চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

বিজয়ের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি

মো. আখতার হোসেন আজাদ

১৬ ডিসেম্বর, ২০২০ | ২:৫৩ অপরাহ্ণ

স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপনের প্রহর গুণছে বাংলাদেশ। ১৯৭১ সালে স্বাধীন হওয়া বাংলাদেশের মাত্র ৭৮৬ কোটি টাকার বার্ষিক বাজেট আজ পরিণত হয়েছে ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকায়। ১২৯ ডলার মাথাপিছু আয়ের দেশটির বর্তমান মাথাপিছু আয় ২০৬৪ ডলার। সময় পেরিয়েছে। বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশও এগিয়েছে। তাই স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিতে বাংলাদেশের সার্বিক অগ্রগতি ও কাক্সিক্ষত উন্নয়নের অনুপাত তুলনা করার সময় এসেছে।

দালিলিক বা কেতাবি ভাষায় একটি দেশের উন্নয়নের মাপকাঠি সে দেশের মাথাপিছু আয়, অর্থনৈতিক অবস্থা, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, বাণিজ্য, উৎপাদন, প্রাকৃতিক সম্পদ আরোহণ, ব্যাংক রিজার্ভের পরিমাণ প্রভৃতির উপর নির্ভল করে। জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন সমাধান নেটওয়ার্ক (এসডিএসএন) এর প্রতিবেদন অনুসারে উন্নত দেশের তালিকায় পৃথিবীর ১৫৬টি দেশের মধ্যে বর্তমানে বাংলাদেশের অবস্থান ১০৭তম। বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় বেড়েছে, অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে, বৈদেশিক বাণিজ্য বৃদ্ধি পেয়েছে, সম্পদ উৎপাদন ও আহরণ বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে বাস্তবিক অর্থে একটি দেশের প্রকৃত সমৃদ্ধি বা অগ্রগতি নির্ভর করে বেশকিছু নিয়ামকের উপর, যা সাধারণত পরিসংখ্যানের নজর কাড়তে পারে না। জনগণের জীবনযাত্রার বাস্তব রূপ, খাদ্যনিরাপত্তা, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, মতপ্রকাশের অধিকার, গুণগত মানসম্মত বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষা ও গবেষণা, কর্মসংস্থান প্রভৃতির মাপকাঠি প্রকৃত উন্নয়নের চিত্র প্রদর্শন করে। স্বাধীনতার অর্ধশত বছরে দেশের মানুষের জীবনযাত্রার মান পরিবর্তন হয়েছে তা অস্বীকার করার জো নেই। কিন্তু প্রত্যাশিত জীবনযাত্রার মান অর্জন করা গেছে কিনা এবং সর্বস্তরের মানুষের জীবনের মান পরিবর্তন হয়েছে কিনা তা নিয়ে প্রায়ই চায়ের কাপে ঝড় উঠে। দেশ আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। দেশের চাহিদা মিটিয়ে আমরা এখন বিদেশে রপ্তানি করছি। তবে দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করলেও নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা আজও সম্ভব হয়নি। ভেজাল খাবার খেয়ে প্রতিবছর তিন লাখের বেশি মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে ক্যান্সারসহ বিভিন্ন মরণব্যাধী রোগে। নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতে সরকার কর্তৃক বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ, আইন প্রণয়ন হলেও এর বাস্তবায়ন বড়ই হতাশাজনক। দেশে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতে ২০১৩ সালে ‘নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ’ নামে আলাদা সেল গঠন করা হলেও আক্ষরিক অর্থে এই কর্তৃপক্ষ প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে।

একটি দেশের উন্নয়নের মাপকাঠির অন্যতম পরিমাপক হলো দেশটির রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। বিদেশী বিনিয়োগ ও বাণিজ্য, অভ্যন্তরীণ উন্নয়ন, রাষ্ট্রের স্বাভাবিক কার্যক্রমসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এর উপর নির্ভরশীল। স্বাধীনতার পূর্বে রাজনীতি যেমন আমাদের রাষ্ট্রীয় ভীত গড়ে দিয়েছে, তেমনই স্বাধীনতাপরবর্তী রাজনীতি আমাদের দেশের অপূরণীয় ক্ষতি করেছে তা একবাক্যে স্বীকার করতেই হবে। স্বাধীনতার ৫০বছরে পদার্পণ করলেও বাংলাদেশে ক্রমাগত বিভাজনের রাজনীতি চর্চার ফলে জাতিগত ঐক্যের সৃষ্টি হয়নি। একটি দেশের প্রকৃত উন্নয়নের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ মাপকাঠি শিক্ষা। এটি পরিমাপের দুটি দিক রয়েছে। একটি পরিমাণগত অন্যটি গুণগত। স্বাধীনতার পর থেকে আজ অবধি আমরা শিক্ষার পরিমাণগত দিকটিকেই আমাদের সাফল্যের মানদ-ে মাপতে পছন্দ করে যাচ্ছি। গবেষণা নেই, নেই কোন উদ্ভাবনী সৃষ্টিশীলতা। চাকুরির বাজারের সাথে উচ্চশিক্ষা পদ্ধতির কোনই মিল নেই। নানামূখী জটিলতায় বাংলাদেশে বেকারত্বের হার বাড়ছে। কেউ হতাশ হয়ে বেছে নিচ্ছে মাদক, কেউবা বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকা-। সৃষ্টি হচ্ছে অরাজকতা। বেকারত্ব হ্রাসে সরকার থেকে উদ্যোক্তা হতে পরামর্শ দেওয়া হলেও মূলধনের অভাব ও উচ্চহারে ঋণের ঝুঁকির ফলে যুবকরা সাহস করতে পারছে না।

করোনাভাইরাসের প্রকোপে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতের বেহাল দশা উন্মোচিত হয়েছে। শুধু চিকিৎসা খাত নয়। বাংলাদেশের প্রত্যেক খাতেই যেন দুর্নীতির কালো থাবা চেপে আছে। কেউ অর্থের পাহাড় গড়ছে। কেউ আবার বিদেশে পাচার করছে। পররাষ্ট্রনীতিতে আমরা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়তে পেরেছি পৃথিবীর প্রত্যেক রাষ্ট্রের সাথে। প্রতিবেশী দেশসমূহের সাথে এ সম্পর্ক আরো মজবুত। আন্তর্জাতিক আদালতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে সমুদ্র বিজয়, ভারতের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের মাধ্যমে ছিটমহল বিনিময় পররাষ্ট্রনীতির সফলতার উদাহরণ। কিন্তু তিস্তার পানি বণ্টন, সীমান্তে নির্বিচারে হত্যাকা-, বাণিজ্যঘাটতি দূরীকরণ, সংস্কৃতি বিনিময়ে সমতা আনয়ন, রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে বাংলাদেশের আরো শক্ত পররাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করা প্রয়োজন। বাংলাদেশে সার্বিক খাতে উন্নয়ন হয়েছে। তবে সর্বত্র সমতা ভিত্তিক উন্নয়ন নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। সুশাসন নিশ্চিতকরণ সম্ভব হলে দেশ বিশ্বদরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট