চট্টগ্রাম বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

দান-ছাদাকা না করলে পরকালে কঠোর শাস্তি

রায়হান আজাদ

১ জুন, ২০১৯ | ১:৫১ পূর্বাহ্ণ

দান ও সেবা মহৎ কাজ। দুস্থ ও অসহায়ের মুখে হাসি ফোটানো গেলে সামাজিক বৈষম্য কমে আসবে। দান করার ক্ষেত্রে স্ব ধর্ম-বিধর্ম তফাৎ করার প্রয়োজন নেই। যিনি জীবনের মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে পারছেন না তার প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়া সবার নৈতিক দায়িত্ব। মাহে রমজান আমাদেরকে ক্ষুধার যন্ত্রণায় যারা সারা বছর কাতরায় তাদের মর্ম বেদনা উপলব্দি করার সুযোগ এনে দিয়েছে। হাদিস শরীফে আছে, “রমজান হচ্ছে গরিবদের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশের মাস”। রাসুলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম গরিব অন্ন, বস্ত্রহীন মানুষের পাশে দাঁড়াবার জন্য সবসময় উপদেশ দিয়েছেন। কুরআনে হাকিমের অসংখ্য জায়গায় দান-ছাদাকার গুরুত্ব সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে,“আপনি কি দেখেছেন তাকে, যে বিচার দিবসকে মিথ্যা বলে, সেই ব্যক্তি যে এতিমকে গলা ধাক্কা দেয় এবং মিসকিনকে অন্ন দিতে উৎসাহিত করে না।” (সুরা আল মাউন-১-৩)
ধন-সম্পদ নিজের আরাম-আয়েশ এবং পরিবার-পরিজনের ভরণ-পোষণের জন্য ব্যয় করার অনুমতি ইসলামে রয়েছে এবং অনাগত সন্তানের জন্য সঞ্চিত করে রাখাও পাপের কিছু নয়। কিন্তু অন্যায় হচ্ছে, সম্পদে গরিব-দুঃখীর হক আদায় না করা। অভাবী মানুষের দুঃখ-দুর্দশা দূর করার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ না করা। অথচ আল্লাহ তা‘আলা বলেন,“এবং তাদের সম্পদে নির্দিষ্ট হক রয়েছে। ভিক্ষুক এবং বঞ্চিত (অভাবী অথচ লজ্জায় কারো কাছে হাত পাততে পারে না) সকলের হক রয়েছে।” (সূরা আল মা‘আরেজ:২৪-২৫) সুতরাং যার যা সম্পদ আছে তার থেকে অন্ততপক্ষে এক দশমাংশ সম্পদ অভাবীদের অভাব মোচনে খরচ করা ধর্মীয় দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।
আল কুরআনের অন্য জায়গায় এসেছে, “কিন্তু ডানদিকস্থ; তারা থাকবে জান্নাতে এবং পরস্পরে জিজ্ঞাসাবাদ করবে অপরাধীদের সম্পর্কে। বলবে: তোমাদেরকে কিসে জাহান্নামে নীত করেছে? তারা বলবে, আমরা নামাজ পড়তাম না। অভাবগ্রস্থকে আহার্য দিতাম না। আমরা সমালোচকদের সাথে সমালোচনা করতাম এবং প্রতিফল দিবসকে অস্বীকার করতাম। ( সুরা মুদ্দাস্সির-৩৯-৪৬) একইভাবে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আল কুরআনের সুরায়ে আল ফজর, আল হাক্কাহ, যারিয়াত ও ইসরায় এতিম-অসহায়দের প্রতি সদয় হওয়ার উপদেশ দিয়েছেন। আর এদের প্রতি নিষ্ঠুর আচরণে কঠোর শাস্তির কথা উল্লেখ করেছেন।
নিজে পেট পুরে খেয়ে পাড়া-প্রতিবেশী দরিদ্রের কোন খোঁজ খবর না নিলে তাকে শেষ বিচারের দিন কঠিন প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে। বিশ্ব বরেণ্য ইসলামী চিন্তাবিদ আল্লামা ইউসুফ আল কারজাভী তার যুগশ্রেষ্ঠ গ্রন্থ ‘ইসলামের যাকাত বিধান’ বইয়ে একটি হাদিস উল্লেখ করেন,“ হযরত আবু দারদা তার স্ত্রীকে বলেছিলেন, হে উম্মে দারদা, আল্লাহর একটা শিকল রয়েছে, যা সব সময় -যে সময় জাহান্নাম সৃষ্টি হয়েছে সে সময় থেকেই জাহান্নামের আগুনে উত্তপ্ত করা হচ্ছে, তা সেদিন পর্যন্ত রাখা হবে যেদিন তা লোকদের গলায় পরানো হবে। আল্লাহর প্রতি ঈমান আনার কারণে তার অর্ধেক থেকে তো তিনি আমাদের নাজাত দিয়েছেন। (এক্ষণে বাকি অর্ধেক থেকে মুক্তির জন্য) হে উম্মে দারদা, মিসকিনকে খাবার দেয়ার জন্য উৎসাহিত করতে থাক।”
আমাদের সমাজে দেখা যায়, অনেকে দান-ছাদাকা করতে চায় না, ধনীরা আরো ধনী হওয়ার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত থাকে। তাদের সম্পর্কে মহানবী বলেছেন,“ মানুষ বলে আমার সম্পদ, আমার সম্পদ অথচ তিনটি ক্ষেত্রে ব্যবহৃত সম্পদই শুধু তার। যা সে খেয়ে শেষ করেছে, যা পরিধান করে নষ্ট করেছে এবং যা দান করে জমা করেছে- তাই শুধু তার। আর অবশিষ্ট সম্পদ সে ছেড়ে যাবে এবং মানুষ তা নিয়ে যাবে”। (মুসলিম শরীফ)
উপরোক্ত আয়াতে কারীমা ও হাদিস শরীফের বক্তব্য দ্বারা সুস্পষ্টভাবে বুঝা যায়, দীন হীন নিঃস্ব মানুষের অন্ন-বস্ত্র বাসস্থানের যোগান দানে আমাদের সবাইকে উদারহস্তে এগিয়ে আসতে হবে। নচেৎ, আল্লাহ পাকের শাস্তি অবধারিত। শেষ করছি জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের দু‘ ছত্র কবিতা দিয়ে-“মৃত্যুর আর দেরী নেই তব-ফিরে চাও ফিরে চাও/পরম ভিক্ষু মোর আল্লাহর নামে/দরিদ্র-উপবাসীদের ভিক্ষা দাও!

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট