চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

জেলহত্যা দিবস

মো. মোরশেদুল আলম

৩ নভেম্বর, ২০২০ | ২:১৩ অপরাহ্ণ

বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলাদেশ যখন দুর্বারগতিতে এগিয়ে যাচ্ছিল, তখন দেশীয় ও আন্তর্জাতিক কুচক্রীমহলের ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে নিহত হন বঙ্গবন্ধু। ৩ নভেম্বর ঘাতকরা সার্জেন্ট মুসলেম উদ্দিনের নেতৃত্বে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে প্রবেশ করে বিভিন্ন সেল থেকে জাতীয় চার নেতাকে এনে ১ নম্বর সেলে জড়ো করে। কারা আইন ও সকল রীতি-নীতি লঙ্ঘন করে কারাগারের নির্জন প্রকোষ্ঠে দেশমাতৃকার শ্রেষ্ঠ সন্তান জাতীয় এই চার নেতাকে শুধু গুলি চালিয়েই ক্ষান্ত হয়নি, গুলিবিদ্ধ দেহকে ধারালো বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে বর্বরোচিত কায়দায় ক্ষত-বিক্ষত করে ঘাতকেরা। যেখানে কারাগার’ই নিরাপদ আশ্রয় হওয়ার কথা; সেখানে এমন জঘন্য, নৃশংস ও বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ড পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। বাংলার মানুষের সার্বিক মুক্তির প্রতিজ্ঞায় বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে মিলমিশে কাজ করেছিলেন; এটাই ছিল তাঁদের অপরাধ। ঘাতকদের মূল উদ্দেশ্য ছিল দেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধ্বংস করা। ষড়যন্ত্রকারীরা এই হত্যাকা-ের মাধ্যমে বাঙালি জাতিকে নেতৃত্বশূন্য করে স্বাধীন বাংলাদেশকে একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করতে চেয়েছিল। কিন্তু ঘাতকেরা ভুলে গিয়েছিল যে, কর্মের মাধ্যমে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে তাঁরা ইতিহাসের অংশ হয়ে রয়েছেন। ঘাতকের নির্মম বুলেট ও বেয়নেট জীবনপ্রদীপ নিভিয়ে দিলেও তাঁদের সততা, নিষ্ঠা, চারিত্রিক দৃঢ়তা, নীতি-নৈতিকতা, দেশপ্রেম, বঙ্গবন্ধুর আদর্শের প্রতি অগাধ বিশ্বাস, শ্রদ্ধা ও ভালোবাসাকে হত্যা করতে পারেনি।

হত্যাকাণ্ডের পরদিন তৎকালীন ডিআইজি (প্রিজন) কাজী আবদুল আউয়াল লালবাগ থানায় একটি মামলা করেছিলেন। ওই হত্যাকাণ্ডের তদন্ত করার জন্য বিচারপতি কে এম সোবহানের নেতৃত্বে একটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠিত হয়েছিল। কিন্তু দীর্ঘ ২১ বছর হত্যাকাণ্ডের তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ থাকে। ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে বঙ্গবন্ধু হত্যা ও জাতীয় চার নেতা হত্যার বিচার কার্যক্রম শুরু হয়। ১৯৯৮ সালের ১৫ অক্টোবর জেলহত্যা মামলায় ২৩ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয়া হয়। ২০০৪ সালের ২০ অক্টোবর ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত ৩ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং ১২ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় প্রদান করেন। পরে আসামিপক্ষের করা আপিলের শুনানি নিয়ে ২০০৮ সালের ২৮ আগস্ট হাইকোর্ট মুসলেম উদ্দিনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখলেও মৃত্যুদণ্ড পাওয়া অন্য দুই আসামি মারফত আলী ও হাশেম মৃধাকে খালাস দেন। এছাড়া যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পাওয়া ফারুক, শাহরিয়ার রশিদ, বজলুল হুদা ও এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদকেও খালাস দেয়া হয়। রাষ্ট্রপক্ষ হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করলে ২০১৩ সালের ৩০ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ চূড়ান্ত রায় দেন। ওই রায়ে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের দেয়া ৩ জনের মৃত্যুদণ্ড এবং ১২ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বহাল রাখা হয়। অবশ্য ২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত ৫ খুনিকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকর করে সরকার। এদের মধ্যে ৪ জন জেলহত্যা মামলায় সাজাপ্রাপ্ত। দণ্ডপ্রাপ্তদের কেউ কেউ এরই মধ্যে মৃত্যুবরণ করেছেন, আবার কেউ কেউ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পলাতক রয়েছেন। যারা পলাতক রয়েছে, তাদের দেশে ফিরিয়ে এনে রায় কার্যকর করতে সরকার সচেষ্ট রয়েছে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আরাধ্য স্বপ্ন ছিল অর্থনৈতিক মুক্তি নিশ্চিত করার মাধ্যমে বাংলাদেশের দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়ে প্রিয় দেশকে সোনার বাংলায় রূপান্তর করা। বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে জাতীয় চার নেতাও বাংলার মানুষের সার্বিক মুক্তির প্রতিজ্ঞায় বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেয়ার জন্য আমৃত্যু কাজ করেছেন। বঙ্গবন্ধুকন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ২০০৯, ২০১৪ ও ২০১৯ সালের নির্বাচনগুলোতেপরপর তিনবার নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করার মাধ্যমে সরকার গঠন করে বাংলাদেশ তথা বিশ্বের ইতিহাসে এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে। প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ দুর্বার গতিতে উন্নয়নের মহাসড়কে এগিয়ে চলছে। বাংলাদেশ এখন বিশ্বের বিস্ময়, উন্নয়নের রোলমডেল। বঙ্গবন্ধুকন্যা শত বাধা-বিপত্তি ও ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে বাংলাদেশকে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলায় পরিণত করতে দিন-রাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতার স্বপ্ন পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়িত হলেই কেবল তাঁদের বিদেহী আত্মা শান্তি লাভ করবে।

লেখক: মো. মোরশেদুল আলম, সহকারী অধ্যাপক, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট