চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

আসুন, দেশ গড়ার সংকল্প নিই

কাজী আবু মোহাম্মদ খালেদ নিজাম

২৮ এপ্রিল, ২০১৯ | ১:৫১ পূর্বাহ্ণ

বা ং লা নব বর্ষ কে আমরা বরণ করেছি। প্রতি বছরই এভাবে করি। এটি আমাদের ঐতিহ্য, সংস্কৃতির অংগ। জানা যায়, হিজরী সনকে ভিত্তি করেই বাংলা সনের উৎপত্তি হয়েছে। মুঘল শাসনামলে স¤্রাট আকবর তার সভা জ্যোতিষী আমীর ফতেহউল্লাহ সিরাজীর পরামর্শে হিজরী ৯৬৩ সনকে বাংলা ৯৬৩ সন ধরে বছর গণনার নির্দেশ দেন। সূচনা করেন বাংলা নববর্ষ উদযাপনের। এ সমস্তই বহুল চর্চিত ইতিহাস।
প্রতিটি পয়লা বৈশাখেই বাংলা নতুন বছরের শুভারম্ভ হয়। এদিন বিভিন্ন সংগঠন, সরকারী, বেসরকারী উদ্যোগে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে। উৎসবমুখর একটি পরিবেশ বজায় থাকে দেশের সর্বত্র।
তবে উপলব্ধি বিষয় হলো, নতুন বছরে পদার্পণ উপলক্ষে আমাদের আবেগ যেন এই একদিনেই সীমাবদ্ধ না থাকে। পুরনো বছরের গ্লানি মুছে সামনে এগিয়ে যাওয়ার শপথে এগিয়ে যেতে হবে। কেবল আনন্দ উৎসবে, বর্ষবরণ করলাম, অথচ পরবর্তীতে আর কোন খবর নেই, তা যেন না হয়। আমাদের দেশে নানারকম সমস্যা বিদ্যমান। রাজনৈতিক সমস্যা থেকে শুরু করে সামাজিক বিভিন্ন সমস্যায় আমরা আক্রান্ত। প্রতিহিংসা আর অসহযোগিতার মনোভাব আমাদেরকে প্রতিনিয়ত কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে। স্বাধীনতার এত বছর পরও আমরা কাংক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছুতে পারিনি। পৃথিবীর অনেক দেশ যারা আমাদের সমপর্যায়ে ছিল, ইতোমধ্যে তারা এগিয়েছে বহুদূর। দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, সন্ত্রাস, খুন, পারস্পরিক অবিশ^াস সহ নানা কারণে আমরা পিছিয়ে পড়েছি। পারছি না শিক্ষা-দীক্ষায়, বিজ্ঞানে উন্নতির শিখরে পৌঁছতে। আজকের নববর্ষে তাই আমাদের শপথের আলোয় সচেতনভাবে অগ্রসর হতে হবে ঐক্যবদ্ধভাবে, ভেদাভেদ ভুলে আমরা হাতে হাত ধরে যেনো এগিয়ে যেতে পারি। সকলকে নিয়েই তো আমার এদেশ, প্রিয় বাংলাদেশ। এদেশটিকে আমরা নিজেদের মনের মতো কি সাজাতে পারি না? অবশ্যই পারি যদি আমরা একতাবদ্ধ থাকি।
নববর্ষের প্রথম দিনের সূর্যাস্তের সাথে সাথে সবকিছুর সমাপ্তি না টেনে নতুনভাবে উজ্জীবিত হয়ে দেশ ও মানুষের কল্যাণে আত্মনিয়োগ করে, উন্নতির সোপান বেয়ে খ্যাতির শীর্ষে পৌঁছার কথা আমাদের সবাইকে মনে রাখতে হবে। কোন প্রতিহিংসা, সংঘাত ও অনৈক্য নয়। ভেসে যাক সব অপরাধ, অপসংস্কৃতি আর বিদ্বেষ।
একদিনের বাঙালি না সেজে বরং এদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতিকে ধারণ করে এগিয়ে যেতে হবে। সব অপসংস্কৃতি, অনৈতিকতাকে পরিহার করতে হবে। এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ধ্যান-ধারণা আর আবেগ, অনুভূতিকে প্রাধান্য দিতে হবে। নিজেকে একজন খাঁটি দেশপ্রেমিক, সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। নতুন বছরে নতুনভাবে নিজের দেশটাকে গড়ে তোলার দৃঢ় শপথ নিতে হবে।
আমরা বাঙালি, বাংলাদেশি। সব ধর্মের মানুষ পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে এদেশে বাস করে। আমাদের যত আবেগ, অনুভূতি, স্বপ্ন সবকিছু এদেশটাকে ঘিরে। অগণিত মানুষের ত্যাগ-তিতীক্ষার বিনিময়ে পাওয়া এই স্বাধীন দেশটাকে নিয়ে যেন কেউ যেনো ছিনিমিনি খেলতে না পারে সেজন্য সদা সতর্ক থাকতে হবে। অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকা পালনের সংকল্প নিতে হবে। এদেশের প্রতি ইঞ্চি জমি রক্ষার প্রতিজ্ঞা করতে হবে। নিজেদের স্বকীয়তা, স্বাতন্ত্র্যবোধ রক্ষায় সচেষ্টা হতে হবে। যেকোন মূল্যে এদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র রক্ষার শপথ নিতে হবে।
এদেশের কৃষক, শ্রমিক, মজুর প্রত্যেকেই তাদের ঘাম ঝরাচ্ছে। মূলতঃ কৃষকেরাই বীজ বোনা আর ফসল ঘরে তোলার সুবিধার্থে বাংলা নববর্ষকে আবহমান কাল থেকে কাজে লাগিয়ে আসছে। যদিও বর্তমানে তা কমে এসেছে। তথাপি ঐতিহ্য ভুলে থাকা সম্ভব নয়। ব্যবসায়ীরা বাংলা নতুন বছরে তাদের হিসাবের নতুন খাতা খুল ও নতুন পরিকল্পনা সাজাতে এখনও তা-ই করে। যাক সেসব কথা! ‘আমাদের নিজেদের দেশের সেবায় বিলিয়ে দিয়ে, স্বদেশ গড়ার সংকল্প নিতে হবে’-এটিই হোক বাঙালির মূল কথা।

লেখক : শিক্ষক ও প্রাবন্ধিক।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট