চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

আজ ঐতিহাসিক বদর দিবস

কাফির-মুসলমানের মাঝে ১ম যুদ্ধ সংঘটিত হয়

রায়হান আজাদ

২৩ মে, ২০১৯ | ১:৩৫ পূর্বাহ্ণ

আজ ১৭ রমজান। ঐতিহাসিক বদর দিবস। ৬২৪ সালে ২য় হিজরির এই দিনে মদিনা মুনাওয়ারাহ হতে ৮০ মাইল দক্ষিণ-পশ্চিমে বিখ্যাত বদর উপত্যকায় রাসুলে আকরাম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সেনাপতিত্বে মুসলিম বাহিনী আর আবু জেহেলের নেতৃত্বে কাফির বাহিনীর মধ্যে প্রথম সম্মুখ সমর সংগঠিত হয়। এটি ছিল সত্য ও মিথ্যার মাঝে চরম অগ্নিপরীক্ষা। আল্লাহর আদেশেই নবী করীম (স.) এ যুদ্ধে অগ্রসর হন। আল কুরআনের নির্দেশ, আল্লাহর পথে তাদের সাথে যুদ্ধ করো যারা তোমার সাথে যুদ্ধ করে। তবে সীমা লঙ্ঘন করো না। কারণ আল্লাহ সীমা লঙ্ঘনকারীদের পছন্দ করেন না।” এ যুদ্ধে রাসুল (স.)’র পক্ষে মদীনার আনসার ও মক্কার মুহাজিরদের ৩১৩ জন বীর মুজাহিদ মক্কার ১০০০ কুরাইশ সৈন্যের বিরুদ্ধে মরণপণ লড়াই করেন। কাফির বাহিনীর হাতে ১০০ অশ্বারোহী ও ৭০০ অষ্ট্রারোহী এবং পর্যাপ্ত রসদপত্র থাকলেও মুসলিম বাহিনীতে মাত্র ২ জন অশ্বারোহী আর বাহন পাওয়া গেল ৭০টি উট। কোন ধরনের উন্নত অস্ত্রশস্ত্র নেই বললেই চলে। কাফির ও মুসলিম বাহিনীতে এ অসম যুদ্ধে ইসলামের শত্রু কাফির সম্প্রদায়ের শোচনীয় পরাজয় ঘটে। যুদ্ধে আবু জেহেল, উতবা, শায়বা, ওয়ালিদসহ বাঘা বাঘা কাফির সরদাররা নিহত হয়। ৭০ জন কুরাইশ সৈন্য মারা যায় এবং তাদের আরো ৭০ জন বন্দি হয়। আবু জেহেলের পতন হলে মহানবী বলেন, আবু জেহেল ছিল এ উম্মতের ফেরাউন। বদর যুদ্ধে মুসলমানদের পক্ষে মুহাজিরদের ৬ জন এবং আনসারদের ৮ জন সর্বমোট ১৪ জন সাহাবী শাহাদাত বরণ করেন; কেউ বন্দি হননি। কাফিরদের মধ্যে যারা বন্দি হয়েছিল তাদের সাথে মহানবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে উদার ও আন্তরিক ব্যবহার করেন তা ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লিপিবদ্ধ রয়েছে। মুসলিমরা নিজেরা খেজুর খেয়ে বন্দিদের রুটি খেতে দিয়েছিলেন। মহানবী চার হাজার দিরহাম মুক্তিপণের বিনিময়ে তাদের ছেড়ে দেন আর যারা তা দিতে সক্ষম হয়নি তাদেরকে ভবিষ্যতে মুসলমানদের বিরোধিতা না করার প্রতিশ্রুতি ও মুসলিম বালক-বালিকাদের শিক্ষা দানের শর্তে মুক্তি দেন।
বদরের যুদ্ধে আল্লাহর অঙ্গীকার মোতাবেক তাঁর পেয়ারা নবীজী ও মুমিনদের সুসজ্জিত একদল ফেরেশতা পাঠিয়ে সাহায্য করেন। এ প্রসঙ্গে আল কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ তা‘আলা বদর (যুদ্ধ)’র ক্ষেত্রে এমন অবস্থায় তোমাদের সাহায্য করেছিলেন, যখন তোমরা সম্পূর্ণ সহায়-সম্বলহীন ছিলে। সুতরাং তোমরা (অন্তরে) কেবল আল্লাহর ভয়কে জায়গা দিও যাতে তোমরা কৃতজ্ঞ হতে পারো। (সূরা আল ইমরান: আয়াত ১২৩)। এ যুদ্ধে বিজয়ের ফলে ইসলাম একটি অকুতোভয়, আদর্শিক ও সামরিক শক্তি হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। শুধু আরবেই নয়, অনারব অঞ্চলেও মহানবী ও ইসলামের সার্বজনীনতা ছড়িয়ে পড়ে। যুদ্ধ শেষে মহানবীর অভিব্যক্তি প্রকাশিত হয় এভাবে, “সকল প্রশংসা সেই আল্লাহর যিনি তাঁর ওয়াদা পূরণ করেছেন, আপন বান্দাকে সাহায্য করেছেন এবং একাই সকল দল ও গোষ্ঠীকে পরাভূত করেছেন”।
ঐতিহাসিক হিট্টির মতে, “এ সশস্ত্র সম্মুখ যুদ্ধে মুসলমানগণ যে নিয়মানুবর্তিতা ও মৃত্যুর প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শনের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন এতে ইসলামের পরবর্তী বিজয়ের বিশেষ লক্ষণ পরিস্ফুটিত হয়। বদর যুদ্ধে মুসলিম বিজয় ইসলামী প্রজাতন্ত্রের সূচনা করে এবং পরবর্তী একশ বছরের মধ্যে (৬২৪-৭২৪) ইসলাম পশ্চিম আফ্রিকা থেকে পূর্ব ভারতবর্ষ ও মধ্য এশিয়া পর্যন্ত বিস্তৃতি লাভ করে।
আসুন, ঐতিহাসিক বদরের শিক্ষায় উজ্জীবিত হয়ে আমরা অসত্য-অবিচার, জুলম-নির্যাতন এবং তাবৎ ধর্মদ্রোহিতা-পৌত্তলিকতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হই।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট