন। তবে, নামেমাত্র। এদের কোনো ক্ষমতা নেই , জাপানের রাজাও তেমন ক্ষমতাহীন রাজা। জাপানের রাজতান্ত্রিক প্রধানকে মূলত রাজা নয় স¤্রাট হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। প্রকৃতপক্ষে বেশ কিছুদিন ধরেই শোনা যাচ্ছিল জাপানের স¤্রাট আকিহিতো বিদায় নিচ্ছেন এবং এ পদে তার ছেলে আসছেন। বলা হচ্ছে, হেইসেই বা শান্তি অর্জনের যুগের অবসানে এখন রেইওয়া বা সুন্দর সম্প্রীতির যুগ সূচিত হবে নতুন স¤্রাট সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হওয়ার পর সম্প্রীতি ও শান্তি কায়েমের প্রতিশ্রুতি প্রদান করেন। দ্বিতীয় বিশ^যুদ্ধের সময় মিত্রশক্তির আমেরিকা, ব্রিটেন, সোভিয়েত ইউনিয়ন রণাঙ্গণে অক্ষশক্তি তথা জাপান, জার্মানি, ইতালির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছিল। জাপান স¤্রাট হিরোহিতো – হিটলার, মুসোলিনী এতটাই বেপরোয়া হয়ে ওঠেছিল যে, তারা রাজ্য দখল করতে করতে ভারতের মণিপুরে পর্যন্ত চলে এসেছিল। মায়ানমারও তাদের দখলে ছিল।
যুদ্ধ শেষে জাপানের স¤্রাট হিরোহিতো বিচার ও দ- থেকে রেহাই পেয়ে চার দশকেরও বেশি রাজত্ব করেন। ১৯৮৯ সালের ৭ জানুয়ারি তাঁর মৃত্যু হলে সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হন তাঁর পুত্র আকিহিতো। তাঁর সময়ে জাপানের ক্রমবিকাশ ও সামরিক অগ্রগতি অব্যাহত থাকে। প্রায় তিন দশক ক্ষমতায় থাকার পর তিনি স্বেচ্ছায় ক্ষমতা হস্তান্তর করেন তাঁর পুত্র নারুহিতোকে। আকিহিতোর বয়স বর্তমানে ৮৬ বছর। জাপানের সংবিধনের কারণে তিনি ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও সিংহাসন ত্যাগ করতে পারেনি। রাজার প্রতি সম্মান দেখিয়ে সম্প্রতি জাপানী সংবিধানে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনার পর তিনি সিংহাসন ছাড়লেন। আকিহিতোর অবসরের মধ্য দিয়ে অবশ্য জাপানেও একটি রেকর্ড সৃষ্টি হলো, কারণ বিগত দুইশ বছরের জাপানের ইতিহাসে তাদের কোনো রাজা স্বেচ্ছায় সিংহাসন ত্যাগ করেন নি। ১৮১৭ সালে সর্বশেষ স¤্রাট কোকাকু অবসর গ্রহণ করেছিলেন। তারপর যুবরাজই ক্ষমতা হাতে নিয়েছিলেন। তার তখনও স¤্রাটের ক্ষমতা ছিল সীমিত। এর কারণ কিন্তু ভিন্ন।
সে আমলে এর কারণ সমরতন্ত্রের দাপট আর বর্তমানে গণতন্ত্রের প্রাধান্য রাজ রাজারা নিয়মতান্ত্রিক রাষ্ট্রপ্রধানে পরিণত হয়েছেন। অতীতে জাপানে স¤্রাটদের বেশ ক’জন অল্প বয়সেই হত্যা বা উৎখাতের শিকার হয়েছেন। জাপান সংবিধানে এতোদিন বিধান ছিল স¤্রাট আজীবন এ পদে থাকবেন। এই প্রথম জাপানের সংবিধান পরিবর্তন করে স¤্রাটদের অবসরের সুযোগ করে দেয়া হয় এবং তাদের স্ত্রীদের পদমর্যাদা ঠিক করে দেয়া হয়। সে অনুসারে আকিহিতো হবে জাপানের প্রথম ইমেরিটাস এম্পেরার এবং তাঁর স্ত্রী মিচিকো হবেন প্রথম ইমেরিটাস এমপ্রেস। অবশ্য যুবরাজ নারুহিতো চূড়ান্তভাবে স¤্রাটের দায়িত্ব গ্রহণ করবেন এ বছরের ২২ অক্টোবর। তিনি হবেন জাপানের ১২৬তম স¤্রাট। প্রকৃতপক্ষে, জাপানীরা তাদের স¤্রাটদের প্রতি সবসময় শ্রদ্ধাশীল ছিলেন। বর্তমানেও সে ধারা অব্যাহত আছে। তবে, দেশটি গণতন্ত্রের প্রতিও অতি সংবেদনশীল হয়ে পড়েছে। ফলে স¤্রাটের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হলেও অনেক জাপানী রাজার রাজ সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হওয়ার সময় বসন্তের ছুটি ১০ দিন বাড়িয়ে দেয়াকে খুব একটা ভালো চোখে দেখছে না। এখন দেখার বিষয় জাপানের নতুন রাজা জাপানকে ভবিষ্যতে কোন পথে নিয়ে যায়।

লেখক : কলেজ শিক্ষক, প্রাবন্ধিক, মানবাধিকারকর্মী।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট