চট্টগ্রাম বুধবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২৪

ব্যক্তিত্ব : মনোযোগ আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু

মুহাম্মদ আবু নাসের

১৭ জুন, ২০১৯ | ১:২৬ পূর্বাহ্ণ

অনেকে আছেন যারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বা বাস্তবজীবনে এমন কিছু বলেন, লেখেন বা আচরণ করেন যার ফলে আশ-পাশের সবাই একটু নড়েচড়ে বসেন, তার দিকে মনোযোগ দেন। কেউ হয়ত প্রতিষ্ঠিত সত্যকে চ্যালেঞ্জ করেন, কেউ নিজের বিষয়ে কিছু বলেন, কেউবা অন্য কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে সাড়া জাগানো তথ্য হাজির করেন। আর, কেউবা উদ্ভট কোন আচরণ করে সবার মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দ্রতে চলে আসেন। মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ হওয়ার পর মানুষ তার মানসিক চাহিদা পূরণ করতে চায়। এ পর্যায়ে সামাজিক সম্পর্ক, বন্ধুত্বের পাশাপাশি মানুষ চায় অন্যরা তার প্রশংসা করুক, তাকে সম্মানিত করুক, স্বীকৃতি দিক। চাহিদার নানা পর্যায়ে মানুষ তার প্রেরণার উৎস খুঁজে পায় এবং সে অনুযায়ী আচরণ করে। কখনো কখনো উদ্ভট পোষাক পরেও অন্যের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চায় অনেকে। অপরের মনোযোগ পাওয়ার জন্য যে আচরণ, তা মানুষের স্বভাবগত ও শৈশবজাত। শিশুর কান্না, বাবা-মায়ের মনোযোগ আকর্ষণ করার চেষ্টা। অনেক সময় শিশুরা কিছু অনাকাক্সিক্ষত আচরণ করে। যেমন চিৎকার করে, অপরের গায়ে থুতু দেয়, নিজের মাথা নিজে দেয়ালে ঠুকে, বাজে কথা বলে। মূলত, এগুলো সবই মনোযোগ আকর্ষণ করার প্রচেষ্টা। শিশুদের জন্য বিশেষত, ৩-৭ বছর বয়সী শিশুদের এই মনোযোগ আকর্ষণ করতে চাওয়া সম্পূর্ণ স্বাভাবিক। শৈশবে তারা যখন নিজের চাওয়াটাকে সুসংগঠিতভাবে প্রকাশ করতে পারে না, তখন তারা এ ধরনের আচরণ করে। অন্যের, বিশেষত তারা বাবা-মায়ের মনোযোগ চায়। মজার বিষয় হচ্ছে, ভালো বা প্রশংসনীয় আচরণ করে মনোযোগ চাওয়ার পাশাপাশি কখনো তারা নিন্দনীয় ও গর্হিত আচরণ করেও মনোযোগ চায়। কারণটা হচ্ছে, বাবা-মায়েরা শিশুর গর্হিত আচরণ কমানোর জন্য অতি উদগ্রীব থাকেন। ওই আচরণ করার সময় বেশি বেশি তার দিকে মনোযোগ দেন। ফলে, শিশুর মধ্যে একটা শর্তাধীন অবস্থা তৈরি হয়। তখন সে বাবা-মায়ের মনোযোগ পেতে গর্হিত আচরণটিই বারবার করতে থাকে। যেমন, একটি শিশু অপরকে থুতু দিচ্ছে। তখন তার বাবা-মা উদ্বিগ্ন হয়ে যতবার তাকে নিষেধ করেন বা বুঝিয়ে বলেন বা ধমক দেন, কখনো বা রেগে গিয়ে দু-এক ঘা লাগিয়েও দেন। এই নিষেধ করা, বুঝিয়ে বলা, ধমক দেওয়া বা পিটুনি দেওয়া মানেই হচ্ছে শিশুর প্রতি মনোযোগ দেওয়া। আশ্চর্য মনে হলেও একথা সত্যি যে, শিশু ধমক বা পিটুনি খাওয়ার মধ্য দিয়েও বাবা-মায়ের মনোযোগ কামনা করে। মনোযোগ আকর্ষণ করার এই ধরনের আচরণগুলো পরিণত বয়সেও কারো কারো মধ্যে বিদ্যমান থাকে। দেখা যায়, সে বন্ধুমহলে এমন ধরনের কথা বলছে বা এমন একটা ঠাট্টা সে করছে সে সবাই তার দিকে নজর দিচ্ছে। নেতিবাচক, অগ্রহণযোগ্য কথা বললে বা আচরণ করলে সহজেই মনোযোগ পায়। বিতর্কিত বিষয়ে কথা বলা, সামাজিক রীতিনীতির পরিপন্থী আচরণ করা, নিজেকে আঘাত করা, যে কোন ধরনের হুমকি দেওয়া বা হঠকারী আচরণ-সবাই মনোযোগ আকর্ষণ করার চেষ্টা। উদ্ভট কর্মকা- কিংবা পোশাক পরে নয় বরং নিজের ব্যক্তিত্ব দিয়ে অন্যের দৃষ্টি আকর্ষণ করাই স্বাভাবিক আচরণ। তাই, অহেতুক মনোযোগ পাওয়ার চেষ্টা না করে আত্মপ্রচারে মগ্ন না হয়ে সত্যিকারের অর্জনের জন্য সচেষ্ট হতে হবে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট