চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে খাদ্যব্যবস্থাপনা

হাসিনা আকতার লিপি

১৪ নভেম্বর, ২০২০ | ১:৫৪ অপরাহ্ণ

ডায়াবেটিস রোগে খাদ্য ব্যবস্থাপনার অর্থ এই নয় যে, সব মজাদার খাবার বন্ধ করে শুধুমাত্র শাকসব্জি, লতা-পাতা খেয়ে সারাজীবন কাটাতে হবে। কিন্তু ভ্রান্তভাবে অনেকেই এমনটাই ভেবে থাকেন। বরং খাদ্যব্যবস্থাপনায় সকল ব্যক্তিকে প্রয়োজনমতো মানে একজন ব্যক্তির উচ্চতা, ওজন, বিএমআই এবং সারাদিনের কাজের ধরণ হিসাব করে ব্যালেন্স মানে সুষমখাদ্য তালিকা করে দেয়া হয়। সুষমখাদ্য হলো সেটাই, যেখানে খাদ্যের বিভিন্ন উপাদান (শর্করা, আমিষ, চর্বি, ভিটামিন, খনিজ ও পানি) পর্যাপ্ত ও প্রয়োজনীয় পরিমাণে ও অনুপাতে থাকে।

খাদ্য ব্যবস্থাপনার উদ্দেশ্য হলো : সুষম খাদ্য নিশ্চিত করা, নিয়মিত খাদ্য গ্রহণ করা, শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা, রক্তের গ্লুকোজ ও চর্বি নিয়ন্ত্রণে রাখা, রক্তচাপ, শিশুদের ক্ষেত্রে দৈহিক বৃদ্ধি স্বাভাবিক রাখা, গর্ভাবস্থায় ও স্তন্যদানকালে পুষ্টি নিশ্চিত করা, বয়ষ্কদের প্রয়োজনীয় পুষ্টি নিশ্চিত করা।

ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য ব্যবস্থা : একজন ডায়াবেটিক রোগী মোট ক্যালরী গ্রহণ করবে প্রতিদিন ৩ বেলা মূল খাবার। অর্থাৎ সকাল, দুপুর, রাত এবং মধ্য সকাল এবং বিকেলে ২টা টিফিনে। সেক্ষেত্রে সকালের নাস্তায় খাবেন মোট ক্যালরী ২০%, দুপুর – ৩৫%, রাতে – ৩০%। বাকি ১৫% ২-৩টা টিফিনে ভাগ করে করে। সব ডায়াবেটিক ব্যক্তির জন্য কিন্তু খাদ্যব্যবস্থাপনা একরকম না। খাদ্যব্যবস্থাপনা নির্ধারণের আগে যে বিষয়গুলি খেয়াল রাখতে হবে তা হলো : ডায়াবেটিস আক্রান্ত ব্যক্তির ডায়াবেটিসের ধরণ, বর্তমান শারীরিক, মানসিক ও খাদ্য ব্যবস্থার ধরণ, জীবন যাত্রার ধরণ (শহরের নাকি গ্রামের, ব্যক্তিগত সুযোগ-সুবিধা ও পছন্দ। সর্বোপরি একজন ব্যক্তির ওজন/উচ্চতা, কাজের ধরণ এবং ডায়াবেটিসের অবস্থার উপর নির্ভর করেই খাদ্যব্যবস্থা নির্ধারণ করতে হয়।)

বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য বিষয়- ‘ডায়াবেটিস সেবায় পার্থক্য আনতে পারেন নার্সরাই।’ অর্থাৎ নার্সরা উদ্যোগী হলে তারা ডায়াবেটিস সেবায় গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনতে পারেন। নিজে নিজে রক্তপরীক্ষা, ইনসুলিন দেয়াসহ রোগীদেরকে তারা যদি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার কৌশলগুলি শিখিয়ে দিতে পারেন তবে ডায়াবেটিস সেবায় বিশাল বদল আসতে পারে। এর জন্য অবশ্য নার্সদেরও উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দিতে হবে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও নার্সদের সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০১৮ সালের এক হিসেব থেকে জানা যায়, সারা বিশ্বে প্রয়োজনের তুলনায় নার্সদের স্বল্পতা ৫৯ লাখ। এর মধ্যে নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশগুলিতেই এই স্বল্পতার হার প্রায় ৮৯ শতাংশ। বিশেষ করে বাংলাদেশে দক্ষ নার্সের অভাব খুবই প্রকট। এ কারণে দক্ষ নার্স সৃষ্টির উদ্যোগও আমাদের অব্যাহত রাখতে হবে।

সারাবিশ্বেই ডায়াবেটিস এখন মহামারী আকার ধারণ করেছে। এটি এমন এক রোগ, স্বাস্থ্যশিক্ষাই যার প্রধান চিকিৎসা। যথাযথ স্বাস্থ্যশিক্ষা পেলে একজন ডায়াবেটিক রোগী চিকিৎসকের ওপর নির্ভরশীল না থেকেও এ রোগ ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন, এ রোগের যেসব ঝুঁকি আছে তা এড়িয়ে চলতে পারেন।

শিশুদের ক্ষেত্রে সচেতনতা : আজকাল মায়েরা পড়ালেখা নিয়ে যতটা সচেতন ঠিক ততটাই অসচেতন স্বাস্থ্যসম্মত খাবারের ব্যাপারে। আমরা কি জানি ১০০ গ্রাম ওজনের একটি বার্গারে ক্যালরী থাকে ১৯৫। যা খরচ করতে ৮১ মিনিট সাঁতার কাটতে হবে।  নাহলে এটা চর্বি হয়ে শরীরে জমবে। এখন কথা হচ্ছে মায়েরা কি সন্তানের ঐ ক্যালরী খরচের ব্যবস্থা করেন?

এক প্যাকেট চিপস: যখন শিশুকে দেয়া হয়, তখন কোনো মা কী দেখেছেন ক্যালরীর হিসাবটা। এক টুকরা চিপসের ক্যালরী মূল্য ১২। এক টুকরো পিৎজা খাওয়ার পর ১৩৫ মিনিট নৃত্য করলে তা খরচ হবে। ৩৩০ মিলি এক ক্যান কোমল পানীয় পান করার পর কেউ যদি ২৮ মিনিট ঘর মোছার মতো পরিশ্রমের কাজ করে তবেই তা খরচ হবে। নয়তো চর্বি আকারে দেহে জমা হবে এবং ওজন বৃদ্ধি করবে। ফলশ্রুতিতে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়বে।

গর্ভকালীন ডায়াবেটিস : বর্তমানে বাংলাদেশে গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের এর হার ৬  থেকে ১৪ শতাংশ। চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতালে ‘গর্ভধারণপূর্ব সেবাকেন্দ্র’ চালু আছে। যেখানে স্বল্পমূল্যে গর্ভধারণ সেবা পাওয়া যায়। এর মাধ্যমে প্রয়োজনীয় সচেতনতা সৃষ্টির পাশাপাশি নারী ও শিশুমৃত্যুর হার যেমন কমানো সম্ভব, তেমনি নারীসহ আগামী প্রজন্মকেও ডায়াবেটিসের ভয়াবহ প্রকোপ থেকে অনেকাংয়শে রক্ষা করা সম্ভব হবে। পৃথিবীতে প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৪ জন নারীর গর্ভধারণ অপরিকল্পিত। ফলে ৪০ শতাংশ দম্পতি সঠিক সময়ে গর্ভধারণপূর্ব সেবা গ্রহণের সুযোগ থেকে বঞ্চিত থাকে।

সকলেই ডায়াবেটিস সম্পর্কে সচেতন হোন, খাদ্য ব্যবস্থাপনা মেনে চলুন।

লেখক: পুষ্টিবিদ হাসিনা আক্তার লিপি এ্যাসিস্টেন্ট ডাইরেক্টর, চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতাল।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট