চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

বিস্ময়কর মুজিজা মিরাজ

১ জুন, ২০১৯ | ২:৫৩ পূর্বাহ্ণ

মানুষের হিদায়াতের জন্য আল্লাহ রাব্বুল আলামিন নবী-রাসুলদের পাঠিয়েছেন। মানুষ যেন নবী-রাসুলদের আলাদাভাবে চিনতে পারে, এ জন্য তাঁদের মাধ্যমে বিশেষ অলৌকিক কিছু কর্মকা- সংঘটিত করে দেখিয়েছেন। নবী- রাসুলদের মাধ্যমে এসব অতিপ্রাকৃতিক ঘটনাবলিকে মুজিজা বলা হয়। আমাদের প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর বহু মুজিজা ছিল। মিরাজ রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর অন্যতম সেরা মুজিজা। অন্য কোনো নবী ও রাসুলের মিরাজ হয়নি। (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া)।
মিরাজ শব্দের আভিধানিক অর্থ ঊর্ধ্বগমন। ইসলামি পরিভাষায় মিরাজ হলো মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) সশরীরে স্বজ্ঞানে জাগ্রত অবস্থায় হজরত জিবরাইল (আ.) ও হজরত মিকাইল (আ.)-এর সঙ্গে বুরাক বাহনের মাধ্যমে মাসজিদুল হারাম থেকে মাসজিদুল আকসা হয়ে, প্রথম আসমান থেকে একে একে সপ্তম আসমান এবং সিদরাতুল মুন্তাহা পর্যন্ত গমনান্তে সেখান থেকে একাকি রফরফ বাহনে আরশে আজিম পর্যন্ত ভ্রমণ; মহান রাব্বুল আলামিনের দিদার লাভ ও কথোপকথন এবং জান্নাত–জাহান্নাম পরিদর্শন করে ফিরে আসা। মিরাজের প্রথম অংশ তথা বায়তুল মুকাদ্দাস পর্যন্ত ভ্রমণ হলো ইসরা। ইসরা অর্থ রাত্রিকালীন ভ্রমণ। যেহেতু নবী করিম (সা.)-এর মিরাজ রাত্রিকালেই হয়েছিল, তাই এটিকে ইসরা বলা হয়। মিরাজ রজনীকে আরবিতে ‘লাইলাতুল মিরাজ’ এবং ‘লাইলাতুল ইসরা’ বলা হয়; যা এতদঞ্চলে ‘শবে মিরাজ’ নামে পরিচিত। কালের সাক্ষী এই ঐতিহাসিক রাতটি ইবাদতের মাধ্যমে বিশেষভাবে উদযাপন করা হয়।
প্রিয় নবীজি (সা.)- এর নবুয়তের এগারোতম বছরে সাতাশ রজব মিরাজ সংঘটিত হয়। তখন নবীজি (সা.)-এর বয়স একান্ন বছর। মিরাজের তারিখ নিয়ে বর্ণনার বিভিন্নতা আছে। মিরাজের বিবরণ পবিত্র কোরআনের তিপ্পান্ন নম্বর সুরা সুরা নাজমে ও সতেরো নম্বর সুরা সুরা বনি ইসরাইলে বিবৃত হয়েছে, মিরাজের ঘটনা দিয়ে শুরু হওয়ায় এই সুরার আরেক নাম হলো সুরা ‘ইসরা’। হাদিস শরিফেও বুখারি শরিফ ও মুসলিম শরিফসহ সিহাহ সিত্তার সব কিতাবে এবং অন্যান্য হাদিস গ্রন্থে এই ইসরা ও মিরাজের বিষয়টি সবিস্তারিত আলোকপাত করা হয়েছে। মিরাজের প্রেক্ষাপট হিসেবে বলা হয়েছে: এ বছর নবীজি (সা.)-এর চাচা আবু তালেব ও স্ত্রী হজরত খাদিজা (রা.) অল্প দিনের ব্যবধানে ইন্তেকাল করেন। এ বছরকে নবীজি (সা.)-এর জীবনে ‘আমুল হুজন’ বা দুঃখের বছর বলা হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর দুঃখ নিবারণ ও দাওয়াতি কাজে উদ্বুদ্ধকরণ নিমিত্তে আল্লাহ তাঁর প্রিয়তম বান্দাকে মিরাজ দ্বারা সম্মানিত করেন।
মসজিদে আকসায় সব নবী ও রাসুলের জামাতে নবীজি (সা.) ইমামতি করেন। মিরাজের সফরে আমাদের নবীজি (সা.)-এর সঙ্গে বিভিন্ন নবী-রাসুলের বিশেষ সাক্ষাৎ হয়। প্রথম আসমানে হজরত আদম (আ.), দ্বিতীয় আসমানে হজরত ইয়াহইয়া (আ.) ও হজরত ঈসা (আ.), তৃতীয় আসমানে হজরত ইউসুফ (আ.), চতুর্থ আসমানে হজরত ইদ্রিস (আ.), পঞ্চম আসমানে হজরত হারুন (আ.), ষষ্ঠ আসমানে হজরত মুসা (আ.), সপ্তম আসমানে হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর সঙ্গে সালাম ও কুশল বিনিময় হয়। তিনি ফেরেশতাদের কিবলা বাইতুল মামুর গেলেন, অতঃপর সিদরাতুল মুন্তাহার নিকটে যান। (বুখারি শরিফ, খ-: ১, হাদিস সংখ্যা: ৩৬৭৪, পৃষ্ঠাসংখ্যা: ৫৪৮-৫৫০)।
মিরাজ রজনীতে এই বিষয়গুলো সিদ্ধান্ত হিসেবে ঘোষিত হয়, ‘আল্লাহ ছাড়া কারও ইবাদত করা যাবে না, পিতা-মাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করতে হবে, নিকট আত্মীয়স্বজনের অধিকার দিতে হবে; মিসকিনদের ও পথশিশুদের অধিকার দিতে হবে; অপচয় করা যাবে না, অপচয়কারী শয়তানের ভাই, কার্পণ্য করা যাবে না, সন্তান হত্যা করা যাবে না, ব্যভিচারের নিকটেও যাওয়া যাবে না, মানব হত্যা করা যাবে না, এতিমের সম্পদ আত্মসাৎ করা যাবে না, প্রতিশ্রুতি পালন করতে হবে, মাপে পূর্ণ দিতে হবে, অজ্ঞতার সঙ্গে কোনো কিছু করা যাবে না, পৃথিবীতে গর্বের সঙ্গে চলা যাবে না।’ (সুরা-১৭ ইসরা, আয়াত: ২২-৪৪)।
ইমানের পরই প্রধান ইবাদত নামাজ, যা মিরাজেই আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রিয় নবীজি (স.)-এর উম্মতের জন্য উপহার হিসেবে দেওয়া হয়েছে। যা কিয়ামত পর্যন্ত সব বিশ্বাসী মুমিন ও অনুগত মুসলমানের জন্য মিরাজ হিসেবে গণ্য। তাশাহহুদ মিরাজ সংলাপের অংশবিশেষ নামাজে ওয়াজিব হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট