চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

রোজাদারকে তাওবার মাধ্যমে গুনাহ হতে মাফ চাইতে হবে

রায়হান আজাদ

২৮ মে, ২০১৯ | ১:৪৬ পূর্বাহ্ণ

তাওবাহ অর্থ প্রত্যাবর্তন করা, ফিরে আসা। ইসলামের পরিভাষায় তাওবাহ হচ্ছে বান্দার কৃত অপরাধের কথা স্মরণ করে আল্লাহর কাছে ইসতিগফার কামনা করত সত্য-সঠিক পথে ফিরে আসা। গুনাহ মাফ করতে পারা রমজানুল মোবারকের বড় সাফল্য। কবীরা গুনাহ তথা বড় বড় গুনাহ থেকে মাফ পেতে হলে অবশ্যই তাওবা করতে হবে। হাদীসে উল্লেখ রয়েছে, শিরক তথা আল্লাহর সাথে যেকোন কিছুকে যে কোনভাবে অংশীদার মনে করা, ধর্ষণ-ব্যভিচার, হত্যা-অপহরণ, সুদ-ঘুষ-দুর্নীতি, চুরি-ডাকাতি, রাহাজানি, মিথ্যা বলা, মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া, যাদু-টোনা, মদ-জুয়া, সতী নারীর চরিত্রে অপবাদ লেপন প্রভৃতি কবীরা গুনাহ। এ গুনাহ তাওবা ছাড়া মাফ হবে না। তাওবা মানে ফিরে আসা। ইসলামের পরিভাষায়, তাওবা হচ্ছে কৃত অপরাধের জন্য অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহ ও তার রাসুলের বিধানের দিকে ফিরে আসা। তাওবার গুরুত্ব সম্পর্কে আল্লাহ পাক বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা সবাই তাওবা করে আল্লাহর দিকে ফিরে এস, যাতে তোমরা সফল হতে পার। ( সুরা আন নুর-৩১) অন্য জায়গায় ইরশাদ হয়েছে, ‘অতএব তারা কি আল্লাহর দিকে তাওবা করে ফিরে আসবে না? তারা তাদের গুনাহ মাফের জন্য ক্ষমা চাইবে না? অথচ আল্লাহ পরওয়াদেগার তো ক্ষমাশীল ও মেহেরবান’। (সুরা মায়েদা-৭৪) তাওবাহ সম্পর্কে হাদীসে এসেছে: মু’মিন ব্যক্তি নিজের পাপরাশিকে মনে করে যেন সে কোন পতনোম্মুখ পাহাড়ের তলদেশে বসে আছে, যা সহসা তার উপর ভেঙ্গে পড়বে। আর পাপিষ্ঠ তার গুনাসমূহকে মনে করে নাকের উপর পতিত হওয়া একটা মাছির মত (অত্যন্ত মামুলি ব্যাপার)। যা হাত দিয়েই তাড়িয়ে দেয়া যায় (মিশকাত)।
হাদীসে কুদসীতে এসেছে, ‘তোমাদের কেউ কোন নির্জন ভূমিতে তার হারানো ঘোড়া খুঁজে পেলে যতোটা খুশি হয়, বান্দা তাওবা করলে আল্লাহ তার চাইতে অনেক বেশি খুশি হন। সে আমার দিকে এক বিঘত এগিয়ে এলে আমি তার দিকে এক বাহু এগিয়ে যাই, সে আমার দিকে এক বাহু এগিয়ে এলে আমি তার দিকে দু’বাহু এগিয়ে যাই, সে আমার দিকে হেঁটে এলে আমি তার দিকে দৌড়ে যাই’।
তাওবা করার নিয়ম হচ্ছে, পাক-পবিত্রতা হাসিল করে বান্দাকে একাগ্রচিত্তে আল্লাহর দরবারে নিজের কৃত অপরাধ উপলদ্ধি ও স্বীকার করতে হবে। অপরাধের জন্য লজ্জিত ও অনুতপ্ত হয়ে জাহান্নামের শাস্তির ভয়ে অশ্রুপাত করতে হবে। বিনয়-নম্রতা সহকারে খালিছ মনে ক্ষমা প্রার্থনা করত: ভবিষ্যতে এ অপরাধ আর না করার প্রতিশ্রুতি দিতে হবে। তাওবার জন্য কিছু কাফ্ফারা-নফল নামাজ, নফল রোজা ও দান-সাদকা করতে পারলে ভাল হয়। মাহে রমজানের বাকী দিনগুলোতে আমরা যদি ইখলাছের সাথে তাওবা করি, তাহলে আশা করা যায়, আল্লাহ আমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করে দেবেন। তিনিই তো গুনাহগার বান্দাদের আশাবাদী করে বলেছেন, ‘যারা তাওবা করে ও নিজেদের কর্মনীতি সংশোধন করে নেয় এবং যা গোপন করেছিল তা প্রকাশ করে তাদেরকে আমি মাফ করে দেব। প্রকৃতপক্ষে আমি তাওবা গ্রহণকারী ও দয়ালু’। (সুরাতুল বাকারা-১৬০) হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (স.) বলেন, ‘গুনাহ থেকে খাঁটি তাওবাহকারী যেন নিষ্পাপ ব্যক্তির মত’ (ইবনে মাজাহ)।
এ কথা আমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে বান্দাহর হক যতক্ষণ পর্যন্ত বান্দা মাফ করে দেবেন না ততক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহ পাকও তা মাফ করবেন না। তাই যার হক নষ্ট করা হয়েছে তার সাথে যত দ্রুত সম্ভব মামলা খতম করে নিতে হবে। হে আল্লাহ পরওয়ারদেগার! আমাদেরকে যাবতীয় কবীরা গুনাহ থেকে খালিছ নিয়তে তাওবা করে পাপামুক্ত হওয়ার তৌফিক দান করুন।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট