চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

মানবতার জয় মক্কা বিজয়

৩০ মে, ২০১৯ | ৩:১১ পূর্বাহ্ণ

মহানবী (সা.) মক্কা থেকে হিজরত করে মদিনায় আগমনের পর মদিনায় স্থিতিশীল সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। দ্বিতীয় হিজরিতে কুরাইশরা মদিনা আক্রমণ করলে বদরের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এতে তারা চরমভাবে পরাজিত হলেও অধর্মের পক্ষে যুদ্ধ করতে তারা প্রায় ৫০০ কিলোমিটার দূরে এসে পুনরায় মদিনা আক্রমণ করে। ফলে পঞ্চম হিজরি সনের ১৫ শাওয়াল শনিবার উহুদের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। ষষ্ঠ হিজরি জিলকদ মাসে নবীজি (সা.) ওমরাহর উদ্দেশ্যে মক্কা যাত্রা করলেন। কুরাইশরা বাধা দিলে হযরত (সা.) হুদায়বিয়া নামক জায়গায় অবস্থান করেন। এখানেই সম্পাদিত হয় ইতিহাসে ‘হুদায়বিয়ার সন্ধি’ নামে বিখ্যাত বিশ্বের প্রথম লিখিত সন্ধি চুক্তি। হুদায়বিয়ার সন্ধি অনুযায়ী মক্কার ‘বনু খোজা’ সম্প্রদায় হযরত
মুহাম্মদ (সা.)-এর সঙ্গে এবং ‘বনু বকর’ সম্প্রদায় কুরাইশদের সঙ্গে মৈত্রী চুক্তি করে। এ দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে পূর্বশত্রুতা ছিল। কুরাইশদের প্ররোচনায় বনু বকর গোত্রের আবাসভূমি ‘ওয়াতির’-এর নিভৃত পল্লিতে রাতের অন্ধকারে অতর্কিত হামলা করে অসহায় নারী, শিশুসহ নির্বিচারে হত্যা ও লুণ্ঠন করে। প্রাণভয়ে কাবায় আশ্রয় নেওয়া নিরীহ মানুষকেও তারা হত্যা করে। এ ঘটনার প্রতিকারের জন্য খোজা সম্প্রদায় মদিনার মিত্র মুসলমানদের সহযোগিতা চায়।
বিশ্বনবী অষ্টম হিজরিতে বিশ্ব মানবতার কেন্দ্রভূমি মক্কা পঙ্কিলতামুক্ত করার জন্য নীরব আয়োজন করলেন। হযরত মুহাম্মদ (সা.) ১০ রমজান ১০ হাজার সাহাবিসহ মদিনা থেকে মক্কার উদ্দেশ্যে যাত্রা করলেন। মক্কার উপকণ্ঠে এসে ‘মারাউজ জাহরান’ নামের গিরি উপত্যকায় তাঁবু স্থাপন করলেন। ১৯ রমজান রাতে আবু সুফিয়ান হাকিম ইবনে নিজাম ও বুদাইল অনুসন্ধানে বের হলে হযরত উমর (রা.)-এর নেতৃত্বে টহলরত ছদ্মবেশী গেরিলা সাহাবি দল তাদের বন্দী করে নবীজি (সা.) কাছে নিয়ে আসেন। দীর্ঘ ২১ বছরের নিষ্ঠুরতার পুরোহিত আবু সুফিয়ানকে রহমতের নবী (সা.) প্রেম-ভালোবাসার দীক্ষা দিলেন, পাষাণ হৃদয় দয়ার সাগরে স্নাত হলো; তিনি ইমান আনলেন।
প্রিয় নবী (সা.) মক্কা জয়ের আগেই মক্কাবাসীর মন জয় করাকে বড় বিজয় মনে করলেন। এ সময় নবীজির চাচা হযরত আব্বাস; যিনি কৌশলগত কারণে মক্কাবাসীর কাছে তাঁর ইসলাম গ্রহণ গোপন রেখেছিলেন তিনিও তা প্রকাশ করলেন। এ উভয় কুরাইশ নেতাকে নবীজি (সা.) শান্তির পয়গাম ঘোষণার জন্য প্রভাতে মক্কায় পাঠালেন এবং ঘোষণা দিতে বললেন: ‘যারা কাবা গৃহে আশ্রয় নেবে, তারা নিরাপদ, যারা যারা আবু সুফিয়ানের বাড়িতে আশ্রয় নেবে বা তার নাম বলবে, তারা নিরাপদ, যারা নিজ নিজ ঘরে অবস্থান করবে, তারাও নিরাপদ।’
১৯ রমজান সকালে নবীজি (সা.) সাহাবায়ে কিরামের বিভিন্ন দলকে মক্কার বিভিন্ন দিক থেকে প্রবেশের নির্দেশ দিলেন এবং বললেন: ‘কাউকে আক্রমণ করবে না।’ ইতিপূর্বে ‘মুতা’ অভিযানেরও তিনি নির্দেশ দিয়েছিলেন: ‘কোনো সাধু-সন্ন্যাসীকে হত্যা করবে না; বালক, বালিকা ও শিশুদের হত্যা করবে না; নারীদের হত্যা করবে না; বৃক্ষ নিধন করবে না; শস্যখেত ধ্বংস করবে না; ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ করবে না এবং আত্মসমর্পণকারীকে আঘাত করবে না।’
মহানবী (সা.) ক্রীতদাস উসামা ইবনে জায়েদের সঙ্গে উটে চড়ে অবনত মস্তকে সবার শেষে মক্কায় প্রবেশ করলেন। হযরত (সা.) মক্কাবাসীকে নিয়ে একটি সভা করলেন। তিনি ভাষণে সাম্য, মৈত্রী ও একতার কথা বললেন: ‘হে কুরাইশগণ! অতীত সব ভ্রান্তধারণা মন থেকে মুছে ফেল, কৌলীন্যের গর্ব ভুলে যাও, সকলে এক হও। সকল মানুষ সমান- এ কথা বিশ্বাস করো।’

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট